বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা ফেরত গেলে মিয়ানমার সরকার তাদেরকে ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ডস (এনভিসি) ইস্যু করবে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে দেশে ফেরত যাওয়ার ৫ মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র সহ নিজেদেরকেই এ মর্মে ফরম-৪ পূরণ করে আবেদন করতে হবে। এনভিসি কার্ড ইস্যু করার ফলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের ভিতরে অবাধে চলাচল করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। দেশটির শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিষয়ক মন্ত্রী ইউ থেইন শয়ে বলেছেন, এনভিসি কার্ডধারীরা দেশের ভিতরে অবাধে চলাচল করতে পারবেন না। কিন্তু কফি আনান কমিশন রোহিঙ্গাদেরকে অবাধে চলাচল করার সুপারিশ করেছে।অন্যদিকে একটি রাজনৈতিক দল এনভিসি কার্ড ইস্যুর বিরোধিতা করে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। তাদের দাবি, এই কার্ড ইস্যু করলে রোহিঙ্গারা দেশের ভিতর অবাধে চলাচল করতে পারবেন। এ নিয়ে এক অস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে- আসলেই এনভিসি কার্ড ইস্যু এবং এ কার্ড যারা পাবেন তাদের অধিকারটা কি হবে। নিজ দেশে ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ডস (এনভিসি) ইস্যুর বিরোধিতা করেছে মিয়ানমারের ইউনিয়ন সলিডারিটি এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি)। যেসব রোহিঙ্গা রাখাইনে ফেরত যাবেন তাদেরকে এনভিসি ইস্যু করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এর বিরুদ্ধে সোমবার পাইনমানা সিটিতে বিক্ষোভ করে ইউএসডিপি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন মিয়ানমার টাইমস। ইউএসডিপির পাইমানা শহর শাখার চেয়ার উইন উইন থি বলেছেন, তারা এই বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে সরকারকে জানাতে চান যে, এনভিসি কার্ড ইস্যু করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। দেশে ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হবে এই কার্ড। যেসব শরণার্থী এসব কার্ড পাবেন তারা দেশের ভিতর দিয়ে অবাধে চলাচল করতে পারবেন। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত রাখাইন স্টেট এডভাইজরি কমিশন এমনই সুপারিশ করেছিল। উইন উইন থি বলেছেন, এনভিসি কার্ড ইস্যুর বিরুদ্ধে জনগণ ও ইউএসডিপি যেহেতু প্রতিবাদ করছে তাই এই প্রতিবাদকে অবশ্যই কফি আনান কমিশনের ৫৭টি সুপারিশের বিরুদ্ধে একটি কঠোর হুঁশিয়ারি হিসেবে দেখতে হবে। তিনি আরো বলেন, যাদের নাগরিকত্বের অধিকার আছে শুধু তাদেরকেই দেয়া হয় এনভিসি কার্ড। তাই আমরা সরকারের কাছে জানতে চাই তারা কি (রোহিঙ্গাদের) নাগরিকত্ব দিচ্ছে এবং দিলে কোন ধারায়। তবে ২৫ শে এপ্রিল মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিষয়ক মন্ত্রী ইউ থেইন শয়ে পরিষ্কার করে বলেছেন, যারা এনভিসি কার্ড পাবেন তাদেরকে দেশের ভিতরে অবাধে চলাচল করতে দেয়া হবে না। এই কার্ড যারা পেতে চান তাদেরকে ফরম-৪ পূরণ করতে হবে। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের অধীনে তারা নাগরিক অথবা বিদেশী বসবাসকারী হিসেবে অবাধে চলাচল করতে পারবে এবং তা পারবে শহর, জেলা, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে যাচাই করার পরে। যারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে চান তাদের নিজেদেরকেই আবেদন করতে হবে। মিয়ানমারে ফেরার ৫ মাসের মধ্যে সব রকম প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বা প্রমাণপত্র সহ তাদেরকে এই আবেদন করতে হবে। শ্রমমন্ত্রী আরো বলেন, এতে স্থানীয় জাতিগোষ্ঠীর লোকজনের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। এ জন্য অধিক সতর্ক হতে হবে। যেসব রাখাইন মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গিয়েছেন তাদেরকে এনভিসির মাধ্যমে আমরা সমান অধিকার অনুমোদন করতে চাই না। মঙ্গলবার এনভিসি কার্ড ইস্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ হওয়ার কথা রয়েছে লেউই এবং তাতকোন শহরে। বুধবার বিক্ষোভ হবে ওত্তারাথিরি শহর ও রাজধানী ন্যাপিডতে শয়ে নানথার স্টেডিয়ামে।