থাইল্যান্ডে থাম লুয়াং গুহায় আটকে পড়া ফুটবল দলের কিশোরেরা তাদের মা-বাবাকে চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠি লিখেছেন তাদের সঙ্গে আটকে পড়া কোচও। ২৫ বছরের কোচ এক্কাপল চান্তাওয়াং এই কিশোরদের অভিভাবকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখেছেন।
বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, কিশোরদের পাঠানো ছোট ছোট চিরকুটে তারা ফ্রায়েড চিকেনসহ বিভিন্ন খাবারের আবদার জুড়েছে। একটিতে লেখা ছিল, ‘চিন্তা কোরো না…আমরা সবাই সবল আছি।’ আরেকটিতে লেখা ছিল, ‘কোচ আমাদের বেশি বাড়ির কাজ দেয়নি।’
কোচ এক্কাপল চান্তাওয়াং আটকে পড়া কিশোদের অভিভাবকদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘প্রিয় অভিভাবকেরা, আপনাদের সন্তানেরা সবাই ভালো আছে। উদ্ধারকারী দল আমাদের বেশ সহায়তা করছে। আপনাদের কথা দিচ্ছি, আমি তাদের সর্বোচ্চ যত্ন নেব। আপনাদের শুভকামনার জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনাদের কাছে অন্তর থেকে ক্ষমা চাইছি।’
এই গুহায় আটকে পড়া কিশোরদের সঙ্গে তাদের পরিবারের যোগাযোগ করিয়ে দিতে সেখানে ফোন লাইন স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। এরপর এই প্রথম পরিবারের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ হলো।
থাইল্যান্ডের দীর্ঘতম গুহার একটি থাম লুয়াং। গত ২৩ জুন বেড়াতে গিয়ে বন্যার কারণে সৃষ্ট প্লাবনে আটকা পড়ে ফুটবল দলটি। এর নয় দিন পর ২ জুলাই তাদের জীবিত থাকার খবর দেয় উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা।
দেশটিতে এখন বর্ষা মৌসুম চলছে। সাধারণত, মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত বর্ষা চলে। দেশটির নেভি সিল জানিয়েছে, গুহার প্রবেশমুখ থেকে কিশোরেরা চার কিলোমিটার ভেতরে আটকা পড়েছে। তারা যে চিত্র এঁকেছে, তাতে একটি অংশকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হচ্ছে। ওই অংশ বন্যার পানি, মাটি ও ধ্বংসস্তূপের জিনিসে ছেয়ে গেছে। গুহার প্রবেশমুখে পানির গভীরতা ৩৪ সেন্টিমিটারের মতো।
সেনা অঞ্চল-৩-এর ডেপুটি কমান্ডার মেজর জেনারেল চালংচাই চাইয়াকুম বলেছেন, আটকে পড়ারা যেখানে আছে, সেখানে যেতে ছয় ঘণ্টা আর ফিরতে পাঁচ ঘণ্টা লাগে।
তবে সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাইলেন ব্যাংককের দুর্যোগ মোকাবিলাবিষয়ক কর্মকর্তা খাও খিউপাকদি। তিনি বলেন, ‘পানি বের করে ফেলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ আর উদ্ধারকারী দলে থাকা মেজর জেনারেল বাঞ্চা দুরিয়াপান বলেন, কিশোরের দল কথাবার্তা বলছে, খাচ্ছে ও ঘুমাচ্ছে। শক্তি সঞ্চার করছে। তাদের উদ্ধার করা সহজ হবে।
গুহাটি যেখানে অবস্থিত, সেই চিয়াং রাইয়ের গভর্নর নারংসাক ওসোতানাক্রন গত বুধবার পর্যন্ত বলেছেন, তাদের উদ্ধারে কোনো ধরনের ঝুঁকি নেওয়া হবে না। বরং যত দিন প্রয়োজন, তত দিন প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধ সরবরাহ করা হবে। তবে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস শুনে তিনি সুর বদলেছেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি এই উদ্ধার অভিযানকে পানির বিরুদ্ধে লড়াই বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া নিয়েই আমাদের যত ভাবনা। বৃষ্টি শুরুর আগে আমাদের হাতে কত সময় আছে, সে হিসাবই কষছি আমরা।’
বর্তমানে গুহায় অক্সিজেনের পরিমাণ কমে এসেছে। সাধারণত সেখানে ২১ শতাংশ অক্সিজেন থাকে, এখন তা কমে ১৫ শতাংশে চলে এসেছে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গুহায় বাতাস চলাচলের পথ স্থাপন করা হয়েছে।
গতকাল গুহায় আটক ছেলেদের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে ফেরার পথে এক ডুবুরি মারা গেছেন। তিনি নৌবাহিনী অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ছিলেন।
বর্তমানে ডুবুরি, চিকিৎসাকর্মী, মনোবিদ ও থাই নেভি সিলের একটি দল আটকে পড়া ১৩ জনের সঙ্গে আছে। তারা প্রয়োজনীয় খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য জিনিস সঙ্গে নিয়ে গেছে। আটকে পড়াদের ডুবসাঁতারের মাধ্যমে, অন্য কোনো মুখ পাওয়া গেলে বা গর্ত খনন করে, নইলে বর্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে উদ্ধারের প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে এখন বর্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার পরিকল্পনাটি বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে সাঁতার না জানা কিশোরদের ডুবসাঁতারের মাধ্যমে উদ্ধার করার কাজটিও ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।