লাউ পাতায় ইলিশ দিয়ে মাছের পাতুরি

: শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান:
: ৬ years ago

মাছের মধ্যে ইলিশ রাজা, রুই-কাতলা তাহার প্রজা। শাশুড়ি বৌমাকে উপদেশ দেন। পুঁই শাকে যদি দাও ইলিশের মাথা, ননদি কয় তার গুপ্ত যত কথা।

কিংবা, ‘যদি ইলিশের মাথা দিয়া রান্ধ কচুশাক, গোমড়া শ্বশুর আনন্দে হইবে সবাক। ইলশি মৎস বলে, আমার গায়ে বড় কাঁটা, আমারে মজায় শুধু বাংলার ডাঁটা।’

বাংলার মানুষের রসনার ইতিহাসে ইলিশ এক আবেগের নাম। আর তাই এই ইলিশকে নিয়ে আছে এমনই কতো প্রবাদ।

বাঙালি সংস্কৃতির সাথে ইলিশ ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। সকল বাঙ্গালিদের প্রিয় খাবারের তালিকা এই ইলিশ ছাড়া হয় না। আর এই ইলিশ রান্না যে র্সবস্তররে বাঙালরি মধ্যে এক উদযাপনের আনন্দ নিয়ে আসে, তা বোঝা যায় বুদ্ধদেব বসুর কবিতা ‘নদীস্বপ্ন’ থেকে এই উদ্ধৃতিটুকু পড়লে “ইলিশ কিনল? আঃ বেশ বেশ তুমি খুব ভালো, মাঝি

উনুন ধরাও ছোকানু দেখাবে রান্নার কারসাজি।

হ্যাঁ আজকে আপনাদেরকে জানাবো ইলিশের এমনি এক ভিন্ন রেসিপির কারসাজি। কম খরচে, পুষ্টিকর, স্বাস্থ্যসম্মত, ঝামেলাহীন,বিভিন্ন আঙ্গিকে তৈরি লাউ পাতায় ইলিশ মাছের পাতুরি।

উপকরণ: ইলিশ মাছ ৫ টুকরো, লাউ পাতা ২০/২৫ টি, সরিষা বাটা হাপ কাপ, রসুন ও পেঁয়াজ, আদা ও কাঁচামরিচ বাটার মিশ্রণ ৬ টেবিল চামচ এবং সরিষার তেল হাপ কাপের কম, লবণ পরিমাণ মতো।

প্রস্তুত প্রণালী:

সরিষা বাটা, রসুন-পেঁয়াজ, আদা ও কাঁচামরিচ বাটার মিশ্রণ, সরিষার তেল এবং পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে মাছের টুকরোগুলো ভালো করে মাখিয়ে নিন এভাবে দশ থেকে পনেরো মিনিট রেখে দেন।

একই ভাবে লাউ পাতাগুলো সরিষা বাটা, রসুন-পেঁয়াজ, আদা ও কাঁচামরিচ বাটার মিশ্রণ, সরিষার তেল এবং পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে মাখিয়ে রাখুন ১০ থেকে পনেরো মিনিট।

তারপর মাছগুলো ৫ থেকে ৪ বা ৩টি করে পাতা নিয়ে একটি একটি করে মাছের টুকরো দিয়ে পেঁচিয়ে নিন। এভাবে সবগুলো টুকরা পাতায় আলাদা আলাদা করে প্যাঁচান।

এবার পাতায় মোড়ানো মাছগুলো আপনার মাইক্রোওভেনে প্রথমে ৩ মিনিট দেন। এরপর মাছের পাতুরি উল্টে দিন। তারপর আরো ৩ মিনিট দেন এবং আবার উল্টে দেন এরপর আরো ২ মিনিট তাপ দিয়ে নামিয়ে নেন। এবার গরম গরম পরিবেশন করুন, ইলিশ মাছের পাতুরি গরম ভাতের সঙ্গে।

কিছু কথা: যাদের ওভেন নেই তারাও করতে পারেন ভাপে সিদ্ধ করে। এক্ষেত্রে আপনি একটি পাত্রে পানি দিয়ে তা গরম করুন এবং ওই পাত্রের মুখে একটি জালি ধরণের প্লাস্টিক বা স্টিলের একটি প্লেট দেন বা একটি মোটা কাপড় বেঁধে দেন।

তারপর পানি খুব ভালো গরম হলে এর ওপর পাতায় প্যাঁচানো মাছের টুকরোগুলো দিন। দশ থেকে ১২ মিনিট পর নামিয়ে নেন। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আগুনের তাপমাত্রা প্রথমে মাঝারি পরে আর একটু কমিয়ে দেবেন।

একটি কথা বলে রাখা ভালো যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এই পাতুরি তারাও খেতে পারেন কারণ এটি তেলে ভাজা হয় না। আর যারা ভাজা খাবার খেতে পছন্দ করেন তারা আবার এই পাতুরিকে ওভেনে না দিয়ে তেলে ভেজেও খেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কড়াইয়ে তেল দিয়ে প্রথমে মাঝারি আগুনে ২ থেকে ৩ মিনিট ভাজুন তারপর আগুন কমিয়ে আরো ৪ থেকে ৫ মিনিট ভাজুন।

আরেকটি কথা না বললেই নয়। শুধু লাউ পাতা নয়; কুমড়োপাতা, কাকরলপাতা, কচুপাতার মতো যে পাতাই খাওয়ার উপযোগী বা যে পাতা আপনি খেতে পছন্দ করুন, সেই পাতায় প্যাঁচিয়ে নিতে পারেন আপনার প্রিয় ইলিশ মাছ।