ঈদ যাত্রায় আজ বাস ছাড়ছে, কাল ছাড়বে ট্রেন

স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে কিছুদিনের জন্য পরিবারসহ রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন মানুষ। যারা বাসের আগাম টিকিট কিনেছিলেন তারা আজ থেকে ঈদ যাত্রা করছেন। যারা ট্রেনের আগাম টিকিট কিনেছিলেন আগামীকাল শুক্রবার থেকে তারা ঢাকা ছাড়তে শুরু করবেন।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঘরমুখী মানুষ ব্যাগ গুছিয়ে হাজির হয়েছেন টার্মিনালে। টার্মিনাল জুড়ে যেন উৎসবের আমেজ। যাত্রাপথের কিছু ঝক্কি-ঝামেলা, ভোগান্তি থাকলেও স্বজনদের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে পারার আনন্দটাই তাদের কাছে আসল। ঈদের আগের কষ্ট আর ভোগান্তি থেকে রেহাই দিতে পরিবারের নারী ও শিশুদের আগেভাগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন অনেকেই।

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর গাবতলী, সায়দাবাদ, আব্দুলাহপুর, মহাখালী বাস টার্মিনালে দেখা যায়, ঘরে ফেরা মানুষগুলোর চোখে-মুখে বাড়ি ফেরার আনন্দ।

হানিফ পরিবহনে পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজশাহী যাচ্ছেন শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঈদের সময় বাড়ি ফেরা খুবই ভোগান্তির। যে কারণে একটু আগেই যাওয়ার চেষ্টা করছি। এছাড়া বাড়ি গিয়ে কুরবানির গরু কিনতে হবে। ঈদে বাড়ি ফিরতে অনেক বিড়ম্বনা পোহাতে হলেও নাড়ির টানে বাড়ির পানে ফিরে মানুষ। কারণ ঈদে বাড়ি ফেরার মধ্যে আলাদা ভালো লাগা আছে। বিষয়টা এমন যে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির জন্য এ ঘরে ফেরা।

এক হাতে শিশু সন্তান শিমুলের হাত অন্য হাতে বড় একটা লাগেজ নিয়ে শ্যামলী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী লোকমান হোসেন। তিনি বলেন, ঈদে বাড়ি ফেরা একদিকে যেমন খুবই আনন্দের অন্যদিকে অনেক ভোগান্তির। এ ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে ছুটি ম্যানেজ করে একটু আগেই বাড়ি ফিরছি।

সোমবার পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সে ঈদুল আজহার নিরাপত্তার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছিলেন, মহাসড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা রাস্তায় থাকবেন, তারা নিয়মিত সড়ক পরিদর্শনে যাবেন। ঈদে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাওয়া মানুষদের বাড়ি-ঘরের নিরাপত্তার জন্য মহানগরে পুলিশের টহল স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শ্যামলী পরিবহনের এমডি রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, আজ বৃহস্পতিবার পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ আইজিপির সঙ্গে দেখা করবেন। আশাকরি একটা নির্দেশনা পাওয়া যাবে। ঈদের সময়টাতেই যানবাহনে তল্লাশিতে আমরা ছাড় চাচ্ছি। ঈদ শেষেই আবার তল্লাশি শুরু হোক তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কারণ এ সময়ে তল্লাশি বাড়ালে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়বে।

গেল ঈদুল ফিতরে ঘরে ফিরতে গিয়ে নৌ, রেল ও সড়ক দুর্ঘটনায় মাত্র ১৩ দিনে নিহত হয়েছে ৪০৫ জন। এ ছাড়া নৌ দুর্ঘটনায় এখনও ২৫ জন নিখোঁজ রয়েছে।

এককভাবে সব থেকে বেশি মানুষ নিহত হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়। নিহত মানুষের সংখ্যা ৩৩৯ জন। আর আহত হয়েছে ২ হাজার ৮৫৯ জন। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির ‘ঈদ যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন ২০১৮ তে এ তথ্য ওঠে আসে।

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঈদে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলো, পরিবহন খাতে বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও অব্যবস্থাপনা।

রাস্তার মাঝে চালকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখা, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করা, সিগন্যাল দিয়ে পারাপার করা, সিট বেল্ট পরানো নিশ্চিত করলে দুর্ঘটনা অনেক হ্রাস পাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *