শ্রাবণের প্রবল বর্ষণে দিনভর বৃষ্টিতে নাজেহাল রাজধানীর মানুষ। বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানি। রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে নগরীর মানুষকে পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় গর্ত থাকায় ঘটছে দুর্ঘটনা। জমে থাকা বৃষ্টির পানির কারণে ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। আজ মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
ঢাকার মতিঝিল, পল্টন, বিজয়নগর, শান্তিনগর, আরামবাগ, মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, বিজয় সরণি, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, গ্রিন রোড, কাঁঠালবাগান, তেজতুরী বাজারসহ বিভিন্ন জায়গার প্রধান সড়কে পানি জমে থাকার কারণে এসব এলাকার বাসিন্দাদের পোহাতে হচ্ছে নানা রকম ভোগান্তি। পুরো নগরে দেখা গেছে তীব্র যানজট।
আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আরিফ হোসেন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, মৌসুমি বায়ুর কারণে আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও দমকা হাওয়াসহ ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাত হবে। ভারী বর্ষণে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে কোথাও কোথাও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, সকালে ঘর থেকে বের হয়েই দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে রাজধানীর অফিসগামী মানুষকে। সড়ক ও অলিগলিতে পানি জমে যাওয়ায় সড়কে দিনভরই বাস, সিএনজি, অটোরিকশা, রিকশা, ট্যাক্সিক্যাবের সংখ্যা দেখা গেছে খুবই কম। এতে অনেকেই সকালে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন বিপাকে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গণপরিবহন না পেয়ে দুর্ভোগ পেরিয়ে দেরিতে পৌঁছাতে হয় কর্মস্থলে। অনেককে আবার বৃষ্টিতে ভিজে হেঁটে ছুটতে দেখা গেছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, বেশিরভাগ সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে। ফলে ড্রেনেজ পাইপের মুখে ময়লা-আবর্জনা, মাটি ও ইট-সুড়কি জমে থাকায় বৃষ্টির পানি দ্রুত সরতে না পারায় এ জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অত্যন্ত বেহাল। ড্রেনগুলো সময়মতো পরিষ্কার না করা ও রাস্তাঘাট ঠিক না করায় সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের সড়কগুলো পানিতে সয়লাব হয়। এই সুযোগে নগরীর অলিগতিতে রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজিসহ বিভিন্ন ছোট ছোট পরিবহন চালকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, মৎস্য ভবন থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট হয়ে শাহবাগ শিশুপার্ক পর্যন্ত কয়েকশ গাড়ি ঠাঁই দাঁড়িয়ে। কখনও তা একটু এগিয়েই আবার থেমে যাচ্ছে।
এই রুটে চলাচলকারী বিহঙ্গ পরিবহনের চালক রুবেল হাসান জানান, একেকটি সিগন্যাল পার হতে আধাঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। প্রতিদিন মিরপুর থেকে সদরঘাট যেতে সাধারণত ২-৩ ঘণ্টা লাগে। কিন্তু আজ সদরঘাট থেকে শাহবাগ আসতেই লেগেছে প্রায় তিন ঘণ্টা। মিরপুর যে কখন যাব তা আল্লাই জানেন।
পাশেই অসুস্থ রোগী বহনকারী রিকশাওয়ালা রফিকউল্লাহ জানান, যানজটে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন নারী, শিশু ও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা। পুরান ঢাকা থেকে রোগী নিয়ে আসতে আধাঘণ্টার পথ আজ লেগেছে প্রায় দুই ঘণ্টা।
ব্যস্ত সড়কের পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতেও রিকশাযাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে দেখা গেছে। এসময় আটকে থাকা অনেক যাত্রীকে ঘুমাতেও দেখা যায়।
বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত নুসরাত জানান, একেতো বৃষ্টিতে গাড়ি স্বল্পতা। তার ওপর গাড়িতে উঠলেও কিছুটা পথ যেতে না যেতে গাড়ি জ্যামে আটকে থাকছে। রাস্তায় পানি। হেঁটে যাওয়ারও উপায় নেই।
দিলকুশার বেসরকারি ব্যাংকের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, উত্তরা থেকে বনানী হয়ে ফার্মগেট আসতেই তার ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে।
এদিকে নগরজুড়ে যানজটের কারণে বৃষ্টি ও পানি উপেক্ষা করে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে চলা মানুষের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি।
যাত্রাবাড়ী থেকে টঙ্গী চলাচলকারী বলাকা বাসের চালক মোহাম্মদ বেল্লাল জানান, যাত্রাবাড়ী থেকে গাড়ি ছেড়েছে সকাল ১০টায়। দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত বাসটি দাঁড়িয়েই থাকে মগবাজার মোড়ে।
দুপুর ২টায় বিজয় সরণি ক্রসিংয়ে দায়িত্বরত এক ট্র্যাফিক সার্জেন্ট জানান, চারদিকের রাস্তাই বন্ধ হয়ে আছে। কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। সকাল থেকেই চলছে এ অবস্থা। এতে নিজেরাও অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছেন।