মো: আকরাম খাঁন: নুষের অন্যতম একটি খারাপ গুণ হলো হিংসা। আর এর সাথে আছে অহংকার। এই দুটি জিনিস মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। ইসলামে হিংসা কিংবা আহংকার পোষনকারীকে খুবই নিকৃষ্ট চোখে দেখা হয়েছে। হিংসা মানুষকে শুধুমাত্র প্রতিপন্নই করে না বরং হিংসুকের জীবন কখনই সুখের হয় না। হিংসা মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। কেননা হিংসুক ব্যক্তি সবসময় সব জিনিসের অধিকারী হতে চায়। তার সর্বদা এই চেষ্টাই থাকে যে, অন্যের কাছে যা আছে তারচে তার জিনিসটা ভালো হওয়া চাই। আর এই হিংসুক ব্যক্তি সমাজের অন্যান্য সন্মানিত ব্যক্তিদের ব্যক্তিত্বকে হেয় করার চেষ্টা করে। কেননা তার দৃষ্টিতে সে একাই সমাজে সন্মানিত ব্যক্তি, বাকিরা সবাই তারচেয়ে নগন্য। এই কারণে বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তির পরিনাম সম্পর্কে আপনারা একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন যে, তারা না আল্লাহতায়ালার দৃষ্টিতে ভালো আর না মানুষের দৃষ্টিতে। হিংসুককে কেউ ভালো দৃষ্টিতে দেখে না। সবার মাঝে তার প্রতি একটা খারাপ ধারনা জন্ম নেয়- তার কর্মকান্ডের কারণে। সমাজের আর অন্য সবার সাথে বসবাস করলেও হিংসুক ব্যক্তি মানুষের মনে কোনো স্থান করে নিতে পারে না। পবিত্র কোরআনে কারিমে হিংসার নিন্দায় বর্ণিত হয়েছে, ‘এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।’-সূরা ফালাক : ৫
পবিত্র কোরআনে ও হাদিস শরীফে হিংসা এবং হিংসুককে কঠিনভাবে নিন্দা করা হয়েছে। এখানে হিংসা সম্পর্কিত কিছু বাণী উল্লেখ্য করা হলো
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেছেন, ‘হিংসা ও বিদ্বেষকারী ব্যক্তি সর্বদা শোকার্ত হয়। কারণ সে অন্যের ভালো কোনো কিছু সহ্য করতে পারে না। তাই মনে কষ্টে নীল হতে থাকে।’ তিনি আরো বলেন, ‘হিংসা ও বিদ্বেষ মানুষের কোনো উপকারে আসে না।’
চিন্তাবিদ আলেমদের অভিমত হলো, হিংসা ও ঈমান একত্রে থাকতে পারে না। কারণ, আগুন যেভাবে কাঠকে জ্বালিয়ে ছাই করে দেয়, তেমনি হিংসাও ঈমানকে ভক্ষণ করে ফেলে। সূতরাং হিংসা থেকে সবাইকে বেঁচে থাকতে হবে।
হিংসা ও অহংকারের কারন সমূহঃ- কারো প্রতি নমনীয় না হওয়ার বা আনুগত্য না করার স্পৃহা:
একজন অহংকারী কখনো চায় না, সে কারো আনুগত্য করুক বা কারো কোনো কথা শুনুক সে চিন্তা করে আমার কথা মানুষ শুনুক। সে চিন্তা করে আমি মানুষকে উপদেশ দেব মানুষ কেন আমাকে উপদেশ দিবে। এভাবে তার দিন অতিবাহিত হয়। যতদিন যায় অহংকারীর অহংকারের স্পৃহা আরো বাড়তে থাকে। এবং তার অহংকার স্পৃহাটি ধীরে ধীরে এমন পর্যায় পৌছে শেষ পর্যন্ত, শেষ পর্যন্ত যে আল্লাহর হাতে আসমান ও জমিনের কতৃত্ব, তার করতে চায় । তার এধরনের স্পৃহার কারনে তার মধ্যে এ অনুভূতি যে, সে কারো প্রতি আনুগত্য করার প্রয়োজন নাই। অহংকারীর এধরনের দাম্ভিকতা থেকে সৃষ্টি হয়, হঠকারিতা ও কুফরি। আল্লাহ তা’আলা বলেন, কখনো নয়, নিশ্চয় মানুষ সীমালঙ্ঘন করে থাকে। কেননা সে মনে করে স্বয়ংসম্পূর্ন। নিশ্চয় তোমার রবের দিকেই প্রত্যাবর্তন। (সুরা আলাক,আয়াত:৬-৮)
