ইতালি সাংবিধানিক সংকটে পড়েছে। গত মাসে হয়ে যাওয়া নির্বাচনের পর দেশটিতে এখন পর্যন্ত কার্যত কোনো সরকার নেই। এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন লোকরঞ্জনবাদী দুই দলের পছন্দের হবু প্রধানমন্ত্রী জুজেপ্পে কনদে। কারণ, প্রেসিডেন্ট সেরজো মাত্তারেয়েল্লা অর্থমন্ত্রী হিসেবে কনদের পছন্দের সঙ্গে একমত হননি। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলো প্রেসিডেন্টের অভিশংসন দাবি করেছে।
গত ৪ মার্চ দেশটিতে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। দুই জনপ্রিয় দল ফাইভ স্টার নির্বাচনে ৩২ শতাংশ ও কট্টর ডানপন্থী লিগ পার্টি ১৮ শতাংশ ভোট পায়। তাই জোট সরকার গঠনের জন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়া বড় দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়। কিন্তু বারবার তা ব্যর্থ হয়। পরে অবশ্য তুলনামূলক বেশি ভোট পাওয়া দুই দল জোট সরকার গঠনে একমত হয়।
এ অবস্থায় গতকাল রোববার হবু প্রধানমন্ত্রী কনদে কেবিনেট সদস্য নিয়োগ নিয়ে প্রেসিডেন্ট সেরজো মাত্তারেয়েল্লার সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। কিন্তু বৈঠক শেষে তিনি পদত্যাগ করেন। কারণ, অর্থমন্ত্রী হিসেবে কনদের পছন্দের সঙ্গে একমত নন সেরজো। কনদে অর্থমন্ত্রী হিসেবে ৮১ বছরের সাবেক শিল্পমন্ত্রী পাওরো সাবোনাকে চেয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট সেরজো মাত্তারেয়েল্লা বলেন, তিনি কনদের সব প্রস্তাবের সঙ্গেই একমত। কিন্তু তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে পাওরো সাবোনাকে চান না। সাবোনা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইতালির প্রবেশকে ‘ঐতিহাসিক ভুল’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। সিএনএনের খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট বলেন, সাবোনাকে নিয়োগ দিলে তা বিনিয়োগকারীদের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়াবে এবং ইতালি সরকারের অনাদায়ি ঋণের জন্য ভয়ানক পরিণতি টেনে আনবে।
প্রেসিডেন্ট অস্থায়ী এই শূন্যতা পূরণের জন্য এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক অর্থনীতিবিদ কার্লো কুতারায়েল্লিকে ননপপুলিস্ট প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে ডেকে পাঠিয়েছেন।
দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর কনদে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার গঠন থেকে আমাকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’
মাত্তারেয়েল্লার এ সিদ্ধান্ত জনপ্রিয় দলগুলোর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ফাইভ স্টার দলের নেতা লুইজি দি মাইয়ো সংবিধানের ৯০ ধারায় প্রেসিডেন্টের অভিশংসন দাবি করেন। এই আইনের ধারায় পার্লামেন্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চাইতে পারে। যদি এর পক্ষে ভোট পড়ে, তখন সাংবিধানিক আদালত অভিশংসন হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেন। গতকাল রাতের এই বৈঠকের পর দি মাইয়ো বলেন, আজকে রাতের পর রাষ্ট্রের আইনের প্রতি বিশ্বাস রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সাবোনাকে প্রত্যাখ্যানের এ সিদ্ধান্তকে তিনি ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে দাবি করেছেন। ফেসবুক ভিডিও লাইভে তিনি বলেন, এটি প্রাতিষ্ঠানিক বিরোধ।
অন্যদিকে, লিগের নেতা মাত্তেও সালবিনি নতুন করে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। মধ্য ইতালিতে নিজের দলের সমর্থকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি এখনো গণতন্ত্রের মধ্যে থাকি, তাহলে একটা জিনিসই করার আছে আর তা হলো ইতালিবাসীকে তাদের কথা বলতে দিতে হবে।’
ইতালির আইন অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট কেবিনেট সদস্য নিয়োগ বাতিল করতে পারেন। কিন্তু তাঁর এই সিদ্ধান্ত বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। আগামী শরতে দেশটি আবারও নির্বাচন হতে পারে।