বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠানে স্বল্পমেয়াদে দেশের বাইরে একটি কোর্সের জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নার্সিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছিল। সেই আবেদেন ব্যাপক সাড়াও মেলে। কিন্তু ১৭ ব্যক্তির আবেদনে দেখা যায় স্বাস্থ্য, রেল, খাদ্য, বাণিজ্য মন্ত্রীর সুপারিশপূর্বক স্বাক্ষর রয়েছে।
পরে বিষয়টি তদন্তে নামে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল।
সিআইডির দাবি, তদন্ত করতে নেমে দেখা যায়, ওই ১৭টি আবেদনে যে স্বাক্ষর করা হয়েছে, সেগুলো জাল।
১৩ আগস্ট, দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘চক্রটি ১৭ জন স্টাফ নার্সের আবেদনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলে হোসেন বাদশাহসহ কয়েক জন সচিবের সুপারিশপূর্বক জাল স্বাক্ষর করেছে। পরে এ ঘটনায় মামলা হলে তদন্ত শুরু করে সিআইডি।
চক্রটি দীর্ঘদিন ধরেই এসব অবৈধ কাজ করে আসছিল কিন্তু তারা ছিল ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিল। এই চক্রের সদস্যরা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সচিবের স্বাক্ষর জাল করতো। তারা তাদের নাম করে ভুয়া ফোন কল করতে। পাশাপাশাশি তারা এসএমএসের মাধ্যমে তদবিরের ঘটনাও ঘটিয়েছে।’
মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় তিনজন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কুমিল্লা ও চাঁদপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন কুমিল্লার দাউদকান্দির তালতলী গ্রামের মৃত হাসেম মিয়ার ছেলে অফিস সহকারী মো. আব্দুল কুদ্দুস মিয়া (৪৫), চাঁদুপুর জেলার শাহারাস্তি উপজেলার রায়শ্রী গ্রামের মৃত আবুল খায়েরেরর ছেলে সিনিয়র স্টাফ নার্স আবু ইউসুফ (৩৬), বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলার মৃত আব্দুল রশিদ তালুকদারেরর ছেলে সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. রুহুল বাসার তালুকদার (৪৫)।
মোল্লা নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘মূলত চক্রটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের অধীনে সেবা অধিদপ্তরের আওতায় স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত নার্সিং এডুকেশন অ্যান্ড সার্ভিসেস প্রোগ্রামের অপারেশনাল প্লান এর সংস্থার অধীনে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নার্সিং কর্মকর্তাদের একটি বিদেশে স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ করার কথা ছিল। এ জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নার্সিং কর্মকর্তাদের নিকট থেকে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছিল। সেই বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করে তারা এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় ২০১৭ সালে রাজধানীর শেরে বাংলা থানায় একটি মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অর্গানাইজড ক্রাইম (সিরিয়াস ক্রাইম এন্ড হোমিসাইডালের স্কোয়াড) বিশেষ পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সিরিয়াস ক্রাইম স্কোয়াড) রাজিব ফারহান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।