দক্ষিণ কোরিয়ার বৃদ্ধ রোগীদের একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৪১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অর্ধশতাধিক মানুষ। শুক্রবার সকালে দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মির্যাং শহরের সেজং হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় হাসপাতাল ভবন ও সংলগ্ন নার্সিং হোমে প্রায় ২০০ জন দগ্ধ হয়। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
উদ্ধারকর্মীরা বলেছেন, নিহতরা তীব্র ধোঁয়ায় শ্বাসরোধ হয়ে মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে ডাক্তার, নার্স ও সহকারী নার্সও রয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, কমপক্ষে ৩৯ জন নিহত হয়েছে। তবে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, অগ্নিকাণ্ডে ৪১ জন নিহত হয়েছে। এটি বয়োবৃদ্ধ রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সেখানকার বেশির ভাগ রোগী এতই বয়স্ক বা অসুস্থ যে, কারো সাহায্য ছাড়া তাদের পক্ষে হাসপাতাল ত্যাগ করা সম্ভব না। অগ্নিকাণ্ডের সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জ্যাং ইয়ং জ্য বলেন, নার্স যখন অগ্নিকাণ্ডের খবর জানিয়ে চিৎকার করে সবাইকে হাসপাতাল ত্যাগ করতে বলছিলেন, তখন তিনি দ্বিতীয় তলায় ছিলেন। সেখানে এতই ধোঁয়া ছিল যে তিনি কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না। কক্ষগুলো ধোয়ায় পরিপূর্ণ হয়ে গেলে ভয়ে সবাই ছুটছিল। এ সময় অনেকেই পদপিষ্ট হন। সৌভাগ্যক্রমে তিনি জানালা দিয়ে বের হতে সক্ষম হন। পরে ফায়ার সার্ভিসের দেয়া মই বেয়ে তিনি নিরাপদে হাসপাতাল ভবন ত্যাগ করেন। তিনি বলেন, সেখানে অনেক বয়স্ক রোগী ছিল। তারা যদি আসলেই হাসপাতাল ত্যাগ করতে পারেন, তবে তা হবে বিস্ময়কর। ফায়ার সার্ভিসের প্রধান চই ম্যান ওঁ বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো জানা যায়নি। প্রচলিত আইন অনুযায়ী ভবনটিতে অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। তিনি বলেন, স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে সাতটায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় তিন ঘণ্টা লেগে যায়। হাসপাতাল সংলগ্ন নার্সিং হোম থেকে ৯৪ জনকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। চই ম্যান হতাহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, উদ্ধার করতে না পারা প্রত্যেক রোগীই অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়েছে। যখন আমাদের প্রথম দলটি ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, তখন আগুন পুরো ভবনে এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল যে তারা সেখানে ঢুকতে পারছিলেন না। ভবনটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না বলে স্বীকার করেছেন হাসপাতালের পরিচালক সন গিয়ং চিয়ল। আগামী জুন থেকে দেশটিতে অগ্নিনির্বাপণের বিষয়ে নতুন নীতিমালা কার্যকর হতে যাচ্ছে। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, আগামী সপ্তাহে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা ছিল কর্তৃপক্ষের। পরিচালক বলেন, জরুরি বিভাগে দুইটি এয়ার কন্ডিশনার ছিল। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইলেক্ট্রিক শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি বৈঠকে বসেন প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন। এর আগে গত মাসে দেশটির ‘জেকোন’ শহরের একটি ব্যায়ামাগারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৯ জন নিহত হন। উল্লেখ্য, কয়েক সপ্তাহ পরেই দেশটিতে শীতকালীন অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এতে অংশ নিতে হাজার হাজার অ্যাথলেট ও দর্শক দেশটিতে ভ্রমণ করবেন।