হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৩১ কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে। ঢাকা কাস্টম হাউজের প্রিভেনটিভ টিম মাত্র ১০ ঘণ্টার ব্যবধানে দু’টি পৃথক চালানে দেশে আসা বিপুল পরিমাণ এই চোরাই স্বর্ণ উদ্ধার করে। এরমধ্যে সিঙ্গাপুর থেকে আসা এক যাত্রীকে শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ২৫ কেজি স্বর্ণসহ আটক করা হয়। অপর চালানটি আটক করা হয় গতকাল সকাল পৌনে ৮টার দিকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের টয়লেট থেকে। দুই চালানে আটক বিপুল পরিমাণ এই স্বর্ণের আনুমানিক বাজারমূল্য সাড়ে ১৫ কোটি টাকা। কম সময়ের ব্যবধানে এ বছরে জব্দ করা স্বর্ণের এ দুটিই সবচেয়ে বড় চালান।
ঢাকা কাস্টম হাউজ সূত্রে জানা গেছে, সিঙ্গাপুর থেকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এসকিউ ৪৪৬ নম্বর ফ্লাইটে জামিল আকতার (৪৮) নামে এক যাত্রী শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ওই যাত্রীর কাছে স্বর্ণ আছে এমন একটি গোপন তথ্য ছিলো কাস্টম প্রিভেনটিভ টিমের কাছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আগে থেকেই গ্রিন চ্যানেলে সতর্ক অবস্থান নেয়। এ সময় গ্রিন চ্যানেল পার হওয়ার সময় হুইল চেয়ারে করে আসা এক যাত্রীকে সন্দেহ হয় তাদের। পরে প্রিভেনটিভ দল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন এলাকা থেকে যাত্রী জামিল আকতারকে অনুসরণ করে। পরবর্তীতে গ্রিন চ্যানেল অতিক্রমকালে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় যাত্রী জামিল তার কাছে স্বর্ণ থাকার কথা অস্বীকার করেন। কিন্তু তার কথা ও আচরণে অসংলগ্নতা দেখা যায়। এ সময় কাস্টমসের প্রিভেনটিভ টিম তাকে চ্যালেঞ্জ করে। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কাস্টমস হলে। তার শরীরে তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশির একপর্যায়ে শরীরের নিম্নাংশে ভেস্ট পরিহিত অবস্থায় ২৫ কেজি জনের ২৫০টি স্বর্ণবার পাওয়া যায়। প্রতিটি স্বর্ণবারের ওজন ১০০ গ্রাম। সে হিসেবে যাত্রীর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া স্বর্ণের ওজন ২৫ কেজি। জামিল আকতার জানায়, কাস্টমসের চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্য তিনি শরীরের নিম্নাংশে ভেস্ট পরে অসুস্থ সেজে হুইল চেয়ারের আশ্রয় নেন। কাস্টম সূত্র আরো জানায়, উদ্ধার হওয়া ২৫০টি স্বর্ণবার স্কচটেপ দিয়ে মুড়িয়ে ভেস্টের মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়। পরে সেই ভেস্ট তার নিম্নাংশের দু’পায়ের মাঝে প্যাঁচানো ছিলো। আটক স্বর্ণের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। আটক যাত্রী মো. জামিল আকতার নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার আজিমুদ্দিন লেন পুরাতন বাবুপাড়া গ্রামের মৃত জাকির আজিজির ছেলে। তার পাসপোর্ট নং বিপি০৬৬১১২৭। ঢাকা কাস্টম হাউজের সহকারী কমিশনার (প্রিভেনটিভ) এইচএম আহসানুল কবির জানান, যাত্রী একজন ফ্রিকোয়েন্ট ট্রাভেলার। তিনি গত ৬ মাসে মোট ১৩ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই চোরাকারবারী জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরে তার চিপসের (দোকান) ব্যবসা রয়েছে। কাস্টমসের এই কর্মকর্তা আরো জানান, এই যাত্রীর বিরুদ্ধে গতকালই ফৌজদারী মামলা দায়ের করে বিমানবন্দর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। মামলা নং ৩।
কাস্টম সূত্র বলছে, গত এক বছরের মধ্যে শরীরে বহন করা সবচেয়ে বড় চালান। উল্লেখ্য, এ বছরের সবচেয়ে বড় স্বর্ণ চোরাচালান এটি। গত বছরের আগস্ট মাসে হুইল চেয়ারে করে আসা আতাউল মুজিব নামে যাত্রীর শরীর থেকে ২৩ কেজি স্বর্ণ আটক করা হয়েছিল।
এদিকে, রাতে ২৫ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করার পর ১০ ঘণ্টা না পেরোতেই ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিএস৩১৪ নম্বর ফ্লাইটের টয়লেট থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৬ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করে ঢাকা কাস্টমস হাউজের প্রিভেনটিভ টিম। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল সকাল পৌনে ৮টার দিকে ফ্লাইটটি অবতরণ করার সঙ্গে সঙ্গে কাস্টম হাউজের প্রিভেনটিভ টিম বিমানটির টয়লেটে তল্লাশি চালায়। এ সময় সেখান থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় স্কচটেপ দিয়ে প্যাঁচানো ১ কেজি ওজনের ৬টি স্বর্ণবার উদ্ধার করে। এই ৬ কেজি স্বর্ণবার তিনটি বান্ডিলে মোড়ানো ছিলো। ধারণা করা হচ্ছে, রাতে ২৫ কেজি স্বর্ণ ধরা পড়ায় কাস্টমসের নজর ধরা পড়ার ভয়ে চোরাচালানিরা এ স্বর্ণ বিমানের টয়লেটে ফেলে গেছে। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের বারগুলোর বাজারমূল্য ৩ কোটি টাকা।