আল্লামা বাগাবী রহ. বলেন , মানুষ তখনই সীমালঙ্ঘন এবং তার প্রভুর বিরুদ্ধাচরন করে, যখন দেখতে পায়, সে নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ন । তার কারো প্রতি নত হওয়া বা কারো আনুগত্য করার কোন প্রয়োজন নাই। একজন অহংকারী মনে করে, সে সমাজে তার প্রাধান্য বিস্তার, সবার নিকট প্রসিদ্ধ লাভ ও নেতৃত্ব দেয়ার কোন বিকল্প নাই। তাকে এ লক্ষ্য সফল হতেই হবে। কিন্তু যদি সমাজ তার কর্তৃত্ব বা প্রাধান্য মেনে না নেয়, তখন সে চিন্তা করে, যে তাকে যে কোন উপায়ে তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছতে হবে। চাই তা বড়াই করে হোক অথবা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে হোক । তখন সে যা ইচ্ছা তাই করে এবং সমাজে হট্ট সৃষ্টি করে।
শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.) বলেছেন, ‘একে অপরের সাথে হিংসা করা থেকে বিরত থাকো, কেননা হিংসা হলো কুফরের ভিত্তিস্বরূপ।’
হিংসুকের চিহ্ন ও লক্ষণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, হজরত লোকমান (আ.) স্বীয় পুত্রকে উপদেশ প্রদানকালে বলেন, ‘হিংসুকের তিনটি চিহ্ন রয়েছে- পিছনে গীবতকরা, সামনা সামনি তোষামোদ করা এবং অন্যের বিপদে আনন্দিত হওয়া। অহংকার নিয়ে হাদিসে এরশাদ আছে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রাঃ) বলেন, যার অন্তরে একটি অনু পরিমান অহংকার থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবেনা। রাসুল (সাঃ) এ কথা বললে, এক লোক দাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, কোন কোন লোক এমন আছে, সে সুন্দর কাপড় পরিধান করতে পছন্দ, সুন্দর জুতা ] পরিধান করতে পছন্দ করে, এসবকে কি অহংকার বলা হবে? উত্তরে রাসুল (সাঃ) বলেন আল্লাহ তায়ালা নিজেই সুন্দর, তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। অহংকার হল, সত্যকে গোপন করা এবং মানুষকে নিকৃষ্ট বলে জানা। একজন অহংকারী মনে করে, সে তার সাথী সঙ্গীদের চেয়ে জাতীগত ও সত্তাগত ভাবে বড় এবং সে অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র, তার সাথে কারো তুলনা হয় না। ফলে সে কাউকে কোনো প্রকার তোয়াক্ক করে না, কাউকে মূল্যায়ন করতে চায় না এবং কারো আনুগত্য করার মানসিকতা তার মধ্যে থাকে না। যার ফলে সে সমাজে এমন ভাবে চলাফেরা করে মনে হয় যেন তার মতো এত বড় আর কেউ নাই।
আমরা মানুষ, আমাদের মাঝে মানবীয় দোষ-ত্রুটির অন্যতম হিংসা কোনো না কোনোভাবে জায়গা করে নিতে পারে। এটা বিচিত্র কিছু নয়। তবে আমাদের চেষ্টা করতে হবে, কারো মাঝে এমন ত্রুটি থাকলে থাকলে তা দ্রুত শোধরে নেওয়া, যে সব কারণে এমন বদঅভ্যাস মনে জায়গা করে নিতে পারে, সেসব থেকে দূরে থাকা। আর যদি আমাদের মধ্যে এমন খারাপ গুণ বিদ্যমান না থাকে- তবে বিনম্রচিত্তে আল্লাহতায়ালা দরবারে শুকরিয়া আদায় করা এবং এই দোয়া করা যে, হে আল্লাহ! এমন ধরণের ত্রুটি হতে আমাকে সদা রক্ষা করো।