রায়হান কবির, স্বদেশ নিউজ২৪.কম: জায়েদ খান, নায়ক নয় অভিনেতা হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। গত দশ বছর ধরে বাংলা সিনেমায় নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আর সেই সময়টায় কতটা কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়েছেন তা তিনি নিজেই জানেন। তখন বেশ কিছু ছবিতে কাজ করলেও আশানুরূপ সাড়া পাননি। তবে ১৫ ডিসেম্বর সারা দেশের ১৭৫ টি সিনেমা হলে মুক্তি পাবে জায়েদ খান অভিনীত ও মালেক আফসারী নির্মিত ‘অন্তর জ্বালা’ চলচ্চিত্রটি।
সিনেমাটি নিয়ে কথা প্রসঙ্গে জায়েদ খান বলেন, ‘এই ছবিটার সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি জড়িত। আমার দশ বছরের ক্যারিয়ারে আমি অনেক কষ্ট করেছি। এখনও করেই চলছি। তবে আমি আমার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই। মধ্যবিত্ত পরিবারের বেশির ভাগ ছেলেদেরেই স্বপ্ন থাকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে ভালো একটা চাকরি করার। বাবা-মায়ের ইচ্ছেগুলো পূরণ করার। কিন্তু সে সব চাকরির কথা আমি কখনও ভাবি নাই। একটা ছকে নিজেকে আটকাতে চাইনি। ছোটবেলা থেকেই সিনেমার পোকা ছিল মাথায়। কীভাবে নিজেকে সিনেমায় স্থির করা যায়।’
এবার একটু পেছন ফেরা যাক। মাথায় সিনেমার শুটিং দেখার পোকা। কিন্তু চাইলেই তো এফডিসিতে গিয়ে শুটিং দেখা যায় না। আর পরিচিতও কেউ নেই। যিনি জায়েদ খানকে শুটিং দেখার ব্যবস্থা করে দেবেন। বহুদিন দিন প্রধান ফটকে গিয়ে অপেক্ষা করেছেন, ভেতরে ঢোকার। কিন্তু ভেতরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। একটা সময় গিয়ে তো দাঁড়োয়ানের মারও খেয়েছেন। তারপরও দমে যাননি। কারণ তার ইচ্ছে ছিল অদম্য। যে করেই হোক এফডিসির ভেতরে ঢুকে সিনেমার শুটিং দেখতেই হবে।
কারণ তিনি একথা মনে রেখেই পথ চলেন, ইচ্ছে থাকলে উপায় হবেই। কিন্তু বিপদ তো পিছু ছাড়ে না। একটা সময় গিয়ে বাসা থেকে জায়েদ খান’কে পকেট খরচ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হলো। কারণ হিসেবে পরিবারের লোকজন জানালো, সিনেমায় কাজ করা। নিশ্চিত থেকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতই যেখানে বেশি ঘোরাঘুরি করে। সেখানে গিয়ে লাভ কী! এ বিষয়ে জায়েদ বলেন, ‘সব বাধা পেরিয়ে আজ এখানে দাঁড়িয়ে আছি। ফেলে আসা অতীতের এ কথাগুলো মনে পড়লে আজও ভীষণ খারাপ লাগে।’
জায়েদ খান জানান, ‘অন্তর জ্বালা’ ছবির জন্য নিজেকে পুরোটাই পাল্টে ফেলেছিলেন তিনি। প্রতিদিন ছাদে রোদে বসে থাকতেন। কারণ চেহারায় যাতে তামাটে রং ধারণ করে। এমনকি টানা দুই দিন না খেয়ে ছিলেন এ অভিনেতা। আর এ ছবিটি করার জন্য নির্মাতা মালেক আফসারীর পিছনে চার বছর ধরে ঘুরেছেন। অবশেষে করতে পেরেছেন। এখন এই ছবিটি প্রদর্শনের মধ্য দিয়েই বন্ধ হয়ে যাওয়া ১৭টি সিনেমা হল নতুন করে চালু হচ্ছে।
এদিকে শুটিং শেষ হয়ে ছবিটি এখন দর্শক বিচারের অপেক্ষায়। জায়েদ খানও এখন দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য অধীর আগ্রহে নিয়ে সময় গুনছেন। কবে আসবে ১৫ ডিসেম্বর। তিনি বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি, নির্মাতা আমাকে যখন যেভাবে বলেছেন সেভাবে নিজেকে অভিনয়ের জায়গা থেকে ভেঙেছি। এ ছবিটার ফলাফল যদি খারাপ হয় আমি সিনেমাকে পেশা হিসেবে নিবো কী না তাও ভাবনার একটি বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু এ জীবনে চলচ্চিত্রে যতটা সময় দিয়েছি বাবা-মাকেও অতো সময় দিইনি।’
জায়েদ খান মনে করেন, বাংলা সিনেমার এখন যে সংকট চলছে তাতে করে সিনেমায় শিক্ষিত এবং সিনেমা সম্পর্কে জানেন, বোঝেন এমন মানুষদের আসতে হবে। তাহলেই এ পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে। আর না হলে যতদিন এমন পরিস্থিতি থাকবে ততদিন এভাবেই চলবে। চূড়ান্তভাবে হিসেব করতে গেলে ক্ষতির হিসাব বাড়তেই থাকবে। আর বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি চলচ্চিত্রের এই সংকটে কিছু করার জন্য। কিন্তু আমি শুধু একা করলে তো হবে না। অন্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’
‘অন্তর জ্বালা’তে তুলে ধরা হয়েছে নায়ক মান্নার এক অন্ধ ভক্তের কাহিনী। ওই অন্ধ ভক্তের চরিত্রে অভিনয় করেছেন জায়েদ খান। ‘অন্তর জ্বালা’কে ধরা হচ্ছে এ নায়কের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে। গত মার্চে ছবিটি আনকাট সেন্সর ছাড়পত্র লাভ করে। জায়েদ খান ছাড়াও এতে আরো অভিনয় করেছেন পরীমনি, বড়দা মিঠু,অমিত হাসানসহ আরও অনেকেই। ‘অন্তর জ্বালা’র দুটি গান ও ট্রেইলার ইতিমধ্যেই ইউটিউবে প্রকাশ হয়েছে। ছবিতে মান্না অভিনীত বেশ কিছু ছবির ফুটেজও দেখানো হবে।