লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার আজমেরী হক বাঁধন। দীর্ঘদিন ধরেই মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততা তার। টিভিপর্দায় সরব এ অভিনেত্রীর অভিনয় ক্যারিয়ার বেশ ঝলমলেই বলা চলে। স্ব অভিনয়গুণে নিজেকে জনপ্রিয় শিল্পীদের তালিকায় নিয়ে গেছেন অল্প সময়েই। অভিনয় জীবনে বেশ সমৃদ্ধ হলেও ব্যক্তিজীবনটা খুব একটা সুখকর নয় বাঁধনের। ২০১০ সালে হঠাৎ বিয়ের পর সংসার জীবনে নানা চড়াই উৎরাইয়ের ঘটনা ঘটে। স্বামী মাশরুর সিদ্দিকী সনেটের সঙ্গে মনোমালিণ্য এবং নানা জটিলতা বাঁধনকে প্রতিনিয়তই ক্ষত-বিক্ষত করে তুলেছে। অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হতে হতে এক পর্যায়ে বিচ্ছেদে চলে যান এ অভিনেত্রী। ২০১৪ সালের ২৬শে নভেম্বর বাঁধনের বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তার ব্যক্তিজীবনের এ জটিলতা নিয়ে মিডিয়ায় বিভিন্ন সময়ে সংবাদ প্রকাশও হয়েছিল। বিচ্ছেদের কথা এতদিন শুধু একমাত্র মেয়ে সায়রার জন্যই আড়াল করে রেখেছিলেন বাঁধন। শুক্রবার সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান তিনি। বিচ্ছেদ অনেক আগে হলেও তিন বছরেও স্বামীর সঙ্গে জটিলতার অবসান হয়নি এই লাক্সতারকার। বাঁধন বলেন, আমার ব্যক্তিজীবন নিয়ে সবাই কমবেশি জানেন। সায়রা স্কুলে ভর্তি হওয়ায় ওর কথা চিন্তা করে বিচ্ছেদের বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা উঠলেও বলিনি। ২০১৪ সালেই আমার বিচ্ছেদ হয়। এদিকে সনেটের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেলেও জটিলতা ক্রমশ বাড়তে শুরু করে। সম্প্রতি বাঁধন জানতে পারেন, তার সাবেক স্বামী আরেকটি বিয়ে করেছেন। সেটা নিয়ে তার কোনো মাথাব্যাথা নেই। কিন্তু সনেট অন্য একজনকে বিয়ের পরও সায়রাকে(বাঁধন-সনেটের মেয়ে) তার মায়ের কাছ থেকে আলাদা করিয়ে নিতে চান। এবং তাকে কানাডা নিয়ে পড়াশোনা করাতে চান। এসব নিয়ে নতুন জটিলতায় পড়েছেন বাঁধন। তবে এ পরিস্থিতিকে সামালও দিচ্ছেন তিনি। একমাত্র সন্তানকে নিজের কাছে রাখার অধিকার চেয়ে পারিবারিক আদালতে মামলা করেছেন বাঁধন। গত ৩রা আগস্ট তার পক্ষ থেকে এই মামলা দায়ের করা হয়। বাঁধন বলেন, গত মাসে আমার মেয়ে সায়রাকে নিয়ে যায় আমার সাবেক স্বামী সনেট। এরপর একরকম জোর করেই তাকে কানাডা নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। সায়রা এখন কোথায় থাকবে, মা হিসেবে আমার অধিকার পেতে মামলা করেছি।
বিয়ের পরবর্তী অবস্থা বলতে গিয়ে বাঁধন আরো বলেন, বিয়ের পরপর আমার সঙ্গে সনেটের নানা ঝামেলা শুরু হয়। আমাকে প্রতিনিয়ত অত্যাচার নির্যাতন করতো। আমরা আলাদা হয়ে যাই। একপর্যায়ে আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলাও করে সনেট। আদালতে আসা যাওয়া করতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। তাতেও সে ক্ষান্ত হয়নি। ২০১৪ সালে ডিভোর্স লেটার দেয়ার পরও একদিন আমার বাসায় এসে ভাঙচুর করে। এতকিছুর পরও ভেবেছিলাম মেয়ের কথা চিন্তা করে সব ঠিক হবে। আমি একজন অভিনেত্রী। এখনো ইয়াং। চাইলে আরেকটা বিয়ে করতেই পারতাম। কিন্তু সায়রার কথা ভেবে কিছুই করিনি। বরং চেয়েছি সনেটের সঙ্গে সব ঠিক হয়ে গেলে মেয়েটার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। তাই মেয়ের দিকে তাকিয়ে সম্পর্ক ঠিক করে ফেলতে চেয়েছি। যে কারণে গেল রোজার ঈদে সনেটসহ মালেয়শিয়া গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে দেশে ফেরার পরে শুনলাম সনেট বিয়ে করেছে। তার স্ত্রীই মূলত আমার মেয়েকে কানাডা নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
বাঁধন জানান, সায়রা এখন তার সঙ্গে আছে। গত আগস্টে বাবার বাসায় নেয়া হয়েছিল সায়রাকে। তিনি বললেন, আমার মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার পরদিন উনার স্ত্রী আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, তোমার মেয়ের ভবিষ্যত হলো কানাডায়। আর আমি যদি ভালো মা হয়ে থাকি তাহলে এটাই যেন মেনে নিই। তিনি দ্রুত সায়রা ও স্বামীকে নিয়ে কানাডা যেতে চান। সায়রা আমার মেয়ে, আর আমাকেই কিনা এটা বলা হলো। কেমন করে তিনি এটা ভাবলেন আশ্চর্য লাগে!
বিচ্ছেদের আগের ঘটনা প্রসঙ্গে ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার’ খ্যাত এই তারকা বলেন, অনেকে মনে করে আমি শিল্পীপতির স্ত্রী ছিলাম। অনেকে তো বলেও যে আমি টাকার লোভে বিয়ে করেছি। কিন্তু সত্যিটা হলো, কথিত সেই শিল্পপতি তার শ্বশুরবাড়িতে থাকতো। আর তার স্ত্রী (বাঁধন) নিজে অভিনয় করে রোজগার করে আনতো! এসব নিয়ে এখন আর পড়ে থাকতে চাই না। আইন অনুযায়ী মেয়েকে আমার কাছে রাখতে চাই।