টেস্ট ও ওয়ানডেতে বাংলাদেশ আফগানিস্তানের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু সদ্য আইসিসির টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া আফগানিস্তানের তুলনায় টি-টোয়েন্টি ফরমেটে টাইগাররা পিছিয়ে অনেকটাই। আইসিসির র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান যেখানে ১০ সেখানে আফগানরা এগিয়ে আছে দুই ধাপ। তাই হারলেই আরো বাড়বে ব্যবধান। আর র্যাঙ্কিংয়ের ভাবনা থেকেই দল গঠনে কোনো ঝুঁকি নেয়নি বাংলাদেশ দলের নির্বাচকরা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তারা গতকাল ঘোষণা করেছেন শক্তিশালী দল।এ দলে জায়গা হয়নি ফর্মের বাইরে থাকা ও সামান্যতম ইনজুরি আক্রান্তদেরও। অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে থাকা দলটির বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে টাইগারদের দলে নেই কোনো নতুন মুখও। দলে ফেরানো হয়েছে পরীক্ষিত তরুণ তারকা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে গতকাল ১৫ সদস্যের দল নিয়ে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলেন, ‘এই জায়গাতে আমরা ওই (নতুন খেলোয়াড়) চিন্তা-ভাবনায় যাইনি। কারণ প্রতিটি সিরিজ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। টি-টোয়েন্টিতে আমরা র্যাঙ্কিংয়ে অনেকটা পিছিয়ে আছি। এ কারণেই আমাদের সেরা দলটা পাঠানোর চিন্তা-ভাবনা করেছি। সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরও আছে। ওখানেও টি-টোয়েন্টি আছে। চেষ্টা করেছি আমাদের সম্ভাব্য সেরা দলটা গঠন করতে।’
আগের দল থেকে বাদ পড়েছেন পেসার তাসকিন আহমেদ ও ওপেনিং ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস। তবে নিদাহাস ট্রফিতে ব্যাট হাতে দারুণ পারফর্ম করা লিটন কুমার দাসকে রাখা হয়েছে দলে। আছেন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের মতো অভিজ্ঞরা। তরুণদের মধ্যে সাব্বির রহমান ছাড়াও সুযোগ দেয়া হয়েছে সৌম্য সরকারকে। মূলত সফলদেরই রাখা হয়েছে দলে। দীর্ঘদিন ধরেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে একটি দল হয়ে উঠতে পারছিল না বাংলাদেশ। নিদাহাস ট্রফিতে সাফল্যের (রানার্সআপ) পর টি-টোয়েন্টি দলের একটি ছায়া দেখতে পাচ্ছেন মিনহাজুল। ঘুরেফিরে এই দলটাই টি-টোয়েন্টি খেলবে সে ইঙ্গিতও দিয়ে রাখলেন প্রধান নির্বাচক। তিনি বলেন, ‘নিদাহাস ট্রফির পর টি-টোয়েন্টি দলটা আমরা অনেকটাই পেয়ে গেছি। কিছুদিন আগেও এ ব্যাপারে আমরা পিছিয়ে ছিলাম। এই ফরম্যাটে বুঝতে পেরেছি কোথায় আমাদের শক্তির জায়গা আর কোথায় দুর্বলতা। যে কারণে খুব বেশি পরিবর্তনে যাইনি।’
অন্যদিকে তরুণ পেসার তাসকিনের বাদ পড়ার কারণ শুধু ইনজুরি নয় বলেই জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক। পিঠের চোটে পড়া তাসকিন নিজেই জানিয়েছিলেন, তিনি শতভাগ ফিট নন। মিনহাজুল আবেদিন বলেন, ‘চোট, পারফরম্যান্স দুই-ই তাসকিনকে বাদ দেয়ার পেছনের কারণ। সে নিদাহাস ট্রফিতে গিয়েই চোটে পড়েছিল। তবে চোটটা বেশ আগের। চোট থেকে সেরে ওঠার চেষ্টা করছে তাসকিন। আমাদের বিশ্বাস হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের আগে সেরে উঠবে।’ তবে চোটে থাকলেও এখন সুস্থ মেহেদী হাসান মিরাজকে রাখা হয়েছে দলে। অন্যদিকে দলে সৌম্যও ফর্মে ছিলেন না। এ ওপেনার পাঁচ ম্যাচে করেন মাত্র ৫০ রান। এমন পারফরম্যান্স করেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে সুযোগ দেয়া নিয়ে প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘এ ব্যাপারে (সৌম্য) আমাদেরও প্রশ্ন ছিল। টি-টোয়েন্টিতে আমরা যতগুলো ক্রিকেটার নিয়ে চিন্তা করি, তার (সৌম্য) কথাটা সবার আগে চলে আসে। বিষয়টি নিয়ে আমরা অধিনায়ক ও কোচের সঙ্গেও আলোচনা করেছি। তারা সৌম্যর ব্যাপারে ইতিবাচক ছিল।’ এছাড়াও মুশফিকুর রহীম ও লিটন দাস দলে থাকাতে জায়গা হয়নি আরেক উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নূরুল হাসান সোহানের। অবশ্য এ সিরিজে তাকে না রাখলেও সোহানকে নিয়ে অন্য চিন্তা আছে নির্বাচকদের।
এছাড়াও মোসাদ্দেক সবশেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন গত বছরের এপ্রিলে, শ্রীলঙ্কা সফরে। তাকে দলে টি-টোয়েন্টি দলে ফেরানোর বিষয়েও ব্যাখ্যা তুলে ধরেন প্রধান নির্বাচক। তিনি বলেন, ‘অলরাউন্ডারের চিন্তা থেকেই মোসাদ্দেককে সুযোগ দেয়া হয়েছে। কারণ মিরাজের ফিটনেস নিয়ে কিছুটা সন্দেহ আছে আমাদের। সে শতভাগ ফিট নয়। ধীরে ধীরে তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। সেজন্য মিরাজের ব্যাকআপ হিসেবে মোসাদ্দেক হোসেনকে সুযোগ দেয়া হয়েছে।’
এছাড়াও সাকিব আল হাসানের সঙ্গে স্পিনে দলের ভরসা হয়ে আছেন নাজমুল ইসলাম অপু। পেস আক্রমণে অভিজ্ঞ রুবেল হোসেনের সঙ্গে আছেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়াও পেস আক্রমণে ব্যাকআপ হিসেবে আছেন আবু জায়েদ রাহী ও আবু হায়দার রনি। এবারো দলের সঙ্গে আছেন ব্যাটসম্যান আরিফুল হক। শেষ দুটি সিরিজে দলে থাকলেও ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ২টি।
বাংলাদেশ দল
সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (সহ-অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, আবু হায়দার রনি, রুবেল হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন, আবু জায়েদ রাহি, নাজমুল ইসলাম অপু ও আরিফুল হক।