রাতে খাওয়া-দাওয়া করে সন্তানদের ঘুম পাড়ান। এরপর স্কুলছাত্রী সেজে বয়স্ক পুরুষদের সঙ্গে ইন্টারনেটে চ্যাট করেন চেলসি হান্টার (ছদ্মনাম)। উদ্দেশ্য শিশুদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে চাওয়া পুরুষদের খুঁজে বের করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া।
সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চেলসি বিবিসিকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
সেই সাক্ষাৎকারে অনলাইনে কাজের প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন ওই নারী। তিনি জানান, দুই সপ্তাহ আগে ৭৪ বছর বয়সী রফ কুতেইনেহ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে ১৪ বছর বয়সী কিশোরী সেজে অনলাইনে বন্ধুত্ব করেন তিনি। এ সময়ের মধ্যে রফ তার কাছে শতাধিক অশালীন মেসেজ পাঠান।
পরে কথা অনুযায়ী একটি রেল স্টেশনে ‘কিশোরী’র জন্য অপেক্ষা করেন রফ। কিন্তু তার কাছে গিয়ে হাজির হন ৩৫ বছর বয়সী চেলসি। এরপর কথাবার্তা বলে রফকে পুলিশের হাতে তুলে দেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের কেন্টের বাসিন্দা চেলসি হান্টার প্রায় এক বছর ধরে এমন দ্বৈত জীবনযাপন করছেন। দিনে সন্তানদের লালন-পালন আর ঘরের কাজ করেন। কিন্তু রাতেই পরিচয় বদলে অনলাইন জীবনে প্রবেশ করেন। আর হয়ে ওঠেন ১৪ বছর বয়সী ক্লো।
চেলসি হান্টার ও তার স্বামী ‘শ্যাডো হান্টার’ নামের একটি সংগঠনটির সদস্য। এ সংগঠনটির সদস্যরা কম বয়সী মেয়ে সেজে অনলাইনে অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করতে চাওয়া পুরুষদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে সুবিধামতো স্থানে নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এ সময় সংগ্রহ করা প্রমাণ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ এই সংগঠনটির কর্মপদ্ধতি পছন্দ করছে না।
চেলসি হান্টার বলেন, ‘অনলাইনে আপনি যতক্ষণ না পর্যন্ত ছদ্মবেশ নিচ্ছেন, ততক্ষণ আপনি জানতেও পারবেন না কত ধরণের যৌন শিকারি এখানে ওত পেতে রয়েছে।’
এসব ব্যক্তিদের বয়স ২০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে জানিয়ে চেলসি বলেন, ‘যারা পুলিশের কাছে ধরা পড়েন, তাদের পরিবারের জন্য খুবই লজ্জাজনক এক পরিস্থিতি তৈরি হয়। কারণ শুরুতেই পুলিশ তাদের বাসা থেকে ওই লোকদের মোবাইল ফোন, কম্পিউটারের মতো সব যোগাযোগের যন্ত্র জব্দ করে, যা ব্যক্তির পরিবারকেও অসম্মানজনক অবস্থায় ফেলে।’
২০১৭ সালের আগস্ট থেকে শ্যাডো হান্টারে যোগ দেওয়ার পর ৫০ জনেরও বেশি পুরুষের সঙ্গে কথা বলেছেন চেলসি। ওই পুরুষরা শিশুদের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করতে চেয়েছিলেন।
চেলসি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমরা কাউকে অনুরোধ পাঠাই না; তারা আমাদের সাথে বন্ধু হতে চায়। বন্ধু হওয়ার পরও আমরা শুরুতে তাদের কোনো মেসেজ পাঠাই না। প্রথমেই আমরা তাদেরকে আমাদের (ছদ্ম) বয়স জানাই এবং তাদের কাছে জানতে চাই, তারা এতে খুশি কি না।
নিয়ম অনুযায়ী আমরা স্বাভাবিকভাবেই চ্যাট করি তাদের সঙ্গে। তারাই আলোচনা যৌন সংক্রান্ত বিষয়ের দিকে নিয়ে যেতে থাকে এবং অধিকাংশ সময় দেখা করতে চায়। এটা তাদের সিদ্ধান্ত, আমরা কখনো উসকানি দিই না।’
বিভিন্ন সময় শ্যাডো হান্টারের কাজের এই প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সংস্থাগুলো। কিন্তু শ্যাডো হান্টার মনে করেন, যারা এভাবে শিশুদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে চায়, তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের সাহায্য প্রয়োজন ।
এমনটা মনে করেন না চেলসি। তার ভাষ্য, ‘এসব লোকজন একটি শিশুকে যে ধরনের মেসেজ পাঠায়, সেটি তার শৈশব ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। আমার মতে, এই ধরনের মানুষের বিরুদ্ধে পুলিশের যথেষ্ট কার্যক্রম নেই।
এই অপরাধের বিরুদ্ধে আমি যদি কোনো ভূমিকা রাখতে পারি, তাহলে আমি তাই করব; সেটি পুলিশের ভালো লাগুক আর না লাগুক।’