যারা বিয়ে করতে চান না তাদের জন্যে শঙ্কার খবর দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। যারা বিবাহিত তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া কিংবা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে মৃত্যুর সম্ভাবনা অবিবাহিতদের চেয়ে অনেক কম থাকে। এক বিশ্লেষণমূলক গবেষণাপত্রে এ তথ্য দেয়া হয়।
তাতে বলা হয়েছে, বিবাহিতদের সঙ্গে তুলনা করা হয় বিচ্ছেদপ্রাপ্ত, বিধবা কিংবা অবিবাহিতদের। দেখা গেছে, একাকী কিংবা অবিবাহিতদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৪২ শতাংশ বেশি থাকে। এ সংক্রান্ত অতীতের ৩৪টিরও বেশি সংখ্যক গবেষণাকর্ম বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা। প্রায় ২০ লাখ মানুষের তথ্য দেয়া ছিলো এসব গবেষণায়। শুধু হৃদরোগই নয়, দ্বিতীয় দলের মানুষদের করোনারি ডিজিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ১৬ শতাংশ বেশি থাকে।
যারা কখনো বিয়ে করেননি তাদের অন্যদের অপেক্ষা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৪৩ শতাংশ এবং স্ট্রোকে মৃত্যুর ঝুঁকি ৫৫ শতাংশ বেশি রয়েছে। ‘হার্ট’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে।
এ গবেষণা অবশ্য কোনো নিয়ন্ত্রিত পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়নি। এখানে উঠে আসেনি বিয়ে কীভাবে হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখে? তবে এমনিতেই সামাজিক বন্ধন এবং স্বাস্থ্যগত উপকারিতার ক্ষেত্রে বিয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে জানান ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব কিলের বিশেষজ্ঞা এবং প্রধান গবেষক ড. মামাস মামাস।
এর পেছনে অনেক সাধারণ কারণও উপকারী হয়ে ওঠে। যেমন, বলেন ড. মামাস, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের পর যে কেউ তার জরুরি ওষুধগুলো ঠিকমতো খাবেন। অন্তত সঙ্গী-সঙ্গিনীর চাপে পড়ে হলেও নিয়মিত তা খেতে হয়। এতে তার সুস্থতা ফিরে আসে। আসলে যারা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ তারা একে অপরের স্বাস্থ্যর যত্ন নিতে সহায়ক হয়ে ওঠেন।
তবে কেবলমাত্র বিয়েই হৃদরোগের হিসেব-নিকেশ ঠিক করে দেয় না। এর পেছনে বয়স, লিঙ্গ, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ধূমপান এবং ডায়াবেটিস অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
নতুনভাবে যে গবেষণাপত্রগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে সেগুলো প্রকাশিত হয় ১৯৬৩-২০১৫ সালের মধ্যে। ইউরোপ, স্ক্যান্ডিনেভিয়া, উত্তর আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার প্রায় ২০ লাখ মানুষের তথ্য মিলেছে গবেষণায় যাদের সবার বয়স ৪২-৭৭ বছরের মধ্যে।
গবেষণায় আরো বলা হয়, বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে করোনারি হার্ট ডিজিসের ঝুঁকি বাড়ে ৩৩ শতাংশ। এটা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আবার বিধবারা ১৬ শতাংশ বেশি স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকেন। তবে তাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়তে দেখা যায়নি।
গবেষকরা বলেন, তাই বলে বিয়ে না করলে যে হৃদরোগে ভুগতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে যেকোনো স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি এড়িয়ে চলা সম্ভব। তবে দৈহিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে দাম্পত্য জীবনের ভূমিকা আছে।
সূত্র: ডেকান ক্রনিকেল