গেল বছর টাইগার বোলারদের মান ও সক্ষমতা নিয়ে ছিল সমালোচনার ঝড়। তবে দারুণ বোলিং নৈপুণ্য দিয়ে নতুন বছর শুরু করলো তারা। গতকাল ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ১৭০ রানে গুঁড়িয়ে দেয় মাশারাফি বিন মুর্তজার দল। মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক মাশরাফি। আর ইনিংসের শুরুতেই বল তুলে দেন স্পিনার সাকিব আল হাসানের হাতে। তার আস্থার মান রাখেন সাকিব প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাত করে। আর সাকিবের এমন নৈপুণ্য জায়গা করে নেয় ক্রিকেটের রেকর্ড বইয়ে। বাকি সময়টা সানজামুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, মাশরাফি ও রুবেল হোসেনরা জিম্বাবুয়ের জন্য কঠিন করে তোলেন। ৫১ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে একাই টেনেছেন সিকান্দার রাজা ভাট। তার ৫২ রানে ভর করে কিছুটা মান রক্ষা হয় তাদের। ত্রিদেশীয় সিরিজের খেলা মাঠে গড়ানোর আগে কনকনে শীত আর কুয়াশা ছিল আতঙ্কের কারণ। তাই টাইগারদের একাদশে চার পেসারের জায়গা পাওয়ার কথা ছিল। কারণ শিশিরে ভিজে গেলে স্পিনারদের বল গ্রিপ করা কষ্টকর। তবে গতকাল সকালে মিরপুর শেরে বাংলা মাঠে কুয়াশার চাদর সরিয়ে সূর্যের আলো দেখা দেয়ায় বাঁ-হাতি স্পিনার সানজামুল ইসলামকে একাদশে সুযোগ দেয়া হয়। সাকিবের সঙ্গে দারুণ শুরু করেন এ স্পিনার। আর জিম্বাবুয়ের ইনিংসে শেষ ধস নামান দুই টাইগার পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ও রুবেল হোসেন।
শঙ্কা ছিল দুপুরে রোদ উঠলেও রাতে ফের কুয়াশা গ্রাস করে নিতে পারে। তাই মাশরাফি রাতে বল করার ঝুঁকি নেননি। জিম্বাবুয়েকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে থাকতে চেয়েছেন নিরাপদ স্থানে। শুরুতে বল তুলে দেয়া হয় সাকিবের হাতে। ম্যাচের প্রথম বলটিই ঠিকমতো খেলতে পারেননি হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। সিঙ্গেল নিয়ে স্থান পরিবর্তন করেন। পরের বলেই উইকেট। ওয়াইড বলে স্টাম্পড সলোমন মিরে। লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে দারুণ ক্ষিপ্রতায় স্টাম্প ভাঙেন কিপার মুশফিকুর রহীম। স্কোরকার্ড বলছে সলোমন কোনো বলই খেলেননি। এর পরও আউট হয়েছেন। তাই বলা যায় ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরু হলো বিরল এক আউটের রেকর্ড দিয়ে। মিরের আগে শূন্য বলে ০ রানে স্টাম্পড হওয়ার বাজে অভিজ্ঞতা আছে ওয়ানডেতে শুধু দু’জন ব্যাটসম্যানের। ২০০৯’র আয়ারল্যান্ড-কানাডার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে বেনোনিতে শেষ ব্যাটসম্যান হেনরি ওসিন্দে স্টাম্পড হয়েছিলেন অ্যালেক্স কুসাকের বলে। এছাড়াও গতকালের আগে সর্বশেষ এ ধরনের বিরল আউটের ঘটনা বাংলাদেশেই। ২০১৪ এশিয়া কাপে ফতুল্লায় ভারত বনাম শ্রীলঙ্কার ম্যাচে ভুবনেশ্বর কুমার একইভাবে স্টাম্পড হয়েছিলেন অজান্তা মেন্ডিসের বলে। এরপর সাকিবের দ্বিতীয় আঘাতটি আরো বড় হয়ে আসে জিম্বাবুয়ের জন্য। বাংলাদেশের দুই বাঁ-হাতি স্পিনারকে সামলাতেও বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান ক্রেইগ আরভিনের উইকেটে থাকা ছিল জিম্বাবুয়ের জন্য জরুরি। কিন্তু ম্যাচের তৃতীয় বলেই আরভিনকে ফেরান সাকিব। এরপর জিম্বাবুয়ে তাকিয়ে ছিল সবচেয়ে বড় ভরসা মাসাকাদজা ও আবার ক্রিকেটে ফেরা ব্রেন্ডন টেইলরের দিকে। কিছুটা আশা জাগিয়েও ছিলেন দু’জন। কিন্তু দু’জনই সাজঘরে ফেরেন বাজে শটে। অভিজ্ঞ মাসাকাদজাকে ফেরান দলের সবচয়ে অভিজ্ঞ বোলার মাশরাফি। তার অফ স্টাম্পের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন মাসাকাদজা।
টেইলরের সঙ্গে দলের হাল ধরেছিলেন সদ্য শেষ হওয়া বিপিএলে চিটাগাং ভাইকিংসের হয়ে দারুণ খেলা সিকান্দার রাজা। তবে বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান বেশি ভুগিয়েছেন সিকান্দার রাজাকে। তাকে খেলতেই পারছিলেন না রাজা, আউট হতে হতে বেঁচেছেন বারবার। কিন্তু রাজার আগে উইকেটের পেছনে মোস্তাফিজের বলে ক্যাচ আউট হন টেইলর। এরপর দুইবার জীবন পাওয়া ম্যালকম ওয়ালারকে ফেরান সানজামুল ইসলাম। তবে হাল ছাড়েননি রাজা। সঙ্গী পিটার মুরকে নিয়ে ইনিংসের একমাত্র ফিফটি রানের জুটি গড়েন তিনি। আর রাজার রান আউট হওয়ার মধ্য দিয়ে ভাঙে এ জুটি। দুটি করে চার ও ছক্কার পরও রাজার ৫২ রানে লেগেছে ৯৯ বল। এরপর আক্রমণে ফিরে সাকিবের তৃতীয় শিকার অধিনায়ক গ্রায়েম ক্রেমার। সাকিবের তৃতীয় ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করছিলেন তখন মুর। কিন্তু রুবেল দুই বলে মুর ও টেন্ডাই চিসোরোকে বোল্ড করে জিম্বাবুয়ের শেষ ভরসা গুঁড়িয়ে দেন। অভিষিক্ত মুজারাবানিকে ফিরিয়ে জিম্বাবুয়ের ইনিংসের ইতি টানেন মোস্তাফিজ। সাকিব ৩টি, তার সঙ্গে ২টি করে উইকেট নেন মোস্তাফিজ ও রুবেল। এছাড়াও সানজামুল ও মাশরাফি নেন একটি করে উইকেট।