পঞ্চগড় ১ আসনে মনোনয়ন যুদ্ধে লিপ্ত আওয়ামী লীগ নেতারা। মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক প্রার্থীর সক্রিয় তৎপরতার কারণে নেতাকর্মীরাও পক্ষে বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে বিএনপি কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও দলীয় প্রার্থীকে একটি শক্তিশালী গ্রুপের বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হবে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনয়ন পাবার দৌড়ে রয়েছেন বর্তমান জাসদের সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের জন প্রেক্ষিত বিশেষজ্ঞ নাঈমুজ্জামান মুক্তা। দশম নির্বাচনে এ আসন থেকে মজাহারুল হক প্রধানকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু রাজনৈতিক কৌশলের কারণে হাই কমান্ড শেষ মুহূর্তে তার মনোনয়ন বাতিল করে জাতীয় পাটির প্রার্থীকে সমর্থন দেয়। কোন্দল, গ্রুপিং, দ্বন্দ্ব ও সক্রিয়ভাবে কাজ না করার কারণে জেলা আওয়ামী লীগ সমর্থন দিলেও এ আসনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী আবু সালেক জাসদ সমর্থিত প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হক প্রধানের কাছে পরাজিত হন। যেহেতু মনোনয়ন দিয়ে বাতিল করা হয়েছিল সে হিসেবে এবার মজাহারুল হক প্রধানকে মনোনয়ন দেয়া হবে বলে তিনি মনে করছেন। এ লক্ষ্যে তিনি সংসদীয় আসনে তার পক্ষের নেতাকর্মীদের নিয়ে তৎপর। নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পক্ষে রাখার চেষ্টা করছেন। তবে মজাহারুল হক প্রধানকে মনোনয়ন দেয়া হলে অপর গ্রুপের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তার পক্ষে কাজ করবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। মজাহারুল হক প্রধান গ্রুপের জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া আনোয়ারকে নতুন কমিটির কোথাও রাখা হয়নি। এ ব্যাপারে তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে অভিযোগ করেছেন। জাকিয়া দাবি করে বলেন, তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন কমিটি বাতিল করে আগের কমিটি বহাল করা হয়েছে। এ জন্য তিনি বিভিন্ন কমিটি গঠনে কার্যক্রম চালাবার জন্য নতুন ও পুরাতন কমিটির নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।
এমপি নাজমুল হক প্রধান ভোট বাড়াতে নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি ঘন ঘন এলাকায় এসে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডসহ উদ্বোধন, অনুদান প্রদান, সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন সভা ও সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে সর্বস্তরের মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার কৌশলগত কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি লোকজনদের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রেখে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে তৎপর রয়েছেন। কিছু আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী তার সঙ্গে রয়েছে। নাজমুল হক প্রধান মহাজোটের মনোনয়ন পেলে তাকে জেতার জন্য আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের দু’টি গ্রুপের নেতাকর্মীর নির্বাচনী কাজে সহযোগিতার প্রয়োজন হবে। এ ক্ষেত্রে তিনি নেতাকর্মীদের নিজের পক্ষে কতটুকু সক্রিয় রাখতে পারবেন তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট আগে সংসদ নির্বাচন না করলেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এখন তার লক্ষ্য সংসদে যাওয়া। লক্ষ্য অনুযায়ী এবার তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। এ জন্য তিনি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন কমিটি পুনঃগঠন, নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করাসহ গণমুখী রাজনীতি করার পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন ও লোকজনদের সমস্যা নিরসনে ভূমিকা রেখে নিজের শক্ত অবস্থান গড়ে তোলার কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি এবার হজ করতেও যাচ্ছেন। দ্বন্দ্বের কারণে সম্রাট মনোনয়ন পেলে মজাহারুল হক প্রধান গ্রুপের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বেকে বসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
নাঈমুজ্জামান মুক্তা সরাসরি স্থানীয় আওয়ামীলীগ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না হলেও কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পঞ্চগড় জেলা ডিজিটাল জেলা হিসেবে একাধিকবার জাতীয়ভাবে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছে। এতে তিনি নেপথ্যে মূল ভূমিকা পালন করেন। এটুআই প্রকল্পের জন প্রেক্ষিত বিশেষজ্ঞ হিসেবে মুক্তা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এখানে আসেন। এ থেকে সংসদীয় এলাকায় তার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে পরিচয় রয়েছে। এছাড়া নানান কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকাসহ লোকজনদের উপকারে এগিয়ে আসার জন্য সর্বস্তরের মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ও ক্লিন ইমেজ গড়ে উঠেছে। এটাকে ধরে রাখতে তিনি এবার আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চান। সম্প্রতি তিনি পঞ্চগড় প্রেস ক্লাব সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্র্থিতার বিষয়টি ঘোষণা করেন। তার আগ্রহের বিষয়টি নিয়ে তিনি বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি নেপথ্যে থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ভূমিকা রাখাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা জনস্বার্থমূলক কাজ করিয়ে নেন। তিনি সাবেক মহিলা সংসদ সদস্য ফরিদা আকতার হীরার মেয়ে জামাই। তার গ্রামের বাড়ি বোদা উপজেলা সদরের পার্শ্ববর্তী আটোয়ারীর সাতখামার এলাকায়।
