(স্বদেশ নিউজ ২৪.কম) অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এ সংগঠনগুলোর মধ্যে কয়েকটির আংশিক কমিটি থাকলেও বেশির ভাগেরই দীর্ঘদিন ধরে নেই কোনো কমিটি। আবার কয়েকটির কমিটি গঠন নিয়েও আছে বিতর্ক; এমনকি অর্থের বিনিময়ে পদ দেওয়ার অভিযোগও অহরহ।
এমন বাস্তবতায় ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি নতুন করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো ছাত্রদল, শ্রমিকদল (এই দুটি সহযোগী), যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল, ওলামা দল, কৃষক দল, জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)।
দলটির জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতা প্রিয়.কমকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ছাত্রদল ও শ্রমিক দলের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। রাজপথের আন্দোলন পরিচালনা ও নেতৃত্ব দিতে পারে বলে বিএনপির রাজনীতিতে ভাবা হয় এমন অঙ্গ সংগঠন হলো যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল। এ দুই সংগঠনেরই নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। এরপরও ‘সুপার ফাইভ’ কিংবা ‘সুপার সেভেন’ থেকে বের হতে পারেনি দুটি সংগঠনের নেতৃত্ব।
কমিটির মেয়াদ নেই কৃষক দল, তাঁতী দল, ওলামা দল, মৎসজীবী দলের। আংশিক কমিটি দেওয়া হয়েছে মহিলা দল, মুক্তিযোদ্ধা দল ও জাসাসের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার প্রায় দুই বছর পর ২০১৪ সালের ২০ এপ্রিল বিএনপির অন্যতম সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সপ্তম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় । অনেক হট্টগোল ও বিতর্কের পর কাউন্সিলের সাত দিন পর আনোয়ার হোসাইনকে সভাপতি ও নুরুল ইসলাম নাসিমকে সাধারণ সম্পাদক করে শ্রমিক দলের ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে যোগ্যদের স্থান না দিয়ে অর্থের বিনিময়ে পদ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন প্রিয়.কমকে বলেন, ‘শ্রমিক দল বিএনপির একটি সুশৃঙ্খল, সাংগঠনিক সহযোগী সংগঠন। দেশের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে শ্রমিক দল তার অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছে।
নেতৃত্বের জন্য প্রতিযোগিতা আছে, তবে অনেকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ কারণে এ প্রতিযোগিতাকে কোন্দলের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলে। সবচেয়ে বড় কথা, অঙ্গ সংগঠনগুলোর পুনর্গঠনের কাজ চলছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই শ্রমিক দলও যথাসময়ে পুনর্গঠন করা হবে।’
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রিয়.কমকে বলেন, ‘এখন রমজান মাস চলছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিও খুব একটা নেই। তাই এখনই উপযুক্ত সময় দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনগুলোর মেয়াদহীন কমিটির পুনর্গঠন করা। পুনর্গঠনের কাজও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। হয়তো স্বল্প সময়ে কেন্দ্র থেকে শুরু করে সারা দেশের প্রায় সকল মেয়াদহীন কমিটির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হয়ে যাবে।
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির যে আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত আছে, সময়ের ব্যবধানে সেই আন্দোলন কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন হবে। তবে এই মুহূর্তে বিএনপির পরবর্তী আন্দোলন কৌশল ও ধরন গণমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করাটার প্রয়োজনীয়তা মনে করছি না।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘শিগগিরই বিএনপির প্রধান অঙ্গ সংগঠনগুলোর পুনর্গঠন করা হচ্ছে। যদিও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাময়িক অনুপস্থিতিতে দল পুনর্গঠনের কাজ কিছুটা স্থিমিত হয়ে পড়েছিল।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তারেক রহমান দায়িত্ব নেওয়ার পর পুনরায় পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। শিগগিরই সকল মেয়াদহীন কমিটি পুর্নগঠনের কাজ শেষ করা হবে বলে আমরা আশাবাদী। একই সঙ্গে রাজনীতিতে পরীক্ষিত, ত্যাগী ও সাহসী নেতাদের দিয়েই সংগঠনগুলোর পুনর্গঠন করা হবে।’
১৯৯৮ সালের ১৬ মে সম্মেলনের মাধ্যমে মাহবুবুল আলম তারাকে সভাপতি ও শামসুজ্জামান দুদুকে সাধারণ সম্পাদক করে কৃষক দলের কমিটি গঠন করা হয়। ২০০১ সালে তারা বহিষ্কৃত হলে সিনিয়র সহ-সভাপতি মজিবুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। ২০০৮ সালে তিনি মারা যাওয়ার পরে আরেক সহ-সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সভাপতি করা হয়।
২০১৬ সালে বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলে মির্জা ফখরুল ইসলাম মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়ার পর ‘এক নেতার এক পদ’ নীতির কারণে কৃষক দল থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। যদিও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু প্রিয়.কমকে বলেন, ‘যেহেতু পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেহেতু কৃষক দলেরও পুনর্গঠন করা হবে। আর সেটা ঈদের আগেও হতে পারে, আবার ঈদের পরপরই হতে পারে।’