২২শে শ্রাবণ আজ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। সাহিত্য, কবিতা, গান, নাটক, গল্প কোথায় নেই রবীন্দ্রনাথ! তার সাহিত্য কিংবা উপন্যাস নিয়ে অনেক নির্মাতা তৈরি করেছেন সিনেমাও। অনেক ছবিতে ব্যবহৃত হয়েছে কবিগুরুর গান। তবে যতটা হবার কথা ছিলো রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ন আমাদের দেশে হয়নি। এর কারণ খুঁজলে দেখা যায়, ব্যবসায়িক দিকটি বিবেচনা করে অথবা মননশীলতার অভাবে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে কম এগিয়ে এসেছেন প্রযোজক ও নির্মাতারা। যদি পেছনে ফিরে তাকাতে হয় তাহলে দেখা যায় রবীন্দ্রনাথের গল্প নিয়ে চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় কাজ করেছেন। ১৯৬১ সালে সত্যজিৎ রায় রবীন্দ্রনাথের তিনটি ছোটগল্প সমাপ্তি, পোস্টমাস্টার ও মনিহারা নিয়ে নির্মাণ করেন ‘তিনকন্যা’ ছবি। এ ছাড়া নরেশ মিত্রের নির্বাক ছবি ‘নৌকাডুবি’ (১৯৩৮), সবাক ছবি ‘গোরা’ (১৯৩৮), সেতু সেনের ‘চোখের ‘বালি (১৯৩৮) নির্মিত হয়। রবীন্দ্রনাথের কাহিনি নিয়ে ভারতে অনেক ছবি নির্মিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য কিংবা উপন্যাস নিয়ে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি ছবি নির্মাণ হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের গানও বেশ কিছু ছবিতে ব্যবহৃত হয়েছে। সালাউদ্দিন পরিচালিত ১৯৬৩ সালে ‘ধারাপাত’ ছবিতে একটি ও ১৯৭০ সালে জহির রায়হান পরিচালিত ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিতে একটি গান ব্যবহার করা হয়। ১৯৬৯ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত শবনম, রহমান অভিনীত ‘জোয়ার ভাটা’ ছবিতে আবহ সংগীত হিসেবে ‘গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ’ গানটি ব্যবহার করেন। ১৯৭২ সালে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত স্বাধীনতাযুদ্ধের ওপর নির্মিত প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘ওরা ১১ জন’ ছবিতে রবীন্দ্রনাথের ‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা’ গানটি ব্যবহার করেন। সত্তর দশকের শেষের দিকে সাইফুল আজম কাসেম রবীন্দ্রনাথের নৌকাডুবি উপন্যাসের ছায়া অবলম্বনে নির্মাণ করেন ‘সোহাগ’ ছবি। ১৯৮৪ সালে পরিচালক কাজী হায়াত পরিচালিত ক্ষুধিত পাষাণ অবলম্বনে ‘রাজবাড়ী’ ছবিটি নির্মাণ করেন। গুণী নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম ২০০৫ সালে নির্মাণ করেন ‘শাস্তি’। এর গুরুত্বপূর্ণ চার চরিত্রে অভিনয় করেন ইলিয়াস কাঞ্চন, চম্পা, রিয়াজ ও পূর্ণিমা। একই বছর তিনি নির্মাণ করেন রবীন্দ্রনাথের গল্প অবলম্বনে ‘শুভা’। রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প ‘সুভাষিণী’ অবলম্বনে নির্মিত এ ছবিতে অভিনয় করেন শাকিব খান ও পূর্ণিমা। ২০১০ সালে নার্গিস আক্তারের পরিচালনায় ‘সমাপ্তি’ গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয় ‘অবুঝ বউ’। এ ছবিতে অভিনয় করেন ববিতা, ফেরদৌস, শাকিল খান ও নিপুণ। রবীন্দ্রসাহিত্যের আরেক জনপ্রিয় ছবি হলো কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘কাবুলীওয়ালা’। এতে কাবুলীওয়ালা চরিত্রে প্রয়াত নায়ক মান্নার অভিনয় নজর কেড়েছিল সবার। মিনি চরিত্রে শিশুশিল্পী দীঘির অভিনয়ও বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। এ ছবির জন্য সেরা শিশুশিল্পী চরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় দীঘি। পরবর্তীতে ‘চারুলতা’ নামে একটি ছবি নির্মাণ হয়। এ ছবিতে অভিনয় করেন ইলিয়াস কাঞ্চন, কুমকুম হাসান, সজল নূর প্রমুখ। সবশেষে চলতি বছর রবীন্দ্রনাথের গল্প নিয়ে নির্মাণ করা হয় ছবি ‘তুমি রবে নীরবে’। এর চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেন মাহবুবা ইসলাম সুমী। গত ৮ই মে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যানারে এ ছবিটি মুক্তি পায়। এ চলচ্চিত্রটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন কলকাতার শিল্পী ভাস্বর চ্যাটার্জি ও অমৃতা চট্টোপাধ্যায় এবং বাংলাদেশ থেকে অভিনয় করেছেন তানজিন তিশা ও ইরফান সাজ্জাদ। সবকিছু মিলে বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য নিয়ে কাজ তেমন একটা হয়নি। তবু দর্শকদের প্রত্যাশা রয়েছে সামনে রবীন্দ্রসাহিত্য নিয়ে মানসম্পন্ন চলচ্চিত্র দেখার। এ বিষয়টির প্রতি প্রযোজক, পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরো জোর দেয়ার কথা জানিয়েছেন চলচ্চিত্রবোদ্ধারাও।