ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতেও ডুবেছে চট্টগ্রাম মহানগরীর সড়ক ও নালা। নিচু এলাকায় জমেছে পানি। বাসা-বাড়ি তেমন না ডুবলেও বৃষ্টিতে দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন নগরবাসী। নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে চট্টগ্রামে শুরু হয় ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চলছিল টানা বৃষ্টি। এর মাঝে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিও হয়েছে।এমন বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম
জেলার কোথাও পানি জমার খবর পাওয়া না গেলেও ঠিকই পানি জমেছে চট্টগ্রাম শহরে। এর মূল কারণ নালা-নর্দমা ভরাট এবং ময়লা-আবর্জনার জটে পানি উপচে ডুবেছে সড়ক। এ ছাড়া ভাঙাচোরা সড়কের গর্তে পানি জমে কোথাও ডোবা, কোথাও খরস্রোতা নদীতে পরিণত হয়েছে সড়ক। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, নগরীর খালগুলো খনন করে পানি চলাচলের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত কিছুই হবে না। খালগুলোতে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক হলে নালা-নর্দমা পরিষ্কার করতে হবে। এরপর নিচু সড়কগুলো উঁচু করে সংস্কার করলে ভারি বৃষ্টিতেও জল থাকবে না। ডুববে না সড়ক ও বাসা বাড়ি। তিনি বলেন, নগরীর সবকটি আবাসিক এলাকা ও নিচু সড়ক সংস্কারের কাজ করছে চসিক। এরমধ্যে যেসব এলাকায় সড়ক উঁচু করে সংস্কার করা হয়েছে সেসব সড়কে পানি উঠেনি। এর আগে ভারি বৃষ্টিতেও সেসব এলাকার মানুষ জলমুক্ত সড়কে চলাফেরা করেছে নির্বিঘ্নে।
তিনি বলেন, ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে শহরের যেসব সড়ক ওয়াসা ও উড়াল সেতুর নির্মাণ কাজের কবলে রয়েছে সেসব সড়কের গর্তে পানি জমে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে নির্মাণ কাজের আবর্জনার স্তূপে নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি উপচে সড়ক ডুবিয়ে দিয়েছে। ওয়াসা এবং উড়াল সড়কের নির্মাণ কাজের কারণে এসব এলাকার সড়ক সংস্কারের কাজ করতে পারছে না চসিক।
মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের কাজ পেয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। নগরীর অভ্যন্তর ও চারপাশের খালগুলো খনন করে পানি চলাচল স্বাভাবিক করার কাজ ওই প্রকল্পের আওতায়। কিন্তু তারা এখনো কাজই শুরু করেনি।
অবশ্যই চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, নগরীর সবকটি খাল খনন করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করার উদ্যোগ ইতিমধ্যে নেয়া হয়েছে। খুব শিগগির কাজ শুরু হবে।
দেখা যায়, বৃষ্টিতে নগরীর মুরাদপুর, কাপাসগোলা, ষোলশহর দুই নম্বর গেইট, পুরাতন চান্দগাঁও, বালুরটাল, আগ্রাবাদ, হালিশহর, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, সদরঘাটের নিচু এলাকাগুলো ডুবে গেছে। তলিয়ে গেছে এসব এলাকার সড়ক। তাছাড়া নগরীর বিভিন্ন সড়কের ভাঙাচোরা গর্তে পানি জমে ডোবায় পরিণত হয়েছে। যেখানে দিনভর দুর্ভোগের শিকার হয়েছে মানুষ।
নগরীর মুরাদপুর এলাকার হাসিনা বেকারির কর্মচারী জামশেদ জানান, ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতেও মুরাদপুর এলাকায় নালা-নর্দমা উপচে সড়ক একহাত পানিতে ডুবে গেছে। সড়কে বড় বড় গর্ত থাকায় মানুষ হাঁটা-চলায় হোঁচট খেয়ে নানা যন্ত্রণার শিকার হয়েছে।
ষোলশহর দু’নম্বর গেইট এলাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখার লোন অফিসার রিপন, আগ্রাবাদ এলাকার আক্তারুজ্জামান স্টোরের নিরাপত্ত রক্ষী আবুল হোসেন বলেন, ভাঙাচোরা সড়কে পানির নিচে ডুবে থাকা গর্তে পড়ে অনেকে পা ভেঙেছেন। এসব এলাকার রিকশাচালক নুরুল আলম বলেন, বৃষ্টির কারণে ডুবে যাওয়া সড়কের গর্তে পড়ে রিকশার চাকা ভেঙেছে তার। এ সময় দুজন যাত্রী ছিঁটকে নালায় পড়েছেন।
নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে হিউম্যান হলারের চালক আরিফুল ইসলাম জানান, কাপাসগোলা সড়ক, শাহ আমানত সড়ক এবং কালুরঘাট-বিমান বন্দর সড়ক দিয়ে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ফরিদ মিয়া জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে এ পর্যন্ত ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আরো দুইদিন এভাবে বৃষ্টি ঝরতে পারে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামসহ দেশের নদী বন্দরসমূহে তিননম্বর সতর্ক সংকেত জারি রয়েছে। নিম্নচাপটি ওডিশা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরো উত্তরদিকে অগ্রসর হয়েছে। আরো উত্তর ও উত্তর পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে রোববার নাগাদ এটি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।