আরজে রাফি সম্পাদনায় , স্বদেশ নিউজঃ
কুয়েত থেকে জোয়ানা ডেমাফেলিসের মৃতদেহটা এলো একটি কফিনে করে। বছর চারেক আগে তিনি ফিলিপাইন্স থেকে হাউজ মেইডের চাকরি নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন কুয়েতে। কিন্তু সেই জলজ্যান্ত জোয়ানার মৃতদেহ মিলল ফ্রিজে বরফ জমাট অবস্থায়। অভিযোগ উঠেছে মালিকের বিরুদ্ধে।
জোয়ানার বোন জেসিকা দু চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ছুটলেন ম্যানিলায়, যেখানে পৌঁছেছে বোনের মৃতদেহ। ২৯ বছর বয়সী এই গৃহ পরিচারিকার ভাগ্য যে এতটা নির্মম তা কি জানা ছিল কারো?
গত সপ্তাহে জোয়ানার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায় ফ্রিজে। এ ঘটনার পর ফিলিপাইন্সের প্রেসিডেন্ট রড্রিও দুয়ের্তে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। প্রতিজ্ঞা করেছেন, কুয়েতে তার দেশের যে মানুষগুলো নির্যাতিত হচ্ছেন তাদের ফিরিয়ে আনতে তিনি ‘শয়তানের কাছে আত্মা বিক্রি করবেন’।
আড়াই লাখের বেশি ফিলিপিনো এই গাল্ফ দেশটিতে কর্মরত আছেন। এদের মধ্যে অন্তত ৬০ শতাংশ বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে কাজ করেন। যা আয় করেন তা দিয়ে চলেন এবং দেশে পাঠান।
ফিলিপাইন্সের আইল্যান্ড অব পানাইয়ের ছোট একটি শহর সারা। সেখানে বসে জোয়ানের মা ইভা সংবাদমাধ্যমকে জানান, কিছু পয়সা কামাতেই বিদেশে গিয়েছিল মেয়েটি। আমি ওকে বলেছিলাম, আমাদের ছেড়ে এত দূরে যেয়ো না। কিন্তু সে বলতো, মা, আমি ভবিষ্যতটা ভালো করে ফেলবো।
দরিদ্র পরিবার তাদের। নয় ভাইবোনের একজন তিনি। পরিবারটাকে দারিদ্রতার সীমা থেকে ওঠানোর চিন্তা ছিল তার মাথায়। কুয়েতে এই চাকরি থেকে যে বেতন পাওয়ার কথা ছিল, তা দিয়ে হয়তো তারা একটু ভালো থাকতে পারতেন। ছোট বোনকে স্কুলে পড়ানোর চিন্তাও করেছিলেন জোয়ানা। ২০১৩ সালে টাইফুন হালইয়ানের আঘাতে তাদের সর্বস্ব চলে যায়। এখন অবস্থা শোচনীয়।
হাই স্কুল শেষ করে চাকরি খুঁজছিলেন জোয়ানা। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ম্যানিলায় একই ধরনের কাজ নিয়েছিলেন। সেখানে অনেকেই তাকে বলেন যে, দেশের বাইরে এ কাজ করে আরো বেশি আয় করা যায়। ২০১৪-তে তিনি পাড়ি জমান কুয়েতে। প্রথম বছরে প্রতি তিন মাস অন্তর জোয়ানা টাকা পাঠাতেন বাড়িতে। কিন্তু হঠাৎ করেই সব বন্ধ। পরিবার ভেবেছিল, হয়তো সে তার ভবিষ্যতের জন্যে সঞ্চয় করছে। বাড়িতে সে শেষ ফোন দিয়েছিল ২০১৬ সালে।
ফিলিপোনো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জোয়ানের চাকরি দিয়েছিলেন এক লেবানিজ পুরুষ এবং সিরিয়ান নারী। এদেরকেই তার খুনের মূল হোতা হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে। কুয়েতের তদন্তকারীরা বলছেন, তারা সম্ভব কুয়েত থেকে পালিয়ে গেছেন।
জোয়ানের মৃত্যুর পর বিদেশে ফিলিপিনোদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নড়েচড়ে বসেছে দুয়ের্তে সরকার। ইতিমধ্যে কুয়েতে কর্মরত ফিলিপিনোদের দেশে ফেরার খরচ বহনের প্রস্তাব করেছে তারা। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে কুয়েতে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তাও করা হচ্ছে।
সূত্র : সিএনএন