ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের (ইউপিএ) চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী বলেছেন, গণতন্ত্র মানে বিক্ষোভ-বিতর্ক। গণতন্ত্র মানে একতরফা বলে যাওয়া নয়। গতকাল শুক্রবার ভারতের মুম্বাইয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের কড়া সমালোচনা করে কংগ্রেসের সাবেক সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী বলেন, মানুষ এখন ভয়ের আবহে বেঁচে আছে। বিরুদ্ধ স্বর থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতায় হাওয়া দেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মদদে নজরদারি বাহিনীকে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সমাজে সমাজে, মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করা হচ্ছে স্রেফ নির্বাচনে জেতার প্রয়োজনে। বিচারব্যবস্থা টলমল করছে। তথ্য জানার অধিকার আইন প্রণীত হয়েছিল স্বচ্ছতার স্বার্থে। সেই আইন আজ ঠান্ডা ঘরে পড়ে আছে। আধার কার্ডকে ব্যবহার করা হচ্ছে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে।
অনুষ্ঠানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিজেপি নেতা অটল বিহারি বাজপেয়ির প্রশংসা করেছেন সোনিয়া। তিনি বলেন, সংসদীয় কাজকর্মের প্রতি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অটল বিহারি বাজপেয়ি প্রবল শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। এ ব্যাপারে মোদির ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্ট সোনিয়া বলেন, ‘সংসদে আমাদের বলতেই যদি না দেওয়া হয়, তাহলে সংসদ চালু রাখার দরকার কী? সংসদ বন্ধ করে দিলেই হয়? আমাদের স্বাধীনতার গলা টিপে ধরা হচ্ছে। দমন-পীড়নকে আঁকড়ে ধরা হচ্ছে।’
চার বছর আগে একক দক্ষতায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নরেন্দ্র মোদি নিজে এবং তাঁর সরকার ও দল কংগ্রেসের যাবতীয় নীতির সমালোচনা করে আসছে। সে প্রসঙ্গে সোনিয়া বলেন, ২০১৪ সালের ২৬ মের আগে ভারত কি ‘ব্ল্যাক হোল’ ছিল? ভারতের যা কিছু অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও মহত্ত্ব-সবকিছুই কি গত চার বছরে অর্জিত হয়েছে? আগে কিছুই হয়নি? এই দাবি করার অর্থ কি দেশের জনগণের বুদ্ধি ও দক্ষতাকে অপমান করা নয়?
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব কেন নিতে চাননি, অনুষ্ঠানে সোনিয়া গান্ধী নিজেই তা ব্যাখ্যা করেন। বলেন, ‘আমার ক্ষমতা কতখানি, তা আমি জানতাম। কত দূর আমি যেতে পারি, কতটা কী করতে পারি, সে সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা আমার ছিল। আমি জানতাম, মনমোহন সিং অনেক ভালো প্রধানমন্ত্রী হবেন।’
আত্মবিশ্লেষণ করে সোনিয়া বলেন, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির বক্তব্যের সঙ্গেও তাঁর বিস্তর মিল। সোনিয়া বলেন, ‘আমি হিন্দিতে দুর্বল। জনসভায় গড়গড় করে ভাষণ দিতে পারি না। সেই জন্য লোকে আমাকে “লিডার” নয়, “রিডার” বলে। প্রণববাবুও ঠিক এভাবেই বলেছিলেন, হিন্দির দুর্বলতার জন্য তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রিত্বের যোগ্য বলে কখনো মনে করেননি।’
গত বছরের ডিসেম্বরে ছেলে রাহুল গান্ধীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার আগে টানা ১৯ বছর সোনিয়া গান্ধী কংগ্রেসের সভানেত্রী ছিলেন। তাঁর সময়েই কংগ্রেস লোকসভায় সবচেয়ে কম আসন পেয়েছে। বিজেপির কাছে ক্ষমতা হারিয়েছে। দলের এই হাল সম্পর্কে কী তাঁর উপলব্ধি-জানতে চাওয়া হলে সোনিয়া বলেন, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন বা যোগাযোগ বৃদ্ধির নতুন উপায় উদ্ভাবন করতে হবে। তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি, মানুষের কাছে কংগ্রেস নিজেদের ঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেনি। দলকে বাজারজাত করতে পারেনি। এটা করার নতুন ধরন খুঁজে বের করতে হবে। নিজেদের নীতি ও কর্মসূচি কীভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, তার খোঁজ করতে হবে।
নেহরু-গান্ধী পরিবারের বাইরে থেকে কংগ্রেসের প্রধান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিংকে নির্বাচিত করার উদাহরণ টানেন। বলেন, ভবিষ্যতে তাই যে কেউ কংগ্রেস সভাপতি হতে পারেন। তখন তাঁর প্রতি পাল্টা প্রশ্ন ছোড়া হয়, গান্ধীদের ছাড়া কংগ্রেস টিকবে তো? উত্তরটা তিনি কংগ্রেসের কর্মীদের কাছে খুঁজতে বলেন।