২০১৬ থেকে ২০১৮ শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের দেয়ালে পিঠ ঠেকার অবস্থা। দেশে-বিদেশে ৯ ওয়ানডে সিরিজের মাত্র একটি জয় আর একটিতে ড্র। এর মধ্যে নিজ দেশের মাটিতেও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ হারের লজ্জাতো আছেই। গেল দুই বছরে ৪৬ ওয়ানডে ম্যাচে লঙ্কার জয় মাত্র ১১টি। দেশের মাটিতেও ১৮ ম্যাচ খেলে জিতেছে মাত্র ৪টিতে। ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপ জেতা দলটির এমন বাজে সময় হয়তো আর যায়নি। এমনই মুহূর্তে টাইগারদের ফেলে নিজ দেশ রক্ষার দায়িত্ব পেয়েছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তার সেই চ্যালেঞ্জ শুরু হচ্ছে বাংলাদেশেই ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। আজ মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে দুপুর ১২টায় টাইগারদের আরেক সাবেক কোচ হিথ স্ট্রিকের জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামবে লঙ্কানরা। জিম্বাবুয়ের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার হ্যামিল্টন মাসাকাদজা অবশ্য প্রতিপক্ষকে হালকা ভাবে নিচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা ভালো দল। ওদের হালকা ভাবে নেয়ার কিছুই নেই। তবে আমাদেরও চেষ্টা থাকবে ভালো খেলার।’ আর হাথুরুর লক্ষ্য একটাই, জয়। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই জিম্বাবুয়ের শক্তি নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। আমরা চাই এখানে নিজেদের সেরাটাই খেলতে। আমাদের দলের আরো উন্নতির সুযোগ আছে।’
৬ মাস আগে লঙ্কা দলের নেতৃত্ব থেকে পদত্যাগ করা অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে ফেরান হাথুরু। তার সামনেও এখন বড় চ্যালেঞ্জ দলকে জয়ের ধারাতে ফেরানো। এ ম্যাচে অবশ্য তার বড় অনুপ্রেরনা তার অনেক স্মৃতির মাঠ মিরপুর শেরেবাংলা। তিনি বলেন, ‘ভেন্যুটি আমাদের জন্য ভালো একটি মৃগয়া। বিশেষ করে ২০১৪ সালে আমরা যখন ওয়ার্ল্ড টি-২০ জিতলাম। কিন্তু সেটা আমাদের কাছে এখন শুধুই স্মৃতি। কাল আমাদের নতুন করে শুরু করতে হবে। আমাদের প্রতিপক্ষও ভিন্ন। এখানে আমাদের অসংখ্য প্রিয় স্মৃতি আছে। তেমনই প্রিয় আরো কিছু স্মৃতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছি আমরা।’
জিম্বাবুয়ের ভয়ংকর রূপ সম্পর্কে লঙ্কান অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলোর অভিজ্ঞতাটি তরতাজা। মাস ছয়েক আগে তিনি খুব ভালোভাবেই দেখেছেন সফরকারী হয়েও তাদের মাটিতে জিম্বাবুইয়ানরা কতটা দাপুটে খেলেছিল। লঙ্কানদের থোরাই তোয়াক্কা করে ৫ ম্যাচ সিরিজের ওয়ানডে সিরিজটি গ্রায়েম ক্রেমাররা ৩-২ এ জিতে নিয়েছিল। তাই ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে দলটির হার নিয়ে মোটেও আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন না ম্যাথুস। তিনি বলেন, ‘কাল আমাদের শুরুটা ভালো করতে হবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনি কখনই আত্মতুষ্টিতে ভুগতে পারেন না। তারা যে কোনো সময়ই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশের কাছ হেরে গেছে বলে আমাদের নির্ভার থাকার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের শুরুটা শক্তভাবে করতে চাই।’
শুধু তাই নয়, এ সিরিজে তার অন্যতম প্রতিপক্ষ বাংলাদেশকেও ছাড়িয়ে যেতে প্রতিজ্ঞ এ অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘টুর্নামেন্টে সেরা হওয়াই আমাদের লক্ষ্য। আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই। প্রতিটি ম্যাচেই আমরা উন্নতি করতে চাই। এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। একথা ঠিক, জয় গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু যখন আপনি ২০১৯ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এগুবেন তখন প্রতিটি কোণ থেকেই দেখতে হবে।’
অন্যদিকে আজ জিম্বাবুয়ের জন্য টুর্নামেন্টে ঘুরে দাঁড়ানোর মিশন। আর এমন মিশনে তাদের সামনে আছে দারুণ উপলক্ষও। আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শততম ওয়ানডে মাইলফলক ছুঁতে যাচ্ছে। এ স্টেডিয়ামের সঙ্গে জিম্বাবুয়ে দলের আছে ইতিহাসের অংশ হওয়ার গল্পও। এ মাঠে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। যদিও সেই ম্যাচে তারা বাজেভাবে হেরেছিল। তবে শততম ম্যাচে প্রতিপক্ষ লঙ্কাকে হারিয়ে জয়ের স্মৃতি দিয়ে আরো একটি ইতিহাসের অংশ হতে মুখিয়ে আছে তারা। শততম ম্যাচে তাই দর্শক হয়ে মাঠে বসে থাকতে চান না প্রথম ম্যাচে খেলা হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে পারব ভেবে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। প্রথম ম্যাচটি আমি এখানে খেলেছিলাম। তাই এটা আমার জন্য বিরাট ব্যাপার।’