হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এবার ১৯টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। গতকাল শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আমদানি নিষিদ্ধ এই অস্ত্রগুলো উদ্ধার করেন। এর আগে গত ৯ই জুলাই বিমানবন্দর থেকে ২টি পিস্তল জব্দ করা হয়েছিল। এ নিয়ে শুল্ক গোয়েন্দারা দু’দিনে মোট ২১টি অস্ত্র উদ্ধার করলো।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আটক অস্ত্রের আমদানিকারক মেসার্স ইমরান আর্মস এন্ড কোম্পানি। দুটি চালানে ইতালি থেকে মোট ৫৮টি অস্ত্র নিয়ে আসে এই আমদানিকারক। গত ৩রা জুন আনা এই চালানের বি/ই নং-৫৯২৪০২, সিএন্ডএফ এজেন্ট- মোহাম্মদপুরের এমএম ট্রেডার্স। র?্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও তাদের অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে পরীক্ষা করে দেখা যায়, জব্দকৃত এই ১৯টি অস্ত্র পুরনো ও রিফারবিশড (পুনঃসংস্কৃত)। একই সঙ্গে এসব অস্ত্রের অধিকাংশের বডির বিভিন্ন অংশে খোদাই করা, তাতে মুদ্রিত ইউনিক নম্বর ভিন্ন ভিন্ন। শুল্ক আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা এবং আমদানি নীতি অনুযায়ী পুরনো ও ব্যবহৃত এসব অস্ত্র আমদানি নিষিদ্ধ। গতকাল আটক ১৯টি অস্ত্রের মধ্যে ওয়ালথার পিপি ১৬টি। বাকি ৫টি এইচকেফোর ব্র্যান্ডের। এর আগে শুল্ক গোয়েন্দার একটি তদন্তদল গত ১০ই জুলাই বায়তুল মোকাররমের ইমরান আর্মসের শোরুমে অনুসন্ধান চালায়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি বিদেশ থেকে আমদানি এবং স্থানীয় ক্রয় উভয় প্রকারের আগ্নেয়াস্ত্রই সংগ্রহ ও কেনাবেচা করে থাকে। শোরুমের ইনভেনটরিতে দেখা যায়, আমদানিকৃত শটগান ৫৮ পিস, পিস্তল ১৯ পিস এবং স্থানীয় ক্রয়ের মাধ্যমে সংগৃহীত শটগান ৪৩ পিস, রিভলবার ১০ পিস, রাইফেল ১৪ পিস এবং এয়ারগান ১১ পিসসহ সর্বমোট ১৬১ পিস আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ রয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে তদন্তদলকে ক্রয়-বিক্রয়ের রসিদ দেখাতে পারেনি। এছাড়াও প্রাথমিকভাবে তাদের ভ্যাট ব্যবস্থাপনায় গরমিল পাওয়া গেছে। এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এদিকে এই আমদানিকারকের আমদানি সংক্রান্ত দলিলাদি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানটি গত কয়েক বছরে বিপুল পরিমাণ হালকা ও সহজে বহনযোগ্য আগ্নেয়াস্ত্র আমদানি করেছে। শুল্ক গোয়েন্দা এগুলোও খতিয়ে দেখছে। এ ধরনের পুরনো ও ব্যবহৃত অস্ত্র কেন বাংলাদেশে আমদানি করা হয়েছে, সে বিষয়ে রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ করছে গোয়েন্দারা। শুল্ক গোয়েন্দারা জানান, তারা দুটি বিষয় খতিয়ে দেখবেন। প্রথমত: পুরাতন ও নিম্নমানের অস্ত্র সুকৌশলে গ্রাহকদের নিকট নতুন বলে বিক্রয়ের মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হয়েছে কিনা। দ্বিতীয়ত: এই জাতীয় ব্যবহৃত এবং নম্বরহীন ও অসঙ্গতিপূর্ণ অস্ত্র প্রকৃত অর্থে কী উদ্দেশ্যে আনা হয়েছে। এছাড়াও এসব অস্ত্র রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি করবে কিনা তাও দেখা হবে। এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দার পক্ষ থেকে তিন সদস্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান হলেন শুল্ক গোয়েন্দার অতিরিক্ত মহাপরিচালক একেএম নুরুল হুদা আজাদ। অন্যরা হচ্ছেন উপ-পরিচালক সাইফুর রহমান ও সহকারী পরিচালক জোবায়দা খানম।
উল্লেখ্য, অপারেশন আইরিন নিরাপত্তা রক্ষায় ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অরগানাইজেশনের এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি ‘রিজিওনাল ইন্টেলিজেন্স লিয়াজোঁ অফিস’ (রাইলো) কর্তৃক পরিচালিত অভিযান। বাংলাদেশসহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ২৮টি দেশ এই অভিযানে অংশ নিচ্ছে। শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর এই অভিযানের লিয়াজোঁ অফিস হিসেবে কাজ করছে।