দিনে তাঁর পাঁচ থেকে ছয়টি ইয়াবা বড়ি লাগবেই। এ জন্য দরকার কমপক্ষে ৯০০ টাকা। ইফতেখার হোসেন ওরফে আইমানের কোনো পেশা নেই। ইয়াবার টাকা জোগাড়ে তাই বেছে নিয়েছেন ছিনতাই। দুই বছরে ছিনতাই করেছেন দেড় শতাধিকের বেশি। কারাগারে গেছেন ছয়বার। জামিনে এসে আবার জড়িয়ে পড়েন ছিনতাই ও ইয়াবা সেবনে।
গত ৩০ মে রাতে নগরের কোতোয়ালি থানার দেওয়ান বাজার ব্রিজের পাশ থেকে ইফতেখারসহ তাঁর চার সহযোগীকে অস্ত্র-গুলি, ছুরিসহ গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় করা মামলায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে যান তিনি। এখনও কারাগারে ইফতেখার।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, নগরের দেওয়ান বাজার এলাকার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে ইফতেখার। দুই ভাই দুই বোনের মধে৵ ছোট। স্কুলমুখী হননি কোনোদিন। বড় ভাই ইফতেখার ইমন ২০১৬ সালের ২ মে ছুরিকাঘাতে নিহত হন। ২১ বছর বয়সী ইফতেখারের বিরুদ্ধে নগরের বাকলিয়া, চকবাজার ও কোতোয়ালি থানায় ছিনতাই ও অস্ত্র আইনে পাঁচটি মামলা রয়েছে।
পুলিশের ভাষ্য, বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ১৭ বছর বয়সে ইয়াবা আসক্ত হন ইফতেখার। প্রথমে বন্ধু-বান্ধব থেকে টাকা ধার করে ইয়াবা সেবন করতেন। পরে কারও কাছে টাকা না পেয়ে ছিনতাই শুরু করেন। গড়ে তোলেন ছয়জনের একটি দল।
শুধু ইফতেখার নয়, তার সহযোগীরাও ইয়াবা সেবন করেন। সহযোগীদের বয়স ২০ থেকে ২৫ এর মধ্যে। কারওরই লেখাপড়া নেই বললেই চলে। বর্তমানে ইফতেখারের সহযোগীরাও গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
নগরের দেওয়ান বাজার, দিদার মার্কেট, প্রবর্তক মোড়, প্যারেড কর্নার ও চকবাজার এলাকায় ছিনতাই করে ইফতেখারের দল। ৩১ মে আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের উপস্থিতিতে ইফতেখার প্রথম আলোকে বলেন, রিকশা কিংবা হেঁটে যাওয়ার সময় কেউ মোবাইল হাতে রাখলে কিংবা কথা বললে টান দিয়ে দ্রুত চলে যান। আর দিতে না চাইলে ছুরি মারার ভয় দেখান।
ইফতেখারের ঘাড়ে, হাতে ট্যাটো আঁকা। পরনে টি-শার্ট ও প্যান্ট। তিনি নিজেই বললেন, দুই বছরে দেড় শতাধিকের বেশি ছিনতাই করেছেন। প্রতিবার ভালো হওয়ার চেষ্টা করলেও হাতে কোনো কাজ না থাকায় এবং বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গের কারণে ইয়াবা ছাড়তে পারছেন না।
ছিনতাই করা মোবাইলগুলো নগরের রেয়াজউদ্দিন বাজারে একজনের কাছে কম দামে বিক্রি করেন। আর সেই টাকায় ইয়াবা কেনেন ইফতেখার।
এবার কারাগার থেকে মুক্তি পেলে কী করবেন সেই প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভালো হয়ে যাবেন, যদি কোনো কাজ পান।
নগরের দেওয়ান বাজার ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, এলাকায় প্রায়ই মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই হুট করে টান দিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু এসব ঘটনায় মামলা হয় না বললেই চলে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার আবু বক্কর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েন ইফতেখার। নগরের দেওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই করেন। গ্রেপ্তারের পর জামিনে এসে আবার জড়িয়ে পড়েন ছিনতাইয়ে।
ইফতেখারের অভিভাবক বলতে আছেন তাঁর বোনের জামাই মো. এনায়েতুল্লাহ। তাঁর বিরুদ্ধে ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।