রমজান মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এবার চিনি, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল, ছোলা এবং খেজুর রাজধানীসহ সারা দেশের খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। নিজস্ব ২ হাজার ৮১১ জন পরিবেশকের মাধ্যমে এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় এতই কম পণ্য যে লাইন শেষ না হতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে টিসিবির পণ্য। কোনো কোনো স্থানে চাহিদা অনুযায়ী নিম্ন আয়ের মানুষদের পণ্য দিতে ব্যর্থ হচ্ছে টিসিবির ট্রাক। এ ছাড়া দুপুরের পর কোথাও টিসিবির গাড়ির দেখা মেলে না। চাহিদার শীর্ষে রয়েছে চিনি, ছোলা ও সয়াবিন তেল। রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে এ দৃশ্য চোখে পড়েছে।
টিসিবির ট্রাকের বিক্রেতারা বলছেন, টিসিবি থেকে পণ্যের সরবরাহ না বাড়ালে তাদের কিছুই করার নেই। যতক্ষণ পণ্য থাকে ততক্ষণ বিক্রি করি। টিসিবির পণ্যের মান তুলনামূলক ভালো হওয়ায় ও দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় মানুষের চাহিদা রয়েছে। দেখা গেছে, বিক্রি শুরু হওয়ার মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে এসব পণ্য। ফলে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও সাশ্রয়ী মূল্যে এসব পণ্য কিনতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। ক্রেতারা বলেন, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর পর যখন চাহিদা মতো পণ্য পাওয়া যায় না তখন বিষয়টি হতাশার। চাহিদামতো পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর দাবি জানান তারা।
এদিকে রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, কাওরান বাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে, দুপুরের পর কোথাও টিসিবির কোনো গাড়ির দেখা মিলেনি। আর যেসব স্থানে গাড়ির দেখা মিলছে সেখানে ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক যোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে টিসিবির ট্রাকের বিক্রেতাদের। অথচ গত বছরগুলোতে রমজানকে সামনে রেখে অনেক আগ থেকেই ক্রেতাদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে ট্রাকগুলো বিভিন্ন স্থানে ক্রেতাদের সুবিধা দিয়ে গেছেন। কিন্তু এ বছরের চিত্রটা আলাদা।
রমজান উপলক্ষে টিসিবি সারা দেশে ন্যায্যমূল্যে প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা, মসুর ডাল ৮০ টাকা ও সয়াবিন তেল প্রতিলিটার ৮৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। একজন ভোক্তাকে সর্বোচ্চ ৪ কেজি চিনি, ৩ কেজি মসুর ডাল, ৫ লিটার সয়াবিন তেল এবং ৫ কেজি ছোলা দেয়ার কথা থাকলেও তা কমবেশি করে দেয়া হচ্ছে। পর্যোলোচনা করে দেখা যায়, বাজার মূল্য থেকে টিসিবি চিনিতে ১৫ টাকা কম নিচ্ছে, ছোলায় ২০ টাকা, মসুর ডালে ১০ টাকা ও সয়াবিন তেলে প্রতিলিটারে ২০ টাকা কম নিচ্ছে। টিসিবি ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
পলাশী মোড়ে টিসিবির ট্রাকের পণ্য দুপুরের মধ্যেই চিনি, ছোলা ও সয়াবি তেল শেষ হয়ে যায়। শুধু পলাশী মোড়ে এলাকায় নয়, রাজধানীর অধিকাংশ পয়েন্টে দুপুরের মধ্যেই চিনি, ছোলা ও সয়াবিন তেল শেষ হয়ে যায়। অথচ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পণ্য বিক্রি হওয়ার কথা। অনেকে চিনি, ছোলা ও সয়াবিন তেল না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান। বিক্রেতারা তাদের পরের দিন সকাল ১০ টার মধ্যে আসার পরামর্শ দেন। পণ্য কিনতে আসা ক্রেতা হাসান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাত্র কয়েক দিন হলো টিসিবি পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। এখনই চাহিদামতো পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। সচিবালয় এলাকায় টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ইকবাল বলেন, কাজ বাদ দিয়ে কি প্রতিদিন লাইনে দাঁড়ানো সম্ভব।
টিসিবির পণ্য বিক্রেতারা জানান, ক্রেতাদের চাহিদার কারণে বেশির ভাগ পণ্যই দুপুরের আগেই শেষ হয়ে যায়। দৈনিক ট্রাক প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি চিনি, আড়াই শ থেকে তিন শ কেজি মসুর ডাল, তিন শ থেকে চার শ লিটার সয়াবিন তেল এবং তিন শ থেকে চার শ কেজি ছোলা বরাদ্দ বলে তিনি জানান। ঊর্ধ্বমুখী দ্রব্যমূল্যের বাজারে টিসিবির এই কার্যক্রম, নিত্যপণ্যের চাহিদা মেটাতে সহায়ক, তবে পণ্যের সরবরাহ আরো বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন ভোক্তারা।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবীর জানান, চাহিদা পূরণের মতো পণ্যের মজুদ রয়েছে। যে মজুদ রয়েছে তাতে পুরো রমজান মাস সরবরাহ করা যাবে। তিনি জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি দেয়া হয়েছে। মাঝ রোজায় তৃতীয় কিস্তি দেয়া হবে। তাছাড়া ঈদের আগেও আরেক কিস্তি পণ্য দেয়া হবে ডিলারদের। তাই সমস্যা হওয়ার কথা না।