রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে একাধিক শিফট পদ্ধতিতে। এতে ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হতে পারেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, একই ইউনিটে একাধিক শিফট থাকার কারণে ভর্তি পরীক্ষার সঠিকভাবে মূল্যায়ন হবে না। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ থেকে বাদ পড়তে পারেন মেধাবী শিক্ষার্থীরা।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, শিফট পদ্ধতি নিয়ে ভর্তিচ্ছুকদের সংশয়ের কোনো কারণ নেই। সবার কথা চিন্তা করেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও ফলাফল তৈরি করা হয়।
এবারের ভর্তি পরীক্ষার রুটিন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১১টি ইউনিটের মধ্যে আটটি ইউনিটে শিফট পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ইউনিটগুলোর মধ্যে সি, ই, এফ ও এইচ ইউনিটে তিন শিফট; এ, বি, ডি ও জি ইউনিটে দুই শিফট করে এবং আই, জে, কে ইউনিটে এক শিফটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটি শিফটে আলাদা আলাদা প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হবে।
একাধিক ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীর ভাষ্যমতে, শিফট পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে কোনো শিফট থেকে কম নম্বর পেয়েও ভর্তির সুযোগ পাওয়া যায়। আবার কোনো শিফটে বেশি নম্বর পেয়েও সুযোগ মেলে না। একই ইউনিটে একাধিক শিফট থাকার কারণে যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়া যায় না। দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একই প্রশ্নে ইউনিটভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু রাবির ভর্তি পরীক্ষায় এ সুযোগ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ থেকে মেধাবীরা বঞ্চিত হবে। এ ছাড়া রাবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ রাখার কারণে এবার রেকর্ড সংখ্যক আবেদন জমা পড়েছে। ফলে শিফট পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিলে নিজেদের মেধা যাচাইয়ের সুযোগ থাকবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, শিফট পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ের সুযোগ থাকে না। দেখা যায়, একই ধাঁচের প্রশ্নে এক শিফটের শিক্ষার্থীরা ভালো করছেন, আবার অন্য শিফটের শিক্ষার্থীরা খারাপ করছেন। এতে শিক্ষার্থীরা তাঁদের মেধার যোগ্য প্রমাণ দিতে পারছেন না। এমনকি শিফট পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিলে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।
একটি ইউনিটের পরীক্ষা একাধিক শিফটে নিলে মেধার সঠিক মূল্যায়ন কতটুকু সম্ভব—জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক ড. আতাউর রহমান বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের নির্বাচনে কিছুটা তারতম্য থাকেই। তাই একসঙ্গে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। ফলে মেধাবীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে না।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে। ওই পদ্ধতিতে কোনো গ্রুপ থেকে ৫০ শতাংশ নম্বর পেয়েও ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, আবার অন্য গ্রুপে এর বেশি নম্বর পেয়েও অনেক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পায়নি। এবার ভর্তি পরীক্ষায় একটি ইউনিটে একাধিক শিফট থাকার কারণে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ থেকে আরো বেশি বঞ্চিত হবেন। ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কথা না ভেবে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবরই দায়সারা বক্তব্য দিচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এ এম শাকিল হোসেন বলেন, ‘প্রশাসন কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। একাধিক শিফটে পরীক্ষা নেওয়ার ফলে জালিয়াতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এতে মেধাবীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক শাখার উপরেজিস্ট্রার এ এইচ এম আসলাম হোসাইন বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধারণা ঠিক নয়। কারণ, ফলাফল তৈরির সময় প্রতি শিফট থেকে সমানভাবে শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করা হয়। যদি এক-দুজন অতিরিক্ত থাকে, সে ক্ষেত্রে তাঁদের নির্বাচন করেই ফলাফল তৈরি করা হয়।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘পরীক্ষার্থী বেশি হওয়ায় শিফট পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। শিফট পদ্ধতিতে নম্বরের একটু তারতম্য হয়ে থাকেই। তবে আমরা প্রতি শিফট থেকে সমানসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করাব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়টি অনুষদে ৫৯টি বিভাগে কোটাসহ মোট চার হাজার ৬৩৬টি আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন করেছেন তিন লাখ ১৬ হাজার ১২০ জন। যা গতবারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এবার প্রতি আসনে লড়বে ৬৮ জন ভর্তিচ্ছু। আগামী ২২ থেকে ২৬ অক্টোবর এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।