দুপুরে হঠাৎ করে আকাশে কালো মেঘ। বদলে গেল দিনের আবহ। ক্ষণিকের জন্য নেমে এলো আঁধার। শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। কিছুক্ষণের মধ্যে বৃষ্টির পানিতে রাস্তাঘাট একাকার। গতকাল রাজধানীর অনেক জায়গায় হাঁটু পানির নিচে তলিয়ে যায় রাস্তা। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে রাজধানীবাসীর। বিশেষ করে অফিসফেরত কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীরা পড়েন চরম বিপাকে। বৃষ্টিতে বড়-ছোট প্রায় সব সড়কে পানি জমে যাওয়ায় কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন মানুষ। গতকাল দুপুর থেকে মাত্র দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে শুধু রাস্তায় নয়, বাসার ভেতরে পর্যন্ত পানি জমে গেছে। এর ওপর ছিল রিকশা ও যানবাহন সংকট। এই সংকটের মধ্যে রিকশাচালকরা দ্বিগুণ-তিনগুণ পর্যন্ত ভাড়া হাঁকিয়েছেন। কোথাও কোথাও ভ্যান সার্ভিস চালু করা হয়। এক অফিস থেকে আরেক অফিস পর্যন্ত যেতে কিংবা রাস্তা পারাপার হতে ভ্যান ব্যবহার করেছেন অনেক ভুক্তভোগী। যারা নগর পরিবহনের গাড়িতে উঠেছেন তাদের উঠতে হয়েছে গাদাগাদি করে। রাজধানীজুড়ে রাস্তায় যানজটের ভোগান্তিও ছিল লক্ষণীয়। সৃষ্ট জলজটে বেশিরভাগ এলাকার মূল সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। বাদ যায়নি এলাকার অলিগলিও। সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও যানজট ছিল দিনভর। ধীর গতিতে যানবাহন চলাচলের কারণে চলাচলকারী যাত্রীদের যানজটে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় পার করতে হয়েছে। ভাঙাচোরা সড়কগুলোতে দেখা গেছে যানবাহনের নাকাল অবস্থা। রাস্তায় রিকশা গর্তে পড়ে অনেক যাত্রীকে চুবানি খেতে হয়েছে। সিএনজি অটোরিকশাগুলো রাস্তায় ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থেকেছে। গাড়ির চাকা গর্তে পড়ে যাওয়ায় গাড়িকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া নগরীর অধিকাংশ সড়কের পাশে সিটি করপোরেশনের ড্রেন ও ওয়াসার পানির সংযোগ লাইনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সার্ভিস সযোগ স্থাপনের কাজ চলমান থাকায় খোঁড়া গর্তে পানি জমে সড়কের সঙ্গে সমান হয়ে গেছে। এসব গর্তে পড়ে পথচারীকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, বৃষ্টির কারণে মিরপুর, কালশী, মোহাম্মদপুর, আগারগাঁও, ধানমন্ডি, গুলশান, খিলক্ষেত, বাড্ডা, রামপুরা, কারওরান বাজার, পান্থপথ, তেজগাঁও, শেরেবাংলা নগর, মালিবাগ, শান্তিনগর, রাজারবাগ, পল্টন, মৌচাক, বিজয়নগর, নয়াপল্টন, পুরানাপল্টন, রমনা, ফকিরাপুল, মতিঝিল, কমলাপুর, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, বাসাবো, মুগদা, মাণ্ডা, পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড ও বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুপানি। এসব এলাকার রাস্তাগুলোতে সকাল থেকেই ছিল তীব্র যানজট। অফিস ফেরত যাত্রীরা গাড়ি না পেয়ে বৃষ্টিতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট গুটিয়ে ও জুতা হাতে নিয়ে অনেকেই পানি জমে থাকা স্থান পার হন। এ ছাড়া নগরীর অধিকাংশ সড়কের পাশে সিটি করপোরেশনের ড্রেন ও ওয়াসার পানির সংযোগ লাইনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সার্ভিস সযোগ স্থাপনের কাজ চলমান থাকায় খোঁড়া গর্তে পানি জমে সড়কের সঙ্গে সমান হয়ে গেছে। এসব গর্তে পড়ে পথচারীকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। নোংরা আবর্জনায় কুঁচকুঁচে কালো দুর্গন্ধময় পানি পেরিয়েই রাস্তায় চলাচল করতে হয়েছে স্থানীয় জনসাধাণকে। বাসা থেকে নেমে গন্তব্যে যেতে প্রয়োজনীয় যানবাহন না পেয়ে ভোগান্তিও পোহাতে হয়েছে তাদের। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জুলেল খান বলেন, ৩৫ বছর ধরে ঢাকা শহরে আছি। গত কয়েক দিনে যে চিত্র দেখলাম তা আর কখনও দেখিনি। গত এক সপ্তাহে বৃষ্টিতে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। যদিও এখন বৃষ্টির মৌসুম, বৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকা, জরাজীর্ণ রাস্তার সংস্কার না হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে চরম জনদুর্ভোগ দেখা দেয়। গত কয়েকদিন বৃষ্টির কারণে রাজধানীর অপেক্ষাকৃত নিচু স্থানগুলোতে হাঁটুপরিমাণ পানি জমে গেছে। বিশেষ করে নগরীর মিরপুর, কালশী, মতিঝিল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, আরামবাগ, শাহজানপুর, খিলগাঁও, বাসাবো, মাদারটেক, কমলাপুর, নাজিমউদ্দিন রোড, পুরান ঢাকার একাধিক এলাকায় বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বর্ষাকাল আসার পূর্বেই জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। বিশেষ করে রাস্তার পাশে থাকা ড্রেন ও পানি সঞ্চালনের জন্য থাকা সরকারি খালগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করতে জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ নাগরিক। এদিকে সিটি করপোরেশন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জলাবদ্ধ-প্রবণ এলাকাগুলোতে বাড়তি নজর রাখতে আমাদের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শকদের নির্দেশ দিয়েছি। তারা ড্রেন ও ম্যানহোলগুলো খুলে দিয়েছেন। অন্যান্য এলাকায় ড্রেন নির্মাণ হচ্ছে। আশা করি, নগরবাসী এর সুফল পাবে। আবহাওয়া চিত্রের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।