সুস্থ সবল থাকতে চাই, সব বয়সেই ডিম খাই স্লোগানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে বিশ্ব ডিম দিবস পালিত হয়েছে গতকাল। এ উপলক্ষে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) চট্টগ্রামের নির্দিষ্ট তিনটি স্থানে ফ্রি ডিম খাওয়ানো এবং চার টাকা দামে ডিম বিক্রির ঘোষণা দেয় গত বৃহস্পতিবার। গণমাধ্যমের সুবাধে চট্টগ্রামের মানুষের কানে পৌছে যায় খবরটি। ব্যস, গতকাল সকাল ১১টায় ডিম বিক্রি শুরুর আগেই তিন স্থানে ঢল নামে ক্রেতাদের। যাদের সব হাত একত্রে উঠে ডিমের দিকে। এক হাত-দুই হাত করে ডিম দিতে গিয়েও গলদঘর্ম ডিম বিক্রেতারা। ডিম দখলের লড়াইয়ে খোঁয়া যায় কারও পায়ের জুতো, কারও মোবাইল। সব মিলিয়ে লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি গুনছেন
ক্রেতারা। চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক এ প্রসঙ্গে মানবজমিনকে বলেন, বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ ও জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ এবং চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে ২৫ হাজার ডিম বিক্রির ঘোষণা দেয়া হয়; যা দুপুর ২টা পর্যন্ত বিক্রির কথা। কিন্তু সকাল ১১টা থেকে ১১টা ২০ মিনিটেই সব ডিম বিক্রি শেষ বলে ঘোষণা দেন ডিম বিক্রেতারা। তবে ক্রেতারা বলছেন, প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর মোটেও ২৫ হাজার ডিম বিক্রি করেনি। এটি প্রচারণা চালাচ্ছেন মাত্র। প্রতারণা করেছে ক্রেতাদের সঙ্গেও। হাজার দশেক ডিম বিক্রি করে তারা বাকি ডিম আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। ক্রেতারা বলছেন, ফ্রি এক হাজার সিদ্ধ ডিম খাওয়ানোর কথা বললেও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কাউকে একটি ডিমও ফ্রি খাওয়াননি। চার টাকা ডিম বিক্রির কথা বলায় ডিম কেনা নিয়ে ক্রেতাদের ঠেলাঠলি শুরু হয়। যেখানে ডিম খাওয়ার কোনো পরিস্থিতিও ছিল না।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে ডিম কিনতে আসেন সাদিয়া জাহান পুতুল নামে এক গৃহবধূ (৩৪)। তিনি বলেন, বাজারে প্রতিটি ডিম ৮ টাকা। ৪ টাকা দামে ডিম বিক্রির খবর শুনে ডিম কিনতে আসি। ভাগ্যিস আগে থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে ৩০টি ডিম কিনতে পেরেছি। তা না হলে কীভাবে যে ডিম কিনতাম ভাবতে গা শিউরে উঠে। তিনি বলেন, প্রেস ক্লাবের সামনে এত মানুষ ডিম কিনবে আসবে তা ভাবতে পারিনি। যাদের ধাক্কাধাক্কি ও ঠেলাঠেলিতে প্রাণ যাওয়ার অবস্থা। সেখানে দুই থেকে তিনশ মানুষ ডিম কনতে পারলেও ৬০০-৭০০ মানুষ ডিম কিনতে পারেনি বলে জানান তিনি। ক্রেতারা বলেন, পিকআপে করে ডিম নিয়ে এসে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের লোকজন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে ২০ মিনিট ডিম বিক্রি করেছেন। এরপর ঘোষণা দেন ডিম বিক্রি শেষ। পরে তারা পিকআপ নিয়ে চলে যান। এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিম বিক্রেতা কাউছার হোসেন জানান, প্রেস ক্লাবের সামনে আমরা সাড়ে ৬ হাজারের মতো ডিম বিক্রি করেছি। পরে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সামনে চলে আসি। সেখানে ৯ হাজারের মতো ডিম বিক্রি করেছি। এরপর জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ মাঠে চলে আসি। দুপুর ২টা পর্যন্ত সেখানে বাকি ডিম বিক্রি করেছি। তিনি বলেন, সবখানে ডিম ক্রেতাদের ভিড় ছিল। ডিম না পেয়ে অনেক ক্রেতা গাড়ির পেছনেও দৌড়িয়েছে। সবার কাছে বিক্রি করতে গেলে এক লাখেরও বেশি ডিম বিক্রি হতো বলে জানান তিনি। দুপুর ২টায় জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ মাঠে দেখা যায় ডিম খাওয়া নিয়ে লেখা বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙানো পিকআপ। কিন্তু কোনো ডিম নেই এতে। তখনো দাঁড়িয়েছিল অনেক ডিম ক্রেতা। যাদের অনেকের পা খালি। এরমধ্যে আবুল হাশেম নামে এক ক্রেতা জানান, ডিম ক্রেতাদের ভিড়ে তিনি পায়ের জুতো হারিয়েছেন। ফরিদ ও নাসের নামে দুজন জানান, তাদের মোবাইল হারিয়ে গেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এছাড়া বিকালে প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।