ওদিকে, গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সক্রিয়ভাবে কাজ না করাসহ কোন্দল, গ্রুপিং ও দ্বন্দ্বের কারণে হেরে যাওয়ার জন্য আবু সালেক এবার জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গ্রুপিং ও কোন্দলের কারণে এখানে কখনই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা শক্ত অবস্থানে ছিল না। এ জন্য জেলা আওয়ামী লীগ সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে জেলা পরিষদ, কয়েকটি উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা নির্বাচনে যাকে দলীয়ভাবে সমর্থন বা মনোনয়ন দিয়েছে সে প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে চলে গ্রুপভিত্তিক মনোনয়ন ও সমর্থন। গ্রুপভিত্তিক নেতাকর্মীদের মধ্যে এখনও কোন্দল ও দুরত্ব রয়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন থেকে জেলা যুবলীগের সম্মেলন হচ্ছে না। আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে। এছাড়া বিভিন্ন নিয়োগ বাণিজ্য, টিআর, কাবিখা, কাবিটা, অবকাঠামো নির্মাণ ও গম সংগ্রহ অভিযান নিয়ে হচ্ছে নানা আলোচনা সমালোচনা।
কয়েকজন নেতাকে ইঙ্গিত করে নাঈমুজ্জামান মুক্তা বলেন, ওই নেতৃবৃন্দরা জনস্বার্থ ও কল্যাণে কাজ করার পরিবর্তে নিজেদের আখের গোছানোর কার্যক্রমে ব্যস্ত। তারা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ৮ থেকে ১০-১২ লাখ টাকা লেনদেন ও সুবিধা নিয়ে পুলিশসহ বিভিন্ন নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করছে। এ পুলিশগুলো জনগণের জন্য কি কাজ করবে। জনগণের কল্যাণে কাজ করতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে সংসদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সংসদে একজন আইন প্রণেতা হিসেবে যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের সর্বময় ক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করে এতটুকু শিখেছি যে কার কাছে কিভাবে জনকল্যাণমূলক কাজ করে নিতে হয়।
সাবেক সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান বলেন, আমি নির্বাচনে ছিলাম, আছি, থাকব। দু-একজন হাইব্রিড দেখা যাচ্ছে। যাদের গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না। গত নির্বাচনে আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে জোটের স্বার্থে বাতিল করা হয়। এ হিসেবে এবার আমাকে মনোনয়ন দেয়ার কথা। সংসদ নির্বাচন করার জন্য আমি প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। মুক্তার প্রার্থী হওয়ার আগ্রহের ব্যাপারে তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে দলীয় কয়জন নেতাকর্মী ছিল।
আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যোগ্য মনে করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছি। সংসদ নির্বাচন করার জন্য আমি দলের মনোনয়ন চাইব। নেত্রী মনে করলে আমাকে মনোনয়ন দেবেন। আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলেও আমি তার পক্ষে কাজ করব। তবে সংসদ নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। যুবলীগের অন্যান্য কমিটি হয়ে গেছে। জেলা যুবলীগের সম্মেলনের জন্য কেন্দ্র থেকে তারিখ নির্ধারণ করছে না। আশা করছি তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।
এমপি নাজমুল হক প্রধান বলেন, শরিক দল হিসেবে আমি মহাজোটের মনোনয়ন চাইব। সবার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হওয়ায় আশা করছি মনোনয়ন পাব। অন্যথায় নির্বাচনতো করতে হবে। সংসদীয় এলাকার ব্যক্তি পর্যায়ে সবার সমস্যা নিরসন করা সম্ভব না হলেও সামগ্রিকভাবে জনগণের উপকার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মানুষের প্রত্যাশা ও দাবি অনুযায়ী এখনো অনেক কাজ করা প্রয়োজন। এ কাজগুলো নির্বাচনের আগে পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হবে।
