মিরপুরের দারুস সালামে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে সোমবার রাত থেকে একটি বাড়ি ঘিরে রাখে র্যাব। ওই বাড়িতে ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ, তার দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও দুই সহযোগীসহ মোট সাত জন রয়েছে বলে র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দিনভর চেষ্টার পর সন্ধ্যায় ওই বাড়িতে থাকা ‘জঙ্গি’রা আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয় বলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা আত্মসমর্পণ করেনি। দারুস সালামের বর্ধন বাড়ি এলাকার ২/৩/বি কমলপ্রভা নামের একটি ছয় তলা বাড়ির পঞ্চম তলার বাসাটি ঘিরে তৎপরতা চালায় র্যাব। বাড়িটি অবসরপ্রাপ্ত টিএন্ডটি কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদের। আব্দুল্লাহ এই বাড়িটিতে দীর্ঘ ১০ থেকে ১২ বছর ধরে ভাড়ায় থাকে। ছয় তলা বাড়ির ২৪টি ফ্ল্যাটের ২৩টি ফ্ল্যাটের মোট ৬৫ জন বাসিন্দাকে র্যাব উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। উদ্ধার করা বাসিন্দাদের মধ্যে ২৪ জন নারী, ২৬ জন পুরুষ ও ১৫ শিশু রয়েছে। র্যাব জানিয়েছে, টাঙ্গাইলে আটক দুই জঙ্গির তথ্যমতে তারা এই বাড়িটি ঘিরে অভিযানে নামেন। আব্দুল্লাহ পেশায় একজন আইপিএস ব্যবসায়ী এবং তার বিদেশি কবুতরের একটি বড় খামার আছে। গতকাল রাতে অভিযান শুরুর পর আব্দুল্লাহ র্যাবের ওপর আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে। সোমবার রাতে পর পর তিনটি বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে র্যাবের ওপর আক্রমণ করার চেষ্টা করে সে। মঙ্গলবার সকালে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট জঙ্গি সন্দেহে আটক বাড়ির আশেপাশের রাস্তা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে। আশেপাশের সবক’টি রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। যানবাহন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের এসব রাস্তা দিয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ওই বাড়ির গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। সকাল সাড়ে ১১টায় র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জঙ্গি আব্দুল্লাহর কাছে বিপুল পরিমাণ পেট্রল, এসিড, দেশীয় বোমা ও পিস্তল রয়েছে। টাঙ্গাইলে আটক দুই সহোদর জঙ্গি সৈয়দ নুরুল হুদা ওরফে এলাইছ মাসুম ও সৈয়দ মাজারুল ইসলাম ওরফে খোকনের তথ্যমতেই এই অভিযান। তিনি বলেন, জঙ্গি আব্দুল্লাহ ১০ থেকে ১২ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছে। র্যাব সদস্যরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছেন বাড়িটিতে মোট সাতজন অবস্থান করছে। জঙ্গি আব্দুল্লাহ অন্যান্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সঙ্গে তার বোনকে উদ্ধারের জন্য আবেদন জানায়। পরে র্যাব সদস্যরা অন্য বাসিন্দাদের সঙ্গে জঙ্গি আব্দুল্লাহর বোনকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসে।
বেলা ৩টায় র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের জানান, জঙ্গি আব্দুল্লাহর স্বজনদের দিয়ে তাকে আত্মসমর্পণ করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যদি সে আত্মসমর্পণ না করে তবে র্যাব বিকল্প চিন্তা করবে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পর র্যাবের এ মুখপাত্র জানান, প্রথম কাজ ছিল ওই ভবনের অন্য বাসিন্দাদের নিরাপদে উদ্ধার করা। সেটা তারা দুপুর ১টার ভেতরে করেছেন। পরের ধাপে ছিল জঙ্গি আব্দুল্লাহকে আত্মসমর্পণ করানোর চেষ্টা। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত তারা সে চেষ্টা করেছেন। তার স্বজনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় সে জানিয়েছে রাত সাড়ে সাতটা থেকে ৮টার মধ্যে সে আত্মসমর্পণ করবে। তার প্রমাণ হিসাবে সে তার স্ত্রী ও সন্তানকে বারান্দায় পাঠিয়েছে।
এলাকায় আতঙ্ক ও উৎসুক জনতার ভিড়: এদিকে ওই বাড়িটি ঘিরে তৎপরতা শুরুর পর থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে এলাকায়। দারুস সালাম থানার সামনের রাস্তা থেকে শুরু করে জঙ্গি সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়ির আশেপাশের সকল রাস্তা দিয়ে যানবাহন ও মানুষ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। উৎসুক জনতা ও এলাকাবাসীর মধ্যে গতকাল রাত থেকেই আতঙ্ক বিরাজ করে। শফিক মিয়া নামের এক পরিবহন কর্মী জানান, সোমবার রাতে তিনি খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত আনুমানিক ১টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। তারপর তিনি বাসা থেকে বের হয়ে পড়েন। বাইরে এসে দেখতে পারেন র্যাবের অনেক সদস্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। তখন র্যাবের কাছেই তিনি জানতে পারেন কমলপ্রভা নামের বাড়িটিতে জঙ্গি সন্দেহে অভিযান চালালে জঙ্গিরা বিস্ফোরকদ্রব্য ফুটিয়ে র্যাবের ওপর আক্রমণ করে। এর কিছুক্ষণ পর রাত ২টার দিকে আবার বিকট শব্দ শোনা যায়। এরপর রাত আড়াইটায় আবার শব্দ হয়। শাওন নামের এক শিক্ষার্থী জানান, ওই রাতে তিনি জেগে ছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দে বাইরে আসেন। প্রথমে তিনি মনে করেছিলেন হয়তো কোনো ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ হওয়ার শব্দ। কিন্তু পরে জানতে পারেন সেটা জঙ্গিদের বিস্ফোরক দ্রব্যের শব্দ।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে জঙ্গি আব্দুল্লাহর বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদরে। তার বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। তারা ৫ ভাই ও ২ বোন। সে দীর্ঘদিন ধরে দারুস সালামের বর্ধন বাড়ি এলাকার ওই বাড়িতে ভাড়া থাকে। তার বড় ভাই খোকা আইপিএসের ব্যবসায়ী। তিনিও একই বাসায় থাকেন।