‘অপরাধী’র পর ‘বেইমান’

যে বয়সে মানুষের পড়াশোনায় হাতেখড়ি হয়, সে বয়সে গানে হাতেখড়ি হয়েছে। সংগীতশিল্পী আরমান আলিফের ভাষায় ‘গান ও পড়াশোনা একসঙ্গে শুরু করেছি আমি।’

ছড়া আর গান দুটোই মিলেমিশে একাকার হতো আরমান আলিফের শিশুকণ্ঠে। এতক্ষণ যাঁরা আরমান আলিফকে চিনতে পারেননি, তাঁদের জন্য আর একটু খোলাসা করা যাক। কিছুদিন আগে ‘অপরাধী’ গান গেয়ে যে তরুণ সবার দৃষ্টি কেড়েছেন। সবাই যাঁর গান গেয়ে জানিয়ে দিয়েছেন ভালো লাগা। সেই আরমান আলিফের কথাই বলা হচ্ছে।

রাস্তায় বের হলে যাঁকে আরমান বা আলিফ ডাকার পরিবর্তে ‘অপরাধী’ বলে ডাকেন অনেকে। এই একটি গানেই সব রেকর্ড ভেঙে শ্রোতাদের মাত করে দিয়েছেন তিনি।

ছোট্ট একটা হিসাব এ সময়ে জরুরি। ৭ আগস্ট দুপুরে যখন কথা হলো এই শিল্পীর সঙ্গে, তখন পর্যন্ত ১২ কোটি ৯৬ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭ বার ‘অপরাধী’ গান ইউটিউবে দেখা হয়েছে।

‘অপরাধী’ গানটি সৃষ্টির শুরুটা শুনুন শিল্পীর মুখেই ‘২০১৭ সালের শেষের দিকে শীতের এক সকালে হাঁটতে হাঁটতে গানটির কথা ও সুর মাথায় চলে আসে। গিটারিস্ট আলভিকে নিয়ে ১৪-১৫ মিনিটেই গানের কথা আর সুর মাথা থেকে কণ্ঠে তুলে ফেলি।’

‘আমার বিশ্বাস ছিল, এ গানটি মানুষ শুনবে।’ নিজের আত্মবিশ্বাসের ওপর আস্থা রেখেই অপরাধী গানটি প্রথমে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করেন আরমান।

নিজের পরিচিতজনের গণ্ডি পেরিয়ে গানটির খবর পৌঁছায় অনেকের কাছে। এরপর শুরু হয় ইগল মিউজিকের ব্যানারে অপরাধী গানের ভিডিও নির্মাণের কাজ। এক দিনে মিউজিক ভিডিও শুটিং করা হয়। ইগল মিউজিক থেকে ‘অপরাধী’ গানের ভিডিও প্রকাশ করা হয় প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে। বাকিটা ইতিহাস।

প্রথম দিন ১০ লাখ।

দ্বিতীয় দিন ২৫ লাখ।

এরপর প্রথম কয়েক দিন ২০ লাখ করে ভিউ (দেখা) হতে থাকে গানটি। ‘ভাইরাল’ হতে আর কী বাকি থাকে! শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের কণ্ঠে শোনা গেছে এই গান।

‘অপরাধী’ সাফল্য এনে দিলেও আরমান আলিফের প্রথম গান ‘নিকোটিন’। সেটা গেয়েছিলেন নিজের ব্যান্ড থেকে। বলে রাখা ভালো, ‘চন্দ্রবিন্দু বিডি’ নামের ছয় সদস্যের একটা ব্যান্ড আছে তাঁদের।

গানের কথা থাক। আমরা ব্যক্তি আরমানের গল্প শুনতে চাই। জানালেন, ঢাকা কমার্স কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা নেত্রকোনায়। মা লিলি আক্তার ও ব্যবসায়ী বাবা মো. আলীর তিন সন্তানের দ্বিতীয় আরমান আলিফ। পরিবারের কেউ গান-বাজনার সঙ্গে জড়িত নয়। গানের বিষয়ে পরিবারের সবার সহযোগিতা পেলেও বাবা প্রথম প্রথম ছেলেকে নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। বললেন, ‘সারা দিন গান নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। বাবা ভাবতেন আমি গান গেয়ে পড়াশোনা নষ্ট করছি। +

‘‘অপরাধী’’ গানের সাফল্যে বাবার সে দুশ্চিন্তা দূর করতে পেরেছি বলে মনে হয়।’

গানের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই আরমানের। ‘শ্রোতারা অপরাধী গানটি পছন্দ করলেও আমাকে তেমনভাবে চেনেন না। এটা আমার জন্য সুবিধাই। স্বাধীন চলাফেরা করা যায়।’ জানালেন আরিফ। বললেন, ‘মঞ্চে শো করার পর তাঁদের কাছ থেকে যেভালোবাসা পাই, সেটাই আমাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি জোগায়।’

আগামী দিনগুলোতে গানেই থাকবেন আরমান আলিফ। তবে চন্দ্রবিন্দু বিডি ব্যান্ড থেকে অ্যালবাম করার ইচ্ছে আছে তাঁর। এবারের ঈদুল আজহা উপলক্ষে সিএমভি (সেন্ট্রাল মিউজিক অ্যান্ড ভিডিও) থেকে প্রকাশ পাবে ‘বেইমান’ শিরোনামে মিউজিক ভিডিও। আপাতত সেটা নিয়েই ব্যস্ত আছেন। হাসতে হাসতে আরমান বললেন, ‘আগে লোকজন আমাকে “অপরাধী” ডাকতেন, এখন নিশ্চয় ‘‘বেইমান’’ ডাকবেন। তাঁদের এই ভালোবাসার ডাকটাই আমার চাওয়া।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *