সারা দেশে মাদরাসা শিক্ষক নিয়োগে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের স্তূপ পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে শিক্ষক নিয়োগে অধ্যক্ষের সরাসরি আর্থিক সম্পৃক্ততা, শিক্ষক নিবন্ধন ছাড়াই প্যাটার্ন শিক্ষক নিয়োগ, জাল সনদে চাকরি দেয়া, পরবর্তীকালে এমপিওভুক্তি করার জন্য জাল কাগজ তৈরিতে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা। এসব অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এক মাসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে- এরকম অর্ধশতাধিক অভিযোগ তদন্ত করতে মাদরাসা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ। এ ব্যাপারে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, শিক্ষক নিবন্ধন ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যাবে না- এটা জানার পরও অনেকেই নানা ধরনের জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। এ ধরনের প্রচুর অভিযোগ অধিদপ্তরে আসে, মন্ত্রণালয় থেকেও আসে। সব অভিযোগ আমরা নিজস্ব বলয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলেই তার এমপিও স্থগিতসহ ফৌজদারি মামলা দায়েরের ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এ রকম কয়েকটি অভিযোগ সম্প্রতি মাদরাসা অধিদপ্তরকে তদন্ত করতে বলেছে মন্ত্রণালয়। গত ১৯শে সেপ্টেম্বর রংপুর পীরগাছায় চৌধুরীরাণী ফাতেহিয়া ফাজিল মাদরাসার গভর্নিং কমিটির সদস্য নুরুল আমিনসহ আটজন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শাখায় অভিযোগ করেন, এনটিআরসিএ শিক্ষক নিবন্ধন ছাড়াই প্যার্টান (আরবি প্রভাষক) শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। জাল সনদ দিয়ে চাকরি নিয়েছে পরবর্তীতে তাদের এমপিওভুক্ত করতে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সহায়তা করেছেন। পুরো অভিযোগটি ওই মাদরাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে মাদরাসা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার এবিএস ফাজিল মাদরাসার ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক ঘুষ নেয়ার অভিযোগ করেছেন রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। তার অভিযোগ, শিক্ষক নিয়োগে ৫ থেকে ৮ লাখ কর্মচারী নিয়োগে ২ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক লেনদেন হয়েছে। পুরো অভিযোগ গভর্নিং বডি ও মাদরাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধর্মপুর মাঠের হাট আল হেরা দাখিল মাদরাসায় ভুয়া সনদ দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কয়েকজন শিক্ষক চাকরি করছেন। সম্প্রতি একটি নিয়োগে জাল সনদধারীদের চাকরি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন খুশি মিয়া নামে একজন অভিভাবক। জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার বাঁশখুর ফাজিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ পদে জামায়াতের রুকনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সদ্য নিয়োগ পাওয়া ওই উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাইফুল ইসলাম নামে গভর্নিং বডি ও নিয়োগ কমিটির সদস্য।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধর্মপুর মাঠের হাট আল হেরা দাখিল মাদরাসার সুপার নুরুন নবী মিয়া অভিযোগের ব্যাপারে বলেন, আমার মাদরাসার নতুন কমিটি গত বৃহস্পতিবার অনুমোদন হয়েছে। এই কমিটিতে খুশি মিয়া নামের কোনো অভিভাবক সদস্য নেই। আগের কমিটিতেও ছিল না। অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাদরাসার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে ভুয়া নাম দিয়ে অভিযোগ দাখিল করেছে মন্ত্রণালয়ে। আসলে আমার মাদরাসায় ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে কোনো শিক্ষক চাকরি করছেন না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভুয়া সনদসহ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নানা অনিয়মে চাকরি করছেন শিক্ষকরা। বিভিন্ন সময় এসব শিক্ষকের সনদ ভুয়া সনদ পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) তদন্ত করে প্রমাণ পায়। চাকরির শুরু থেকেই বেতনভাতা হিসেবে সরকারি অংশে টাকা ফেরত নেয়ার সুপারিশ করে সংস্থাটি। কিন্তু মাউশির একশ্রেণির কর্মকর্তার জোগসাজশে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না।