বহুল আলোচিত জাতীয় দলের ক্রিকেটার আরাফাত সানির বিরুদ্ধে দায়ের করা যৌতুক মামলায় জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম জাকির হোসেন টিপু আদালতে বিচারাধীন এ মামলায় গতকাল অভিযোগ গঠনের জন্য ধার্য তারিখে আদালতে হাজির না থাকায় সময় আবেদন নাকচ করে সানির জামিন বাতিল করে চার্জগঠন করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। চার্জগঠনের ফলে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।
গত ৫ই এপ্রিল মহানগর হাকিম মো. নূর নবীর আদালতে সানি আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় আগামী ধার্য তারিখ পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন।
গত ২৩শে জানুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম রায়হানুল ইসলামের আদালতে সানির বিরুদ্ধে যৌতুক আইনের মামলাটি দায়ের করেন তার স্ত্রী দাবিদার নাসরিন সুলতানা। আদালত সানির বিরুদ্ধে মামলাটি আমলে নিয়ে ৫ই এপ্রিলের মধ্যে তাকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছেন। এ মামলার সাক্ষী করা হয়েছে চার জনকে। আগে নারী নির্যাতন মামলায় গত ৯ই মার্চ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. কামরুল হোসেন মোল্লা উভয় পক্ষের শুনানি শেষে জামিন প্রদান করেন। গত ১৫ই মার্চ তথ্য প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় সানিকে জামিন দেন আদালত। ওইদিন আদালতের সামনে উপস্থিত হয়ে বাদিনী জানায়, তার সঙ্গে ঘর-সংসার করতে রাজি হওয়ায় জামিনে তার আপত্তি নাই। আদালত এ শর্তে সানিকে জামিন প্রদান করেছেন।
নারী নির্যাতন মামলায় গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি সানির মা নার্গিস আক্তার ঢাকা সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম এসএম মাসুদ জামান তাকে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল পর্যন্ত জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। এর আগে তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সাইফুল ইসলাম শুনানি শেষে সানির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। গত ১২ই ফেব্রুয়ারিও সানি ও তার মা নার্গিস আক্তারের বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য মারধরসহ নির্যাতন করার অভিযোগে দায়ের করা নারী নির্যাতন মামলায় রিমান্ড ও জামিনের আবেদন নাকচ করা হয়েছে। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এস আই মাসুদুর রহমান আরাফাত সানিকে ঢাকা সিএমএম আদালতে হাজির করে মামলা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. সরাফুজ্জামান আনসারী উভয় আবেদনই নাকচ করেন। গত ১লা ফেব্রুয়ারি সানির বউ দাবিদার তরুণী নাসরিন সুলতানা ঢাকা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক এস এম রেজানুর রহমানের আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মোহাম্মদপুর থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। গত ৮ই ফেব্রুয়ারি আরাফাত সানি ও তার মা নার্গিস আক্তারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি এজাহার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে মোহাম্মদপুর থানা। মামলায় অভিযোগ, সানির সঙ্গে ২০১৪ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর তার বিয়ে হয়। বিয়ের কাবিননামায় ৫ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করা হয়েছে। অতঃপর সানি নানা অজুহাতে তাকে সামাজিক স্বীকৃতি দিতে অসম্মতি জানান। কিছুদিন আগে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাঠিয়ে তরুণীকে হুমকি দেন। সানি ও তার মা ২০ লাখ টাকার যৌতুক দাবি করেন। যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় তাকে বিভিন্নভাবে গালাগালি করতে থাকেন।
২০১৬ সালের ২৩শে ডিসেম্বর নাসরিন তাকে ঘরে তুলে নেয়ার জন্য বললে সানি যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২২শে জানুয়ারি আরাফাত সানির মা নার্গিস আক্তার মোহাম্মদপুর থানা সংলগ্ন এলাকায় রাস্তায় নাসরিনকে যৌতুকের জন্য মারধর করেন। গত ২৩শে জানুয়ারি ঢাকার মহানগর হাকিম মো. রায়হান আহম্মেদের আদালতে সানি ও তার মা’র বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকার যৌতুক দাবি করার অভিযোগে নাসরিন আক্তারকে যৌতুক আইনের একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলার অভিযোগটি আমলে নিয়ে আরাফাত সানি ও তার মায়ের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। ২২শে জানুয়ারি পুলিশ নাসরিনের করা আইনে মামলায় আরাফাত সানিকে গ্রেপ্তার করে। আদালত তাকে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সানি সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামেন। ওই সময় অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের দায়ে তাসকিনের সঙ্গে তিনি নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েন। পরে অ্যাকশন বদল করে ফিরে আসলেও জাতীয় দলে ঢুকতে পারেননি।
উল্লেখ্য, জাতীয় দলের ক্রিকেটার আরাফাত সানি তার স্ত্রী দাবিদার নাসরিনের দায়ের করা মামলায় ৫৩ দিন কারাগারে থাকার পর ১৫ই মার্চ জামিনে মুক্তি পান।