অধিনায়ক হিসেবে ক্যারিয়ারে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষায় বিরাট কোহলি। উড়ন্ত ফর্ম নিয়েই এবারের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আসরে পা রাখে শিরোপাধারী ভারত। আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ব্যাটে-বলে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের সামর্থ্য জাহির করে কোহলি বাহিনী। তবে দ্বিতীয় ম্যাচেই চিত্রপটে পরিবর্তন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হচ্ছে ভারত। আর ম্যাচটি দু’দলের কাছে কোয়ার্টার ফাইনালের মতো। হার মানে পত্রপাঠ বিদায়। এ ম্যাচের বিজয়ী দল পৌঁছে যাবে সেমিফাাইনালে। প্রোটিয়া অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্সের জন্যও বড় পরীক্ষা এটি। ম্যাচে চাপের মুখে ভেঙে পড়ার অতীত ঘটনা নিয়ে ‘চোকার’ বদনামটা দক্ষিণ আফ্রিকার। আর চাপের মুখে দৃঢ়তা দেখিয়ে ‘আয়রনি’ খেতাব ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির। তবে চলতি আসরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে ভিন্ন চেহারায় দেখা গেছে কোহলিকে। ৩২১ রানের বিশাল পুঁজি নিয়েও অভিজ্ঞতায় যোজন যোজন দূরত্বের দল শ্রীলঙ্কার কাছে নাস্তানাবুদ হয় ভারত । ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৭ উইকেটে জয় কুড়ায় শ্রীলঙ্কা। ওই ম্যাচে আদতে ভারতীয় বোলাররা উইকেট সাফল্য দেখেন একবারই মাত্র। ম্যাচে শ্রীলঙ্কার দাপুটে দুই ব্যাটসম্যান দানুসকা গুণাতিলাকা ও কুশল মেন্ডিস নিজেদের উইকেট খোয়ান রানআউটে। গত আসরের ফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপার গৌরব কুড়ায় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত। গত বছর অধিনায়কত্ব ছাড়েন ধোনি। আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল দক্ষিণ আফ্রিকার এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি মিশন শুরু করে শ্রীলঙ্কাকে ৯৬ রানে হারিয়ে। তবে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে মলিন হার দেখে প্রোটিয়ারা। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে গিয়ে ২১৯ রানে থামে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। আসরে ভারতের শুরুর দুই ম্যাচে একাদশে দেখা যায়নি অফস্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে। দক্ষিণ আফ্রিকা দলে রয়েছেন দক্ষ বাঁ-হাতি তিন ব্যাটসম্যান
কুইন্টন ডি কক, জেপি ডুমিনি ও ডেভিড মিলার। এই ম্যাচে অশ্বিনকে হয়তো একাদশে রাখবে ভারতের থিঙ্কট্যাংক। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে একাদশে সুযোগ নেন বাঁ-হাতি স্পিনার রবীচন্দ্রন অশ্বিন। তবে নিজের সেরা অস্ত্র অফব্রেক ডেলিভারি ছাড়াও প্রকৃতিদত্ত ভিন্নতা (ভেরিয়েশন) রয়েছে অশ্বিনের বলে। উড়ন্ত ফর্মের চার পেসার নিয়েই আসরে নিজেদের শুরুর দুই ম্যাচে একাদশ সাজায় ভারত। ভুবনেশ্বর কুমার, উমেশ যাদব, জসপ্রিত বুমরাহ ও পেস-অলরাউন্ডার হারদিক পান্ডিয়া বল হাতে নৈপুণ্য দেখান পাকিস্তানের বিপক্ষে হাই ভোল্টেজ ম্যাচে। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভারতীয় বোলিং আক্রমণটা ছিল নখদন্তহীন।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে অবশ্য দুই স্পিনার নিয়ে খেলতে পারে ভারত। অশ্বিনের সঙ্গে দলে থাকতে পারেন জাদেজাও। স্পিন বোলিংয়ের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্বলতাটা পুরনো। আর ভারত দলে সবচেয়ে দক্ষ ফিল্ডারের নামটি জাদেজা। প্রতিপক্ষ দলের ১৫ রান কমিয়ে দিতে পারেন তিনি পয়েন্টে ক্ষিপ্র ফিল্ডিংয়ে । অলরাউন্ডার হারদিক পান্ডিয়ার ব্যাটিং সামর্থ্যটা স্পষ্ট। ডেথ ওভারে খুবই কার্যকরী জসপ্রিত বুমরাহ। এক্ষেত্রে ভারত একাদশের বাইরে যেতে পারেন ভুবনেশ্বর কুমার, উমেশ যাদবের একজন। দ্বিতীয় পাওয়ার প্লের ১১-৪০ ওভারে শ্রীলঙ্কার স্কোর বোর্ডে জমা পড়ে ২০০ রান। ইনিংসের দ্বিতীয় পাওয়ার প্লেতে অশ্বিনের মতো মিতব্যয়ী একজন বোলারের অভাবটা হাড়েহাড়ে টের পেয়েছেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। এতে ৩২২ রানের বিশাল টার্গেট হেসেখেলেই টপকে যায় লঙ্কানরা। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচেও ৩১৯ রানের বিশাল সংগ্রহ ছিল ভারতের। ওই ম্যাচে বৃষ্টি আইনে ১২৪ রানের জয় কুড়ায় ভারতই। ব্যাট হাতে দারুণ ফর্মে রয়েছেন দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। আসরে তারা গড়েন টানা দুই ম্যাচে শতরানের জুটি (১৩৬ ও ১৩৮)। নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি হাঁকান প্রোটিয়া ওপেনার হাশিম আমলা। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে অল্পতেই সাজঘরে ফেরেন দুই ওপেনার আমলা ও কুইন্টন ডি কক। দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ব্যাটিং কোচ ও সাবেক প্রোটিয়া ক্রিকেটার নেইল ম্যাকেঞ্জি বলেন, ওপেনারদের ফর্মটা সবসময়ই ইস্যু। এমন কন্ডিশনে উইকেট ধরে খেলতে হয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে ৮.৩ ওভারের স্পেলে ২৭ রানে চার উইকেট নেন দক্ষিণ আফ্রিকার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত লেগ স্পিনার ইমরান তাহির। সর্বশেষ ভারতীয় প্রিমিয়ার লীগেও (আইপিএল) বল হাতে নৈপুণ্য দেখান তিনি। আসরে ১৮ উইকেট নেন ইমরান তাহির। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ হারলেও বল হাতে নৈপুণ্য দেখান মরনে মরকেল। ৭ ওভারের স্পেলে মাত্র ১৮ রানে তিন উইকেট নেন এ অভিজ্ঞ প্রোটিয়া পেসার। ওয়ানডেতে মুখোমুখি সাক্ষাতে পাল্লা ভারি দক্ষিণ আফ্রিকার। ৭৬ সাক্ষাতে ৪৫ হারের বিপরীতে ভারত জয় দেখেছে ২৮ বার। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে দাপুটে পরিসংখ্যান ভারতের। আসরে তিন সাক্ষাতে তিনবারই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ভারতীয়রা।