আমার কাছে মনে হয় শহরের চেয়ে গ্রামের ঈদ একেবারেই আলাদা। শহরের মানুষ যেন ঘুমের মধ্যেও ব্যস্ত থাকে। আর গ্রাম শান্ত। আমি ময়মনসিংহের ভালুকা থানার আংগারগারা গ্রামে বড় হয়েছি। তাই ঈদ নিয়ে অনেক স্মৃতি। সেই সময় যেন একটা নিয়মই তৈরি হয়ে গিয়েছিল, আমরা চাচাতো ভাইয়েরা মিলে ঈদের দিন মাঠের ধারে গিয়ে ডিপ টিউবওয়েলে লাইন ধরে গোসল করতাম। ঈদের বিকেলে আমরা দল বেঁধে রাস্তায় হাঁটতে বের হতাম। আরেকটি বিষয় ছিল, ঈদের পরের দিন আমরা অনেকে মিলে সাইকেলে চড়ে সখীপুরের একটি হলে সিনেমা দেখতে যেতাম। আমি চাচাতো ভাইয়ের সাইকেলের পেছনের সিটে বসতাম। ফিরতে রাত হতো। ফেরার পথে সাইকেলগুলোর সারিবদ্ধ আলো কী যে ভালো লাগত!
তবে ছোটবেলায় একটি ঈদের স্মৃতি বেশি মনে পড়ে। তখন আমি দ্বিতীয় অথবা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। ঈদের আগের দিন রাতে মেজ চাচার বাড়িতে ভিসিআরে সিনেমা দেখার আয়োজন হয়েছে। আমি ভিসিআর দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছি। আর বাড়িতে ফেরা হয়নি। চাচা আর আমাদের বাড়ির দূরত্ব এপাড়া-ওপাড়া। সকালে উঠে মেজ চাচা-চাচি বললেন, ‘বাসায় আর যাওয়ার দরকার নেই। এখান থেকেই ঈদের নামাজে যাও।’ বাসায় ফিরলেও মা-বাবার হাতে মার খাওয়া লাগতে পারে—এই ভয়ে চাচার কথায় রাজি হয়ে গেলাম। কিন্তু কী পরে ঈদের মাঠে যাব, চাচারাও যেন চিন্তায় পড়ে গেলেন। আলমারি থেকে হাতড়ে হাতড়ে একটি পাঞ্জাবি ও পাজামা বের করে দিলেন চাচি। বললেন, ‘এগুলো তোমার চাচার ছোটবেলার।’ কিন্তু দেখতে একেবারেই নতুন। এগুলো পরে মাঠে গেলাম। ঈদের মাঠ থেকে বাবা, চাচা ও ভাইদের সঙ্গে আবার মেজ চাচার বাড়িতে এলাম। কিন্তু সবাই আমাকে নিয়ে কেমন যেন হাসাহাসি করছিলেন। আমি আসল ঘটনা বুঝতে পারছিলাম না। পরে জানতে পারি, আমি যখন সকালে ঘুমিয়ে ছিলাম, তখন চাচা আমার জন্য পাঞ্জাবি ও পাজামা কিনে এনেছিলেন। অথচ তাঁরা আমাকে একবারও বলেননি। পরে এসব শুনে আমি বোকা হয়ে গিয়েছিলাম। আজ চাচা-চাচি বেঁচে নেই। কিন্তু সে স্মৃতি এখনো মধুর হয়ে আছে।