এ আসনে বিএনপির প্রার্থিতা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। তবে গ্রুপিং ও কোন্দল রয়ে গেছে। এ গ্রুপিং ও কোন্দল নিরসন করে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার ব্যাপারে কারো কোনো উদ্যোগ ও ভূমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। শারীরিক অবস্থা ভালো থাকলে এবং অন্যকোনো আসনে প্রার্থী না হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার মুহাম্মদ জমির উদ্দিন সরকার এখানে প্রার্থী হবেন। তিনি প্রার্থী না হলে তার ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির প্রার্থী হবেন। তবে শরিক দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে কেন্দ্রীয় জাগপার সহসভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান এ আসনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী। এ লক্ষ্যে তিনি সম্প্রতি সংসদীয় এলাকার বিভিন্ন স্থানে তার মা বর্তমান জাগপার সভাপতি ও শফিউল আলম প্রধানের সহধর্মিণী অধ্যাপিকা রেহানা প্রধানের সঙ্গে থেকে জনসভায় বক্তব্য দিয়েছেন। এ আসনে শফিউল আলম প্রধানের প্রচুর ভক্ত ও রিজার্ভ ভোট রয়েছে। প্রবীণ রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার এ আসনের নির্বাচিত এমপির পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার জন্য ভোটারদের সঙ্গে পরিচয় ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো মতবিরোধ নেই। তবে তিনি এলাকায় কম আসায় সাধারণ ভোটার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার সমালোচনা রয়েছে। বাবার সুবাদে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও এবারই প্রথম প্রার্থী হওয়ায় তাকে দলের নেতাকর্মীর বাইরে সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে পরিচয় ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হবে বলে অনেকে মনে করেন। তবে তাকে রমজান মাসে ইফতার মাহফিলসহ নানা কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে, নেতৃত্ব দেয়ার মতো নেতা আছে কিন্তু নেতৃত্ব না থাকায় পঞ্চগড় জেলার সর্বস্তরের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে চলা বিবদমান দু’টি গ্রুপের কোন্দল জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে শহর থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা, বিভ্রান্তি বাড়ার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করলেই এ বিরাজমান অচলাবস্থার অবসান হতে পারে বলে অনেকে মনে করছে। ২০১১ সালে দু’টি গ্রুপের সৃষ্টি হয়। এ দু’টি গ্রুপের নেতাকর্মীরা এখনও বিভক্ত। কেন্দ্রীয় এক নেতা এখানে তার পছন্দের নেতাদের দিয়ে নেতৃত্ব দিতে চান। আর অপর নেতা চান গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন। মূলত এখানেই বিরোধ। ২০১১ সালের ৫ই জানুয়ারি তৎকালীন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাজমুল হকের মৃত্যুর পর সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে দু’টি গ্রুপের সৃষ্টি হয়। এতে শুরু হয় দ্বন্দ্ব ও কোন্দল। সাবেক স্পিকার ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার পক্ষের এম এ মজিদের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ এবং সাবেক সংসদ সদস্য জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মরহুম মোজাহার হোসেন ও পৌর বিএনপির সভাপতি মেয়র তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে অপর গ্রুপ পরস্পরের বিরুদ্বে সক্রিয় থাকার পর দলীয় গ্রুপিংয়ের নিরসন করার জন্য কয়েক বছর আগে উদ্যোগ নেয়া হলেও পরে তা ভেস্তে যায়। সূত্র জানায়, তিক্ত সম্পর্কের কারণে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার চাচ্ছেন না তৌহিদুল ইসলাম সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদে আসুক। তিনি আগামীতে যেভাবে এখানে নেতৃত্ব সাজানোর জন্য যে কৌশল সফল করার চেষ্টা করছেন তৌহিদুল নেতৃত্বে আসলে সে কৌশল সফলে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এখানেই সুরাহা আটকে রয়েছে।
বিএনপির একটি গ্রুপের নেতা এম এ মজিদ সংসদ নির্বাচনে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার অথবা ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরের মধ্যে যে কেউ একজন প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সম্মেলন করার জন্য প্রায় ৩ বছর আগে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী ৬ মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন না করে আহ্বায়ক নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার কারণে সার্বিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তবে কমিটি থাকায় পৌর ও উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রম চালু রয়েছে।
পঞ্চগড় পৌর বিএনপির সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এখানকার বিএনপির নেতৃত্ব ও দলের বিরাজমান সাংগঠনিক সমস্যার নিরসন না করে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার নির্বাচনে প্রার্থী হলে তিনি নিশ্চিত পরাজয় বরণ করবেন। আর ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরের বেলায় তো কোনো কথাই নেই। নবম সংসদ নির্বাচনে জমির উদ্দিন সরকার আওয়ামী লীগ প্রার্থী মজাহারুল হক প্রধানের কাছে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তার জন্মস্থান তেঁতুলিয়ায় মাত্র ৩০০ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। কেন তিনি এত ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হলেন তা নিয়ে ৮-৯ বছরে একবারও সংসদীয় এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে বসে আলোচনা করেননি।