রোহিঙ্গা ইস্যুতে আইসিসিতে মত পাঠাতে দ্বিধায় বাংলাদেশ

 

  • রোহিঙ্গা নির্যাতনের তদন্ত
  • তদন্ত শুরুর জন্য ২০ জুন আইসিসি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করবে।
  • ১১ জুনের মধ্যে বাংলাদেশের পর্যবেক্ষণ চায় আইসিসি।

রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতার অভিযোগের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) অভিমত পাঠাতে বাংলাদেশ দ্বিধায় রয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে এ সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান হবে নাকি আন্তর্জাতিক চাপে রেখে এর সুরাহা হবে, এ নিয়ে সরকারের মধ্যে একাধিক মত রয়েছে।
আইসিসি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ভয়াবহ নৃশংসতার ব্যাপারে তদন্ত করার কথা ভাবছে। তাই তদন্ত শুরুর আগে বাংলাদেশের অভিমত জানতে চেয়েছে আইসিসি। চলতি মাসের ৭ তারিখ আইসিসির প্রাক্‌-বিচারিক শুনানিতে তদন্তের বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে অভিমত চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর বাংলাদেশকে এ নিয়ে আগামী ১১ জুনের মধ্যে গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে অভিমত পাঠাতে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানায় আইসিসি।
শুরুতে এ বিষয়ে অভিমত পাঠাতে আগ্রহী ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু চীন ও জাপান দ্বিপক্ষীয়ভাবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জোর দেওয়ায় আইসিসিতে পর্যবেক্ষণ পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ দ্বিধায় পড়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
গত আগস্টের রোহিঙ্গা ঢলের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এ সমস্যার দ্বিপক্ষীয় সমাধানের কথা কোনো রাখঢাক না করেই বলছে চীন। রোহিঙ্গা সমস্যাকে আন্তর্জাতিকীকরণ না করতে চীন বারবার বলেছে। চীনের পর ইদানীং জাপানও একই পথে। দেশটি বলছে, বাংলাদেশকে এ সমস্যা মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধানে মনোযোগী হতে হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, মিয়ানমার সফর শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় এসেছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া-বিষয়ক বিশেষ দূত সান গুয়োশিয়াং। গত মঙ্গলবার তিনি নেপিডোতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। চীনের বিশেষ দূত ঢাকা সফরে সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। চলতি বছর এ নিয়ে তিনি তৃতীয়বারের মতো ঢাকায় এলেন।
টোকিওর কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, জাপানও রোহিঙ্গা সমস্যা দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধানের জন্য বাংলাদেশকে বলেছে। গত সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর টোকিও সফরের সময় মিয়ানমারকে নিয়ে সমস্যা সমাধানের বিষয়টিতে জাপান জোর দিয়েছে।
আইসিসিতে অভিমত পাঠানোর বিষয়ে গত বুধবার জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের জবাব আপাতত নেই। আমরা দেখছি, কী করা যায়।’
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সরকারের একাংশ মনে করে, আন্তর্জাতিক পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে মিয়ানমারের ওপর অব্যাহত চাপ দেওয়ার পরিবর্তে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয়ভাবে এ সমস্যার সমাধান করা উচিত। আবার আরেক অংশের মত হচ্ছে, রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বজায় রেখে বাংলাদেশকে পদক্ষেপ নিতে হবে। আইসিসি বাংলাদেশের মতামতের ব্যাপারে যে অনুরোধ জানিয়েছে, তাতে ইতিবাচক সাড়া দেওয়া উচিত।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান গতকাল এই প্রতিবেদককে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগে মাঠপর্যায়ে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। তাই এ সমস্যা সুরাহার জন্য আন্তর্জাতিক পক্ষকে নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগকে সক্রিয় করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *