১৫৩ ওয়ানডেতে দেশের প্রথম ২শ’ উইকেটের মালিক স্পিনার আবদুর রাজ্জাক। তবে টেস্টে ছিলেন তিনি ভীষণ অবহেলিত। তবুও ১২ ম্যাচে তার শিকার ২৩ উইকেট। অথচ ২০১৪ থেকে জাতীয় দলের কোনো ফরমেটে নেই এ অভিজ্ঞ স্পিনার। এখন পর্যন্ত তাকে জাতীয় দলের বাইরে রাখার কোনো উপযুক্ত কারণও জানা যায়নি। বলতে গেলে বিসিবির অবহেলারই শিকার তিনি। অথচ ঘরোয়া ক্রিকেটে এখনো বল হাতে যে কোনো দলের জন্য যমদূত খুলনার ৩৫ বছর বয়সী এ বোলার। ১০৭ প্রথম শ্রেণির ম্যাচে তার শিকার ৪৮২ উইকেট। এবারো তিনি জাতীয় ক্রিকেট লীগে (এনসিএল) নেতৃত্ব দিচ্ছেন খুলনা বিভাগের। গত আসরে তার নেতৃত্বেই চ্যাম্পিয়ন হয় খুলনা বিভাগ। গতকাল ১৯তম এনসিএলের দ্বিতীয় রাউন্ডে দলকে বল হাতে আরো একটি জয় উপহার দেন তিনি। নিয়েছেন ৫ উইকেট। প্রথম স্তরের ম্যাচে খুলনার বিপক্ষে শেষ দিনে বরিশালের চ্যালেঞ্জ ছিল ৯০ ওভার খেলার। ৪০৪ রানের লক্ষ্যে আগের দিনের ৩২ রানের সুবাদে চতুর্থ দিন জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩৭১ রান। হাতে ছিল ১০ উইকেট। কিন্তু তারা টিকতে পারেনি ৫০ ওভারও। গুটিয়ে যায় ১৬৩ রানেই। সেই সুবাদে খুলনার জয় ২৩৯ রানে।
১৭ ওভার বোলিং করে ৩২ রানে ৫ উইকেট নেন অধিনায়ক রাজ্জাক। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এটি তার ২৯তম ৫ উইকেট। বাংলাদেশের স্পিনারদের মধ্যে ৩০ বার ৫ উইকেট নিয়ে ওপরে আছেন কেবল এনামুল হক জুনিয়র। কাকতালীয়-ভাবে হলেও সত্যি তাদের দু’জনের জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া এখনো রহস্য।
গতকাল বরিশাল দিন শুরু করেছিল বিনা উইকেটে ৩২ রান নিয়ে। শেষ দিনে উদ্বোধনী জুটি টিকে যায় আরো কিছুক্ষণ। রাফসান আল মাহমুদকে ফিরিয়ে ৫৮ রানের জুটি ভাঙেন মইনুল ইসলাম। এ স্পিনার এরপর দ্রুত নেন আরো দুটি উইকেট। সেই ধাক্কা আর সামাল দিতে পারেনি বরিশাল। বাকি সময়টুকুতে তাদের ভোগান রাজ্জাক। বরিশালের ব্যাট হাতে লড়াই করেছেন কেবল ওপেনার ফজলে মাহমুদ রাব্বি। এই ওপেনার এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। তাকে সঙ্গ দেয়ার মতো কেউ ছিলেন না। আর শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হলেন ৮৮ রানে। তাকে আউট করেই রাজ্জাক পূর্ণ করেন ৫ উইকেট।
বগুড়াতে মরা ম্যাচে নাসিরের ঝড়
বগুড়ায় ম্যাচের প্রথম দুদিনে বৃষ্টি ও ভেজা আউটফিল্ডের কারণে মাঠে গড়ায়নি এক বলও। তৃতীয় দিনে খেলা হয় মাত্র ১৭ ওভার। গতকাল শেষ দিনে দুই দলই ব্যাট করেছে। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন জাতীয় দলের তারকা নাসির হোসেন। ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে রংপুরের হয়ে ২৬ বলে হাঁকিয়েছেন ফিফটি। বল করছিলেন অনিয়মিত বোলাররা। সেটিকে কাজে লাগিয়ে ঝড় তুললেন নাসির হোসেন। ড্র’র পথে থাকা মরা ম্যাচে উত্তেজনা ছড়িয়েছে শুধু তার ব্যাট। গতকাল রংপুর ব্যাট করতে নেমে ৫২.৩ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ২৩৭ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে। এরপর জবাব দিতে নেমে শেষ দিনে ৪৪ ওভার খেলার সুযোগ পায় ঢাকা বিভাগ। তারা ১৫০ রান ৩ উইকেট হারিয়ে দিন শেষ করে। ফলাফল ম্যাচ ড্র।
