নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সংহতি সমাবেশ হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ গতকাল শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই সংহতি সমাবেশের আয়োজন করে। এতে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসসহ আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র আর না-আর না’ ‘আমার ভাই আটক কেন সরকারের কাছে জবাব চাই’ ‘১, ২, ৩, ৪ নৌমন্ত্রী গদি ছাড়’ এরকম প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
সংহতি সমাবেশে শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে আটক ২২ শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, একটি যৌক্তিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।এটা কারো ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়। সব মানুষের সড়কে নিরাপদে চলার অধিকার রয়েছে। কিন্তু একটি যৌক্তিক আন্দোলনকে সরকার পুলিশ ও হেলমেট বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে দমিয়ে দিয়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে সব শিক্ষার্থীর মধ্যে। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিমতি স্বর্ণা বলেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে সেতু নির্মাণ, রাস্তাঘাট মেরামত করা হয়। কিন্তু তারপরেও সড়কের এত বেহাল দশা।
সড়কে মানুষ চলাচলের নিরাপত্তা নাই। প্রতিদিনই কত মানুষ মারা যাচ্ছে। কোটা আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিসহ অনেক যৌক্তিক দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা বারবার রাস্তায় নামে। আমাদের সেই দাবিকে সবসময়ই দমিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু কেন? আমরা কি আমাদের দাবিগুলো জানাতে পারব না। আমরা যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি সেটা স্বতঃস্ফূর্ত একটি আন্দোলন। শিক্ষার্থী ছাড়াও সব শ্রেণির মানুষের এখানে একাত্মতা রয়েছে। স্বর্ণা বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের দাবি জানানোটা স্বাভাবিক। কিন্তু আপনারা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার এসবের আভিধানিক অর্থই বুঝেন না।
আজকে অবস্থা এমন হয়েছে কেউ তার নিজের ইমোশনটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশও করতে পারবে না। তার রিমান্ড হবে জেল হবে। শিক্ষার্থীরা কোনো অন্যায় করেনি। অবিলম্বে ২২ শিক্ষার্থীকে মুক্তি দিন। ইউল্যাবের শিক্ষার্থী মো. সাদাত রুহুল বলেন, একটি যৌক্তিক দাবিতে আমরা আন্দোলন করেছি। কিন্তু আমাদের ওপর হামলা করে আন্দোলন দমানো হয়েছে। ২২ শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে রিমান্ড শেষে এখন কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারা কি এমন অপরাধ করেছে। শিক্ষার্থীদের ক্ষমা চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা কেন ক্ষমা চাইব।
আমরা যদি ক্ষমা চাই তবে শিক্ষামন্ত্রী কি ক্ষমা চাইবেন না? স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী মশিউর সজিব বলেন, এই আন্দোলনটা সকল মানুষের জন্য ছিল। বেপরোয়া চালকদের জন্য যেভাবে সড়কে প্রাণ যাচ্ছে সেটা রোধ করতেই শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছিল। আপনারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছেন। সাধারণ নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের আটক করে রিমান্ডে নিয়েছেন। এভাবে একটি যৌক্তিক আন্দোলন দমিয়ে রাখা যাবে না। আমরা নিপীড়ত শিক্ষার্থীরা আমাদের দাবি আদায়ে রাস্তায় থাকব। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে ২২ শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে মুক্তি দিন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি সমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করে বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জান্নাত পপি বলেন, শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। তারা দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে সুশৃঙ্খলভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে হয়। তারা বাংলাদেশের মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে শুধু সড়কেই বিশৃঙ্খলা হচ্ছে না রাষ্ট্রেরও মেরামত দরকার। তিনি বলেন, একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে তাদের বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করা হয়েছে। রক্তাক্ত করা হয়েছে অনেক শিক্ষার্থীকে। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করে তারা শিক্ষার্থীদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। তাদেরতো কোনো অপরাধ ছিল না। শুধু আক্রমণকারীদের প্রতিহত করেছে। যারা আক্রমণ করলো সেই হেলমেট বাহিনীদের গ্রেপ্তার না করে শিক্ষার্থীদের আটক করে রাখলেন।
জামিন মেলেনি ৮ শিক্ষার্থীর: এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে পুলিশের কাজে বাধা ও ভাংচুরের অভিযোগে গ্রেপ্তার ৮ শিক্ষার্থীর জামিন হয়নি। রাজধানীর ভাটারা থানায় করা মামলায় সাবের আহম্মেদ, শিহাব শাহরিয়ার, সাখাওয়াত হোসেন ও বাড্ডা থানায় করা মামলায় রাশেদুল ইসলাম, মুসফিকুর রহমান, হাসান, জাহেদুল হক ও নুর মোহাম্মদ জামিন আবেদন করেছিলেন। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম ওই শিক্ষার্থীদের জামিন আবেদন নাকচ করে দেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী রাকিবুল হাসান জামিনের শুনানিতে বলেন, এসব ছাত্র কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন। যে ঘটনায় মামলা তার সঙ্গেও তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আবু হানিফ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক শিক্ষার্থীদের জামিন আবেদন নাকচ করেন। এর আগে রোববার বাড্ডা থানার মামলায় আসামি তরিকুল ইসলাম, রেদোয়ান আহম্মেদ এবং ভাটারা থানার মামলায় আসামি মাসহাদ মুর্তজা আহাদ ও আজিজুল করিম অন্তরের জামিনের আবেদন নাকচ করেছিলেন আদালত। এই ১২ জনসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ২২ ছাত্রকে গ্রেপ্তারের পর গত ৯ই আগস্ট আদালতে হাজির করেছিল পুলিশ। সেদিন তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।