হাইওয়ে পুলিশের এএসপি মিজানূর রহমান তালুকদার হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গাড়ির মধ্যে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা তাকে ঝুট কাপড়ের টুকরা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে লাশ রূপনগরের বেড়িবাঁধ এলাকায় ফেলে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ছিনতাইকারী চক্রের চারজন জড়িত। তারা হলো- শাহ আলম ওরফে আলম ওরফে বুড্ডা, মিন্টু, কামাল ওরফে ফারুক ও জাকির। এরমধ্যে শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। গতকাল সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এবং কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম জানান, গত ২১শে জুন রাজধানীর রূপনগর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে হাইওয়ে পুলিশের এএসপি মো. মিজানূর রহমান তালুকদারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি থানা পুলিশ ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
তিনি আরো জানান, মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ডিবি পুলিশ জানতে পারে যে, একটি ছিনতাইকারী চক্র এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য শাহ আলম ওরফে আলম ওরফে বুড্ডাকে শনিবার রাতে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আরো জানান, ডিবি পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত শাহ আলম জানিয়েছে, গত ২১শে জুন ফজরের আজানের পর উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের মসজিদের পাশে শাহ আলম, মিন্টু, কামাল ওরফে ফারুক দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় হাইওয়ে পুলিশের এএসপি মিজানূর রহমান এলে তাকে যাত্রী সেজে ডেকে তাদের প্রাইভেটকারে উঠায়। তখন ফারুক সরকারি লোক বুঝতে পেরে পালাতে চাইলে মিন্টু ফারুককে লক্ষ্য করে বলে কিছু হলে তুই কি এভাবে পালিয়ে বাঁচতে পারবি? পরে ফারুকও প্রাইভেট কারের পেছনে উঠে। জাকির তখন চালকের আসনে বসা। শাহ আলম প্রাইভেটকারের সামনে বাম পাশে বসা ছিল। এএসপি মিজানূর রহমানকে গাড়িতে উঠানোর পরই ড্রাইভার জাকির খুব জোরে গাড়িতে গান বাজিয়ে, লাইট বন্ধ করে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে জসীম উদ্দিন রোড হয়ে প্রথমে হাউজ বিল্ডিং পরে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের দিকে চলে যায়। তখন গাড়িতে পেছনের সিটে বসা মিন্টু এএসপি মিজানের মাথায় লাঠি দিয়ে জোরে আঘাত করে। এ সময় তাদের মধ্যে একজন এএসপি মিজানকে প্রাইভেটকারে থাকা জুট কাপড়ের টুকরা দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরে।
কিছুক্ষণ পর কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে টহল পুলিশের ভয়ে মেইন রোড ব্যবহার না করে ১০ নম্বর সেক্টর থেকে গলিপথ ধরে বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছে। বিরুলিয়া ব্রিজের আগেই রাস্তার বাম পাশে ঘন গাছপালা দেখে জাকির গাড়ি থামায়। মিন্টু ও ফারুক দ্রুত এএসপি মিজানকে রাস্তার বাম পাশে ফেলে চলে যায়।
তিনি আরো জানান, এরা সাধারণত একজন যাত্রীকে টার্গেট করে গাড়িতে উঠিয়ে তাকে দুই পাশ দিয়ে চেপে ধরে কোনো কিছু দিয়ে হত্যা করে। এ ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটিই হয়েছে। সাধারণত তারা পুলিশ ও সাংবাদিক পেলে তাদের ছেড়ে দিলে বিপদ হতে পারে ভেবে হত্যা করে। এএসপি মিজানকে মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে তারা হত্যা করে। এর আগে এটিএন বাংলার ক্যামেরাম্যান এবং পুলিশের এক এএসআইকে একই কায়দায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল। শাহ আলমকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে এ গাড়িতে ছিনতাইকারী চারজন ছিল। বাকি তিনজনকে গ্রেপ্তার এবং যে গাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে ওই গাড়িটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
এই ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল কি-না প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এর আগে তারা গ্রেপ্তার হয়েছিল। কিন্তু, আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে আসে।
এই চক্রটি ঢাকায় ছিনতাই করে কি-না অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, এমন তথ্য আমাদের কাছে জানা নেই। তবে তারা প্রাইভেটকার নিয়ে হাইওয়েতে ছিনতাই করে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন, ডিসি (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান, ডিবি ডিসি (পূর্ব) খন্দকার নূরনবী, ডিএমপির ক্রাইম অ্যান্ড অ্যানালাইসিস বিভাগের ডিসি মো. মোদাচ্ছের আলী, ডিবি ডিসি ভারপ্রাপ্ত (দক্ষিণ) মো. শহীদুল্লাহ ও ডিবির এডিসি (পশ্চিম) মো. মোহাম্মদ আনিস আহমেদ প্রমুখ।