জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান গতিতে চলতে থাকলে ২১০০ সাল নাগাদ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে বাংলাদেশ। প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানেও একই পরিস্থিতি হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিউিট অব টেকনোলজির (এমআইপি) একদল গবেষক বুধবার এ সতর্কবার্তা দিয়েছেন। গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ‘ভবিষ্যতের সব থেকে মারাত্মক ঝুঁকি হলো- তাপদাহ ঘনীভূত হয়ে থাকে গঙ্গা ও সিন্ধু নদী অববাহিকায় অবস্থিত ঘনবসতিপূর্ণ কৃষি এলাকাগুলোতে।’ এতে করে এই অঞ্চলের ১৫০ কোটি নিবাসী ঝুঁকিতে পড়বেন। আশঙ্কা রয়েছে তাদের জন্য নিজেদের অঞ্চলে বসবাস করা অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, বর্তমানে তাপ ও বাতাসের আর্দ্রতার মারাত্মক মিশ্রণে অরক্ষিত ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ২ শতাংশ। গবেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা সৃষ্টির নেপথ্যে অন্যতম কারণ কার্বন নির্গমন প্রতিহত করতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়া না হলে তা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
এমআইটির অধ্যাপক এলফাতিহ এলতাহির বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন বিমূর্ত কোনো ধারণা নয়, এটা ঝুঁকিতে থাকা বহুসংখ্যক মানুষের ওপর প্রভাব ফেলছে। যেভাবে চলছে সেটা অব্যাহত থাকলে মারাত্মক তাপদাহ সৃষ্টির ঝুকি থাকবে।’
‘ওয়েট-বালব তাপমাত্রা’
এমআইটির গবেষণায় বাতাসের আর্দ্রতা, মানব শরীর ঠান্ডা হওয়ার সক্ষমতা এবং তাপের মাত্রা পর্যালোচনা করা হয়েছে। এই তিনটি ফ্যাক্টর একসঙ্গে ‘ওয়েট-বালব তাপমাত্রা’ হিসেবে পরিচিত। একটি থার্মোমিটার ভেজা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে বাতাসের তাপমাত্রা রেকর্ড করার মাধ্যমে এটা মাপা হয়ে থাকে। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা এই পরিমাপ দিয়ে পানি কত সহজে বাষ্পীভূত হয় তা অনুমান করতে পারেন। বিজ্ঞানীদের মতে, মানুষ ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওয়েট-বালব তাপমাত্রায় টিকে থাকতে পারে। তাপমাত্রা এর বেশি হলে, ঘর্মাক্ত অবস্থা থেকে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হওয়া কঠিন হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হিট স্ট্রোক বা মৃত্যুও হতে পারে। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানে তীব্র তাপদাহে সাড়ে তিন হাজার মানুষ মারা গেছেন।
সম্প্রতি আরেকটি রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ, ভারত ও চীনের প্রায় ১৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষের জীবন বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে এই ঝুঁকি অনেক বেশি। ১৯৫০ সালের পর বন্যার কারণে- যত মানুষ মারা গেছেন বা আহত হয়েছেন তার বেশির ভাগই ঘটেছে বাংলাদেশ, চীন ও ভারতে।