নাজমুল হাসান পাপন বোর্ড সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে বিসিবিতে এসেছিলেন ২০১৩ সালের ১৭ই অক্টোবর। গতকাল ছিল তার চারবছরের দায়িত্ব পালনের শেষদিন। গতকাল সংবাদ মাধ্যমের সামনে তার ফেলে আসা দিনগুলোর কথা তুলে ধরেন তিনি। শেষদিন দুপুর ২ টায় মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আসেন। এরপর বোর্ডের অন্য পরিচালকদের নিয়ে বসেন আলোচনায়। সন্ধ্যা ৬ টার পর আসেন সংবাদ মাধ্যমের সামনে।কেমন কাটলো চার বছর? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এক একটা জায়গায় এক রকমের চ্যালেঞ্জ ছিল। আমাদের পারফরম্যান্স নিয়ে যদি কথা বলি মেজর চ্যালেঞ্জটা এসেছিল, আমার কাছে মনে হয়েছে আমাদের দেশে অনেক ট্যালেন্ট। কিন্তু এই ট্যালেন্টগুলাকে ঠিকমতো খেলাতে হবে। খেলা কিন্তু অনেকেই পারে। মূল ব্যাপার ছিল দলীয় শৃঙ্খলা এবং টিম ওয়ার্কের অভাব। আমি আসার আগে সবাই ইন্ডিভিজ্যুয়ালি পারফর্ম করতো। আশরাফুল থেকে শুরু করে সবাই ভালো খেলতো। ওরা পারফর্ম করলে জিততাম, না হলে জিততাম না। কিন্তু টিম ওয়ার্কের অভাব ছিল। সো এই টিম ওয়ার্ককে ম্যানেজ করে যতটুকু পারা যায়, মানে একটা সিস্টেমের মধ্যে আনা এটা লোকালি একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। এরপর আরো একটার পর একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি।’
শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরের নানা কারণে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল বলে জানান নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, ‘দেশ ছাড়াও দেশের বাইরে কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে ছিলাম, আমি যখন আসি তখন বিশ্বকাপ বাংলাদেশে হবে কী না এটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ এখানে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল তাতে তখন আইসিসি’র সঙ্গে আলাপ-আলোচনাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমি যখন আসি তখন আইসিসি থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেয়ার আলাপ-আলোচনা চলছিলো। কেন না তখন এক বছর বাংলাদেশের পারফরম্যান্স খুবই খারাপ ছিলো। তো ক্রিকেট স্ট্যাটাস নিয়ে কথা হচ্ছে, আবার ফুল মেম্বারশিপ থেকে নেমে যাওয়ার ইস্যু ছিল। এইগুলোই মূলত সমাধান করা কঠিন ছিলো। আইসিসিতে ওদের ম্যানেজ করা এবং আইসিসি’র ইভেন্টগুলো বাংলাদেশে আনা ভীষণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা খারাপ থাকায় নিরাপত্তাজনিত ইস্যুতেও কিছু দেশ আসতে চাচ্ছিলো না। অস্ট্রেলিয়াতো প্রথম দফায় এলোই না। তারপরে ইংল্যান্ডকে আনাও ছিল চ্যালেঞ্জিং। দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলোর মধ্যে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল, এর মধ্যে ভারতে অন্তত একটা টেস্ট আমরা খেলতে পেরেছি, যা অনেকদিন ধরেই সবার দাবি ছিল। এর ফলশ্রুতিতে ২০১৯ সালে আমরা ভারতের সাথে ফুল সিরিজ খেলতে যাবো। আগে যারা আমাদের ডাকেই নাই, সেখানে এখন আমাদের ভারতে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ হবে ২০১৯-এ।’
এত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দলের দারুণ ফলাফলকে নাজমুল হাসান পাপন তার বোর্ডের বড় সাফল্য হিসেবেই দেখছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দল অনেক ভালো খেলেছে আবার খারাপও খেলেছে। বিশেষ করে ওয়ানডেতে আমরা দারুণ খেলেছি। বিশ্বকাপে ২০১৫-তে আমরা কোয়ার্টার ফাইনালে গেলাম। বিদেশের কথা যদি বাদ দেন তাহলে আমরা দেশের মাটিতে কিন্তু দারুণ খেলেছি। আমরা ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছি। যেখানে আগে আমরা কেনিয়া বা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জিততাম। এখন বড় দলগুলোর বিপক্ষে সিরিজ জিততে শুরু করেছি। এটা সত্যি যে, টেস্টে এখনো আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। যদিও আমরা টেস্টে দেশে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ড্র করেছি। শ্রীলঙ্কাতে টেস্ট জিতেছি। তবে আমাদের এখনো টেস্টে আরো উন্নতি করতে হবে সেটি বিদেশের মাটিতে। এবার দল এলে এটি নিয়ে কাজ করতে হবে।’
নাজমুল হাসান পাপন দাবি করেন আগে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে বড় বড় দলের যে চিন্তা ছিল তা অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে তার সময়ে। তিনি বলেন, ‘আগে কিন্তু আমাদের বড় দলগুলো গুরুত্বই দিত না। আমাদের ডাকতো না, এখন কিন্তু সেটি নেই। তাই বলে যে এখন আমরা অনেক বড় দল হয়ে গেছি তা নয়। এখনো আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। তবে এটা বলতে চাই, এখন সব দলের কাছেই বাংলাদেশের একটা আলাদা অবস্থান আছে।’