সব দলের অংশগ্রহণে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখতে চায় কানাডা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাতে দেশটির ঢাকাস্থ হাই কমিশনার বেনওয়া পিয়েরে লারামি এমনটাই জানিয়েছেন। সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কানাডা দূতের বিদায়ী সাক্ষাতে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘তারা সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়।’ এ সময় স্বচ্ছ ভোটবাক্স চালুসহ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উদ্যোগ ও অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ এর ১৫ই আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর ২১ বছর দেশে গণতন্ত্র ছিল না। তার সরকারই মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সচিব বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না করা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা একটা কোয়ালিশন সরকার গঠন করার কথা বলেছিলাম। বিএনপিকে বলেছিলাম যে, তারা যে মন্ত্রণালয় চায়; তা দেয়া হবে।’ প্রেস সচিব জানান, বৈঠকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এএইচএমবি নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠাতে কানাডা সরকারের প্রতি ফের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭৫’র পর পালিয়ে যাওয়া নূর চৌধুরী কানাডার টরন্টোতে রয়েছেন। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তাকে ফেরত পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে মৃ?ত?্যুদণ্ডবিরোধী কানাডা। তবে গত বছর শেখ হাসিনা কানাডা সফরে দেশটির
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে নূর চৌধুরীকে ফেরতের বিষয়ে আলোচনা করেন। সেই আলোচনায় তাকে ফেরত পাঠানোর একটি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি খুঁজতে ঐকমত্য হয় দু’দেশ। প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কানাডার হাই কমিশনারকে বলেছেন, একজন খুনি কানাডায় আছে; নূর চৌধুরী, তাকে ফেরত পাঠান। জবাবে কানাডার দূত প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ পৌঁছে দেবেন। প্রধানমন্ত্রী ও কানাডা দূতের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় এবং বৈশ্বিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন কানাডিয়ান হাই কমিশনার। দুই দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার হচ্ছে বলে মন্তব্য করে এ সময় তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে জনসচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকালে প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন কানাডার হাই কমিশনার। উল্লেখ্য, ঢাকায় মিশন শেষ করতে যাচ্ছেন পিয়েরে লারামে। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে তার সম্মানে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠিত হয়।
দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মদিন জন্মাষ্টমী উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে গতকাল বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী বর্তমান সরকার দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা বাঙালির হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করবে বলে বাণীতে তিনি প্রত্যাশা ব্যাক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী ‘জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। আমাদের সংবিধানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুুষের সমানাধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। তিনি বলেন, শ্রীকৃষ্ণ আজীবন শান্তি, মানব প্রেম ও ন্যায়ের পতাকা সমুন্নত রেখেছেন। তিনি তার জীবনাচরণ এবং কর্মের মধ্য দিয়ে সত্য ও সুন্দরের আরাধনা করেছেন। মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন এবং সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠাই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য। এই জন্মাষ্টমী উৎসব শ্রীকৃষ্ণের ভক্তগণকে তাঁর জীবনাদর্শ অনুসরণ করতে আরো অনুপ্রাণিত করবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে সক্ষম হব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী দেশের সকল নাগরিকের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করেন।