গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী জঙ্গিদের গ্রেনেড ছোড়ার প্রশিক্ষণ দিয়েছিল জঙ্গি আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে র্যাশ ওরফে আবু হাররা। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে নিয়ে গিয়ে এ প্রশিক্ষণ দেয়া হয় বলেও জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম।
তিনি আরো জানান, এ সময় রোহান ইমতিয়াজের শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার বৃদ্ধ হয়েছিল। এজন্য তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল র্যাশ। র্যাশ নব্য জেএমবির বড় কোনো পদে না থাকলেও নিহত তামিমের খুব ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গুলশান হামলা মামলার চার্জশিট দ্রুত দেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গুলশান হলি আর্টিজান হামলার পরিকল্পনায় জড়িত র্যাশ ওরফে আবু হাররাকে গত ২৮শে জুলাই ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নাটোর সিংড়া থেকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির সিটিটিসি এবং পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি শাখা।
সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম জানান, রাশেদ ওরফে র্যাশ ছিল হলি আর্টিজান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরীর খুব ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সেও এই হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী। নেপথ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গুলশান হামলায় সে অস্ত্র সরবরাহ করেছে এবং হামলায় অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ওই হামলার ঘটনাস্থল রেকি করা, হামলার জন্য বসুন্ধরা এলাকায় বাসা ভাড়া করার ক্ষেত্রেও ছিল তার সহযোগিতা। গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর সে নব্য জেএমবির প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিল। র্যাশকে হলি আর্টিজান মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ভাড়া বাসায় ব্যবহারের ফার্নিচারগুলো র্যাশ শেওড়াপাড়া থেকে কিনেছিল।
তিনি আরো বলেন, র্যাশ জঙ্গি খালেদের মাধ্যমে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়। এরপর গত রমজানে জেএমবির ঊর্ধ্বতন নেতাদের পরামর্শে গ্রাম থেকে ঢাকায় আসে। ঢাকায় আসার পর সে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেয়।
তিনি আরো জানান, গুলশানে হামলাকারী জঙ্গিরা যখন কথিত হিযরত করে বাড়ি থেকে চলে আসে তখন র্যাশ তাদের রিসিভ করে মিরপুরের আস্তানায় নিয়ে যায়। ভাটারার জঙ্গি আস্তানা এবং আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানায় ফার্নিচারসহ সব গুরুত্বপূর্ণ মালামালগুলো র্যাশ কিনেছিল। এতে বোঝা যায়, সে নব্য জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতো। তিনি আরো জানান, গুলশান হামলার অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য র্যাশ এবং জঙ্গি ছোট মিজানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তারা সীমান্ত এলাকা চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে আমের ঝুঁড়িতে করে ঢাকায় অস্ত্র নিয়ে এসে কল্যাণপুরে এবং ভাটারার জঙ্গি আস্তানায় পৌঁছে দেয়। গুলশান হামলার জন্য তামিম চৌধুরী র্যাশকে নির্বাচন করেছিল। কিন্তু, তাকে পরে বাদ দেয়া হয়। তাকে শুধু অস্ত্র সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়। র্যাশ নব্য জেএমবির বড় কোনো পদে না থাকলেও তামিম চৌধুরীর খুব আস্তাভাজন ছিল। তাকে পরবর্তীতে বড় কোনো পদে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল।
কবে নাগাদ হলি আর্টিজান মামলার চার্জশিট দেয়া হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। হলি আর্টিজান মামলার প্রায় আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ হামলার হামলার অন্যতম আসামি ছিল র্যাশ। তাকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র্যাশ আদালতে জবানবন্দি দেয়ার পর আমরা আদালতে চার্জশিট দেয়ার প্রস্তুতি নেবো। র্যাশ গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামি হওয়ার কারণে তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। তাকে আদালতে প্রেরণ করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের উপ-কমিশনার (ডিসি) মহিবুল ইসলাম, আবদুল মান্নান ও ডিএমপির (ডিসি-মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের ১লা জুলাই রাত ৯টা ২০ মিনিটে রাজধানীর কূটনৈতিক জোন গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মির পর হত্যা করে। এতে ১৭ বিদেশি ও ২ পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২২ জনের নির্মম মৃত্যু হয়।