বাণিজ্যমেলার পর্দা নামতে বাকি মাত্র চারদিন। এখন চলছে শেষ সময়ের কেনাকাটা। ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রেতারা। একাধিক স্টলের অধিকাংশ পণ্য ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। কাঙ্ক্ষিত পণ্য কিনতে না পেরে আক্ষেপও প্রকাশ করছেন অনেকে
গতকাল ছিল সপ্তাহের সরকারি ছুটির দিন। এবারের বাণিজ্যমেলার জন্য শেষ শুক্রবার। মাসব্যাপী এ মেলার আগের ছুটির দিনগুলোয় দর্শনার্থীর ছিল ভিড় চোখে পড়ার মতো। তবে গতকালকের ভিড় ছাড়িয়ে গেছে মেলার বাইরের আশপাশেও। মেলা প্রাঙ্গণে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। এদিন কেনাকাটা করতে অনেক স্টলে লাইন দিতেও দেখা গেছে। অনেক দর্শনার্থী মেলার ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রকাশ করেছেন অসন্তুষ্টি। স্টলের বাইরের রাস্তা আটকিয়েও অনেকে অবৈধভাবে মেলায় পণ্য বিক্রি করেছেন। যে কারণে সাধারণ ক্রেতাদের পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনায়। এসব অবৈধ দোকানের জন্য রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে সাধারণ মানুষকে কষ্ট পোহাতে হয়েছে। শাকিল এবং শফিক দুই বন্ধু মেলায় এসেছেন মিরপুর শেওড়াপাড়া থেকে। আগে থেকেই তাদের পরিকল্পনা ছিল শুক্রবারের সকালের দিকে মেলায় গিয়ে পছন্দের পণ্য কিনবেন। তারা এদিন সকালেই মেলায় প্রবেশ করেন। তবে কাঙ্ক্ষিত পণ্য আর কিনতে পারেননি। শাকিল বলেন, একটি ব্লেজার আর একটি প্যান্ট কেনার পরিকল্পনা ছিল আমার ‘ফিট অ্যালিজেন্স’ ব্রান্ড থেকে। কিন্তু মেলায় ১১টার মধ্যে প্রবেশ করেও আমার মাপের ব্লোজার শেষ হয়ে গেছে বলে জানান বিক্রয়কর্মীরা। শফিকেরও একই কথা। তিনি বলেন, আমি নিজের জন্য ব্লেজার কিনতে না পরলেও মায়ের জন্য একটি রাইস কুকার কিনেছি। মেলায় বেশি সময় থাকতে পারিনি। মেলায় এত ভিড় যে শ্বাস নিতেই কষ্ট হচ্ছিল। তাই দ্রুত বের হয়ে গেছি। ফিট অ্যালিজেন্সের বিক্রয়কর্মী জাহিদ বলেন, আমরা মেলা উপলক্ষে প্রতি শুক্রবারে নতুন প্রোডাক্ট তুলি। সে হিসেবে এ শুক্রবারেও বেশকিছু ব্লেজার এনেছিলাম। এদিন অধিকাংশ ব্লেজার এক ঘণ্টার মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মারুফ আজাদ মেলায় এসেছেন ওয়াশিং মেশিন কিনতে। এ ক্রেতা জানান, ওয়ালটন থেকে একটি ওয়াশিং মেশিন তিনি কিনেছেন। শনিবারে তারা হোম ডেলিভারি দেবেন বলে জানিয়েছেন। মেলা উপলক্ষে ছাড়ের সঙ্গে হোম ডেলিভারির সুবিধা পেয়ে তিনি খুশি। বাণিজ্যমেলার ওয়ালটন প্যাভিলিয়নে দেখা যায় উৎসুক ক্রেতাদের ভিড়। ক্যাশ কাউন্টারেও রয়েছে দীর্ঘ লাইন। ক্রেতাদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে বিক্রয়কর্মীদের। বিক্রি বাড়ায় বিক্রেতাদের মধ্যে দেখা গেছে খুশির আমেজ। ওয়ালটন প্যাভিলিয়নের ম্যানেজার শফিকুল আলম বলেন, বাণিজ্যমেলার শুরু থেকেই আমাদের প্যাভিলিয়েনে বিক্রি ছিল ভাল। তবে ছুটির দিনে তা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আর গতকাল মেলার শেষ শুক্রবার হওয়ায় বিক্রি ছিল অনেক বেশি। আমরা দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে ডিসকাউন্টসহ সেবার মান বাড়িয়ে দিয়েছি বলে জানান তিনি।
মেলায় ভিড় লক্ষ্য করা যায় খাবারের স্টলেও। এসব খাবারের স্টলে বসার মতো জায়গা না পেয়ে অনেকের দাঁড়িয়ে খেতে দেখা গেছে। এদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছিল সার্বক্ষণিক নজরদারি। মেলা কর্তৃপক্ষ ছিল তৎপর। মেলা সচিব আবদুর রউফ বলেন, মেলার সার্বিক অবস্থা ভালো। শেষ শুক্রবারের দর্শনার্থীদের ভিড়ের কথা বিবেচনায় নিয়ে মেলাজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মেলার সময় বৃদ্ধি করা হবে কি না সে বিষয়ে মেলা সচিব বলেন, মেলার সময় ৫ দিন বৃদ্ধি করার জন্য মেলার স্টল মালিকদের পক্ষ থেকে একটি আবেদন আমাদের কাছে এসেছে। এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ মেলা কমিটির সভাপতি। এটি তার সভাপতিত্বে আগামী দু-একদিনের মধ্যে মিটিংয়ে উঠবে। তখন সিদ্ধান্ত হবে মেলার সময় বাড়বে কি না।