হিজড়াদের অধিকার নিয়ে যুগান্তকারী এক আইন পাস করেছে পাকিস্তান। পার্লামেন্টে পাস হওয়া ওই আইনে, হিজড়াদের মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হিজড়াদের অধিকার রক্ষায় প্রণীত এই আইনকে স্বাগত জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তারা এটিকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়েছে। এ খবর দিয়েছে আল-জাজিরা।খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ‘ট্রান্সজেন্ডার পার্সনস অ্যাক্ট’ উত্থাপন করা হয়। পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা এতে সমর্থন দেন। এই আইনে বলা হয়, পাকিস্তানের অধিবাসীরা স্বাধীনভাবে নিজেদের পুরুষ, নারী বা হিজড়া বলে চিহ্নিত করবে। দাপ্তরিকভাবে লিঙ্গ নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যক্তির মতামতকেই প্রাধান্য দেয়া হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রে ব্যক্তি নিজেই লিঙ্গ নির্ধারণ করবে। এক্ষেত্রে তাদের ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করা যাবে না।
মূলত এই আইনে পাকিস্তানে লিঙ্গ নির্ধারণের সর্বময় ক্ষমতা ব্যক্তির ওপর আরোপ করা হয়েছে। সাধারণত জন্মের পরই নাগরিকদের নাম নথিভুক্ত করা হয়। এসময় লিঙ্গও উল্লেখ করা হয়। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর কোনো ব্যক্তি যদি নিজের ভিন্ন লিঙ্গের পরিচয় সনাক্ত করে, তাহলে ব্যক্তির ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে জন্মসূত্রে নিবন্ধিত লিঙ্গ পরিচয় বিবেচনা করা হবে না। পাকিস্তানে হিজড়াদের নিয়ে কাজ করা মানবাধিকার কর্মী বিন্দিয়া রানা বলেন, আমি ভেবেছিলাম, জীবনে এই আইন পাস হতে দেখব না। কিন্তু সৌভাগ্য যে, নিজেই পার্লামেন্টে হিজড়াদের নিয়ে আইন পাস হতে দেখলাম। এই বিল পাস করানোর ক্ষেত্রে আমরা ৪০-৫০ বছর বয়সী হিজড়াদের জন্য কাজ করিনি। বরং আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাজ করেছি, যারা পাকিস্তানে হিজড়া হয়ে জন্ম নেবে।
পাকিস্তানের আইনি সংস্থা ট্রান্স অ্যাকশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে কমপক্ষে ৫ লাখ হিজড়া রয়েছে। তবে ২০১৭ সালের আদমশুমারিতে পাকিস্তানের মোট হিজড়ার সংখ্যা উল্লেখ করা হয় মাত্র ১০ হাজার ৪১৮ জন। আদমশুমারির এই তথ্যের বিষয়ে তীব্র আপত্তি তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। সাধারণত সেখানকার হিজড়ারা জীবিকা নির্বাহের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি, নৃত্য বা যৌনবৃত্তির আশ্রয় নেয়। সভ্য সমাজ তাদের ওপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাখে। এছাড়া, পাকিস্তানে হিজড়াদের অধিকার নিয়ে কাজ করা কয়েকটি সংগঠনও হামলার শিকার হয়েছে। নতুন পাস হওয়া আইনে হিজড়াদের এমন দুর্দশার অবসান হতে চলেছে।