জীবনে নানান প্রয়োজনে কখনো কখনো রাত জাগতে হয়। তবে রাত জাগায় অভ্যস্ত হয়ে উঠলে তা ক্ষতিকর।
এর নেতিবাচক দিক খুবই বিস্ময়কর। এতে মুত্যু পর্যন্ত হতে পারে! মানুষের শরীরের প্রাকৃতিক ছন্দ হচ্ছে রাতে ঘুম আর দিনে কাজ।
কাজের চাপে প্রায়ই ছোটখাটো রোগের কারণে ডাক্তারের কাছে যাওযার সময় হয়ে ওঠে না। ফলে একদিন ওইসব রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করে।
মানবদেহে অসংখ্য রোগ আছে। এর মধ্যে মাথা ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, যৌন রোগ, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি বেশি হয় রাত জাগার কারণে।
বর্তমান যুগে কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাব ব্যবহারের ফলে মানুষের রাতে জেগে থাকার পরিমাণ বাড়ছে। ক্রমাগত মানুষ পরিণত হচ্ছে ‘নিশাচর পেঁচায়’।
এতে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি এবং ডেকে আনছে নানান রোগ!
রাত জেগে ওইসব প্রযুক্তি ব্যবহারে শরীরের ক্ষতি হয় দ্বিগুণ। এতে ঘুমের অনিয়ম, শরীর ও মনের ক্ষতি হয়। এছাড়া চোখের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে।
সাধারণত প্রতি মিনিটে ১৫ বার পলক ফেলা হয়। স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় এটি কমে অর্ধেক হয়ে যায়। ফলে চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
এটিকে সিভিএস বা কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম বলে। এখন প্রতি চারজনে একজন চোখের ওই সিন্ড্রোমে আক্রান্ত।
অনেকেই এখন রাত জেগে কাজ করায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে তারা এমন এক ঘুমের অভ্যাস তৈরি করে নিয়েছেন যা আগে ছিল না। এ কারণে তারা আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
তাই রাত না জেগে ঘুমানোই বুদ্ধিমানের কাজ। কাজের চাপ থাকলে তা সারতে হবে খুব ভোরে উঠে। এছাড়া রাতে স্মার্টফোন ও কম্পিউটার থেকে দূরে থাকেতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা ভিত্তিক জার্নাল ‘ক্রোনোবায়োলজি ইন্টারন্যাশনাল’-এর এক প্রবন্ধে দাবি করা হয়েছে, রাতজাগা অভ্যাস মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
‘নর্থওয়েস্টার্ন ফিনবার্গ স্কুল অফ মেডিসিন’-এর নিউরোলজির সহযোগী অধ্যাপক ক্রিস্টিন নাটসনসহ একদল গবেষক যুক্তরাজ্যের প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের মধ্যে সাড়ে ছয় বছর ধরে পরীক্ষা শেষে এ সিদ্ধান্তে উন্নীত হন।
মানুষের বয়স, লিঙ্গ, জাতিগত, ধূমপানের অবস্থা, ঘুমের সময় ইত্যাদি বিষয় আমলে এনে দেখা গেছে, স্বাভাবিক জীবনযাপন কারীদের তুলনায় রাতজাগা মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি শতকরা ১০ ভাগ বেশি।
ওই প্রবন্ধে আরো বলা হয়েছে, রাতে জেগে থাকা ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস, স্নায়ুবিক, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল ডিজঅর্ডার ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়।
মৃত্যুর নির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ না করলেও এতে বলা হয়েছে, কার্ডিওভাস্কুলার কেন্দ্রিক রোগ অবনতির দিকে যায় এবং প্রস্টেট ও স্তন ক্যানসারের মতো মারণব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
নাটসন বলেন, ‘আমাদের মনে হয়, নিশাচরদের একটা সমস্যা হলো, তারা সকালে ঘুমানোর চেষ্টা করে। তাদের এই অন্তর্গত শরীরবৃত্তীয় সময় ও বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে অসামঞ্জস্যতা স্বাস্থ্যের ওপর বিস্তর প্রভাব ফেলে।’
এই মৃত্যুর আশঙ্কা কমানোর একটা সমাধান দেয়ার চেষ্টা করেছেন গবেষকরা। তাদের মতে, দ্রুত ঘুমাতে যাওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুমানো উচিৎ।রাতে আলো বর্জন করা, এমনকি স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের আলোও।