নাসিরের আগে ফিফটি করেন রংপুরের দুই ওপেনার সায়মন আহমেদ ও জাহিদ জাভেদ। তবে দুজনই অবসর নেন চোট পেয়ে। ৫ চার ও ৪ ছক্কায় সায়মন করেন ৬৩। জাভেদ করেন ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৫৩। নাসির নেমে শুরু করেছিলেন বাউন্ডারিতে। আবদুল মজিদ, জয়রাজ শেখ, রনি তালুকদারের মতো অনিয়মিত বোলারদের পেয়ে ব্যাটে ঝড় তোলেন। ২৬ বলে ৫০ করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি আউট হন ৩৭ বলে ৫২ রান করে। ৭টি চারের পাশে ছক্কা ছিল দুটি। তিনে নেমে সোহরাওয়ার্দী শুভ অপরাজিত থকেন ৮০ বলে ৫৬ রানে। নাসিরের পর ঢাকার হয়ে রনি তালুকদারও ব্যাটিং ক্ষমতা দেখান। ৯৬ বলে তিনি করেন ৬০ রান।
চট্টগ্রাম-রাজশাহীর ড্রর ম্যাচে ব্যাটিং মহড়া
তৃতীয় দিনেই বোঝা যাচ্ছিল চট্টগ্রাম-রাজশাহীর ম্যাচের ভাগ্য। তাই ব্যাটসম্যানরা অনেকটা মহড়াই দিয়েছেন। জহুরুল ইসলাম অমির পর ৭৭ রান করে ফেরেন জুনায়েদ। ফরহাদ হোসেন করেন ৬০। দ্বিতীয় স্তরের এই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে রাজশাহী অলআউট ৪১৫ রানে। এর আগে প্রথম ইনিংসে চট্টগ্রামের সংগ্রহ ছিল ৪৩২ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে চট্টগ্রাম ১ ওভার ব্যাট করার পরই ম্যাচ ড্র হয়। অবশ্য রাজশাহীর এ ব্যাটিং মহড়াতে ছিল হতাশাও। জুনায়েদের আগে সেঞ্চুরির সুযোগ হাতছাড়া করেন জহুরুল ইসলাম। ৭৫ রান নিয়ে দিন শুরু করা অধিনায়ক আউট হন আর ৪ রান যোগ করেই। ২৫ রানে দিন শুরু করা নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হন ৩৮ রানে। চতুর্থ উইকেটে ১১৮ রানের জুটি গড়েন জুনায়েদ ও ফরহাদ। ১০ চার ও ২ ছক্কায় ৯৮ বলে ৭৭ করে আউট হন জুনায়েদ। ১১৩ বলে ৬০ রান করেন আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ফরহাদ।
কক্সবাজারে সিলেট-মেট্রোর ম্যাচ পরিত্যক্ত
প্রথম রাউন্ডে কক্সবাজারে চারদিনের মধ্যে খেলা হয়েছিল মাত্র একদিন। বাকি তিনদিনই মাঠ ছিল বৃষ্টির দখলে। ঢাকা-বরিশাল ম্যাচটা তাই নিষ্প্রাণ ড্র হয়েছিল। দ্বিতীয় রাউন্ডেও একই চিত্র। সিলেট বিভাগ ও ঢাকা মেট্রোর ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছে। প্রথম রাউন্ডে একদিন খেলা হলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে এক বলও মাঠে গড়ায়নি। টানা বৃষ্টি এবং মাঠ ভেজা থাকায় ঢাকা ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন আম্পায়াররা।