সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুর, পিরোজপুর, মাদারীপুর, পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আজ রোববার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হচ্ছে।
আজ রাতে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে কাল সোমবার দেশে ঈদ উদ্যাপিত হবে। তবে সৌদি আরবে গতকাল শনিবার চাঁদ দেখা গেছে। তাই আজ সেখানে ঈদ হচ্ছে। সৌদি আরব ছাড়াও মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ঈদ হচ্ছে। তাদের সঙ্গে মিল রেখেই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ঈদ উদ্যাপিত হচ্ছে।
আমাদের প্রতিনিধিদের খবর:
চাঁদপুর: পাঁচটি উপজেলার ৪০টি গ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্যাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদকে ঘিরে লোকজনের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। গ্রামগুলো হচ্ছে হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলিপুর, বলাখাল, মনিহার, বেলাঁচা, ঝাকনি, সেনাগাঁও, প্রতাপপুর, দক্ষিণ বলাখাল ও বাসারা। ফরিদগঞ্জ উপজেলার উভারামপুর, উটতলী, মুন্সীরহাট, মূলপাড়া, বদরপুর, আইটপাড়া, সুরঙ্গচাইল, বালিথুবা, কাইতাড়া, নুরপুর, সাচনমেঘ, ষোল্লা, হাঁসা, গোবিন্দপুর, চরদুখিয়া, মতলবের দশানী, মোহনপুর, পাঁচানী এবং শাহরাস্তি ও কচুয়া উপজেলার কয়েকটি গ্রাম। হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা গ্রামের পীর আবদুল হাই জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে এসব গ্রামের বেশির ভাগ মুসলমান এক দিন আগে রোজা পালন শুরু করেন। আজ তাঁদের গ্রামে সকাল নয়টায় প্রথম ঈদের জামাত হয়।
পিরোজপুর: মঠবাড়িয়া ও নাজিরপুর উপজেলার আটটি গ্রামের ৬০০টি পরিবার আজ ঈদ উদ্যাপন করছে। মঠবাড়িয়ার সাপলেজা ইউনিয়নের ছয় গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার ঈদ করছে। সকাল ১০টায় সাপলেজা ইউনিয়নের ভাইজোড়া গ্রামের খোন্দকারবাড়ি ও সাড়ে নয়টায় কচুবাড়িয়া গ্রামের হাজী ওয়াহেদ আলী হাওলাদারবাড়িতে ঈদের দুটি জামাত হয়। এতে ইমামতি করেন যথাক্রমে মুন্সী শাহ আলম ও মৌলভি হায়দার আলী।
সুরেশ্বর পীরের অনুসারী কচুবাড়িয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ২৭ মে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রেখেছি এবং আজ সৌদি আরবের সঙ্গেই ঈদ উদ্যাপন করছি।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরের নাড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর গ্রামের মরহুম হজরত মাওলানা জান শরীফ ওরফে শাহে আহম্মদ আলীর অনুসারী উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের পূর্ব সাপলেজা, ভাইজোড়া, কচুবাড়িয়া, খেতাছিড়া, বাদুরতলী ও চড়কগাছিয়া গ্রামের কয়েক শ পরিবার ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে সংগতি রেখে রোজা রাখা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদ্যাপন করে আসছে।
মাদারীপুর: মাদারীপুরের চারটি উপজেলার ২৫ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ আজ ঈদ উদ্যাপন করছেন। জেলার বেশ কয়েকটি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলেও প্রধান ও বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে সদর উপজেলার তাল্লুক গ্রামের চরকালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। সকাল নয়টায় এই ঈদ জামাতে ইমামতি করেন আবদুল হাশেম ফকির।
সুরেশ্বর দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা হজরত জান শরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী (রা.)-এর অনুসারীরা বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করছেন। সুরেশ্বর দায়রা শরিফের প্রধান গদিনশিন পীর খাজা শাহ্ সুফি সৈয়্যেদ নূরে আক্তার হোসাইন বলেন, মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা, মহিষেরচর, চরকালিকাপুর, তাল্লুক, চরগোবিন্দপুর, ছিলারচর, কুনিয়া, কালকিনির সাহেবরামপুর, আন্ডারচর, আলীনগর, বাঁশগাড়ী, খাসেরহাট, ক্রোকিরচর, সিডিখান, কয়ারিয়া, রমজানপুর, শিবচরের কেরানীবাট, পাঁচ্চর এবং রাজৈরের আমগ্রামের প্রায় ৩০ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ঈদ উদ্যাপন করেছেন।
তাল্লুক গ্রামে ঈদের জামাত শেষে ইমাম আবদুল হাশেম ফকির বলেন, দেশ ও জাতির কল্যাণে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একযোগে ঈদের নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।
পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর ২২টি গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার আজ রোববার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করছে। সকাল নয়টায় পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর গ্রামের বদরপুর দরবার শরিফ প্রাঙ্গণের বদরপুর দরবার শরিফ জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত হয়। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকে নতুন জামাকাপড় পরে শিশু-কিশোরসহ সবাই ঈদের নামাজ আদায় করতে মসজিদে সমবেত হতে থাকে। বদরপুর দরবার শরিফে প্রধান ঈদের জামাতে ইমামতি করেন চাঁদপুর সাদজা দরবার শরিফের সাহেবজাদা ড. খাজা বাকি বিল্লাহ্ মিশকাত চৌধুরী। নামাজ শেষে দেশ, জাতি এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
বদরপুর দরবার শরিফের পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুস সায়াদাত আখন্দ জানান, এ বছরও জেলার সদর উপজেলার বদরপুর ও ছোট বিঘাই, গলাচিপা উপজেলার সেনের হাওলা, পশুরীবুনিয়া, নিজ হাওলা ও কানকুনিপাড়া, বাউফল উপজেলার মদনপুরা, শাপলাখালী, বগা, ধাউরাভাঙ্গা, সুরদী, সাবুপুরা ও আমিরাবাদ এবং কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া, নিশানবাড়িয়া, মরিচবুনিয়া, উত্তর লালুয়া, মাঝিবাড়ি, টিয়াখালীর ইটবাড়িয়া, পৌরশহরের নাইয়াপট্টি, বাদুরতলী, মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের সাফাখালী গ্রামের পাঁচ হাজারেরও বেশি পরিবার আজ ঈদ উদ্যাপন করছে।
এসব এলাকার মুসল্লিরা পটুয়াখালীর বদরপুর দরবার শরিফের পীর, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পীর এবং চট্টগ্রামের পটিয়ার এলাহাবাদ পীরের অনুসারী। তাঁরা ১৯২৮ সাল থেকে প্রতিবছর আগাম রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদ্যাপন করে আসছেন।
তথ্য সুত্রঃ প্রথম আলো