এশিয়ান গেমসের ফুটবলে এর আগেও বেশ কয়েকটি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। ১৯৮২ সালে মালয়েশিয়া, ১৯৮৬ সালে নেপাল, ২০১৪-তে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পায় লাল সুবজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু জাকার্তায় গতকাল বাংলাদেশ যে জয়টা পেলো সেটির সঙ্গে তুলনা হয় না আগেরগুলোর। গতকাল গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে শক্তিশালী কাতারের বিপক্ষে ১-০ গোলে জয় কুড়ায় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দল। এতে প্রথমবারের মতো এশিয়াড ফুটবলের নকআউট পর্বে পৌঁছলো বাংলাদেশ। খেলার একেবারে যোগ করা সময়ে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার গোলে রচিত হয় বাংলাদেশের ফুটবলের নতুন ইতিহাস।এর আগে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে কাতারকে ২-০ গোলে হারানোর রেকর্ড ছিল বাংলাদেশের। এশিয়াডে আগামী ২৪শে আগস্ট ‘এফ’ গ্রুপের রানার্সআপ (ইরান অথবা সৌদি আরব) দলের সঙ্গে শেষ-ষোলো রাউন্ডে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
‘বি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৩-০ গোলে উজবেকিস্তানের বিপক্ষে হেরে আসর শুরু করে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়ায় তারা। যদিও এগিয়ে থেকেও থাইল্যান্ডের বিপক্ষে জেতা হয়নি জামালদের। ১-১ গোলে ড্র হয় ম্যাচটি। এবারো কাতারকে হারিয়েই নতুন রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ। নকআউট পর্বের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৯৬ ধাপ এগিয়ে থাকা কাতারের বিপক্ষে অন্তত ড্র’য়ের আশা ছিল বাংলাদেশের। জার্কাতার প্যাট্রিয়ট চান্দ্রাবাগা স্টেডিয়ামে নিজেদের রক্ষণ সামলে সে টার্গেটে খেলতে থাকে সুফিল-জাফররা। কাতার একাধিক আক্রমণ সফলভাবে সামলে কাউন্টার অ্যাটাকে সুযোগও তৈরি করে বাংলাদেশ। প্রথমার্ধে সুফিল সাদ দুটি সুযোগ নষ্ট করেন। তবে, ম্যাচে বাংলাদেশের ফুটবলারদের মানসিকতা দেখে একবারও মনে হয়নি কাতারের চেয়ে যোজন যোজন দূরে দাঁড়িয়ে লড়াই করছেন সুফিল-সুশান্তরা। উজবেকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ৭টি সেভ করেন গোলরক্ষরক আশরাফুল ইসলাম রানা। তার নৈপুণ্যে সে ম্যাচে বাংলাদেশের হারের ব্যবধান তিন গোলের বেশি হয়নি। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের শেষ দিকে বল ঠিকমতো পাঞ্চ করতে পারলেন না তিনি। ফিরতি বল জালে পাঠিয়ে সমতায় ফেরে থাইল্যান্ড। ওই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই মনে হয় রানা কাল মাঠে নেমেছিলেন। তার লড়াইও ছিল দুর্দান্ত। রক্ষণ যখন দেয়াল হয়ে দাঁড়ায় তখন কি বা করার থাকে প্রতিপক্ষ ফুটবলারদের। ম্যাচের ২১তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে ফ্রি-কিক পায় কাতার। ফ্রি-কিক থেকে আলসাদির নেয়া দুর্দান্ত শট রুখে দেন রানা। ম্যাচের ২৭ মিনিটে আবারো সুযোগ পায় কাতার। তবে, লক্ষ্যহীন শটে সেই সুযোগ নষ্ট করেন মেশাল আল শামারি। এরপর আক্রমণ জোরালো হয় কাতারের। আর তাতেই ম্যাচের ৩৬তম মিনিটে গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিল তারা। তবে, সতীর্থের কাছ থেকে আসা বল পেলেও লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন হাতিম হাসানিন। বিরতির পর লড়াইয়ে ফেরে কোচ জেমি ডে’র শিষ্যরা। ম্যাচের ৬৫ মিনিটে দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন বিপলু আহমেদ। ডি-বক্সে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের কাটিয়ে তার ডান পায়ের জোরালো শট রুখে দেন কাতার গোলরক্ষক। এক মিনিট পর মাহবুবুর রহমানকে উঠিয়ে মাসুক মিয়া জনিকে মাঠে নামান কোচ জেমি ডে। ম্যাচের ৭৪ মিনিটে আরেকটি দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন বিপলু। তবে, ডি-বক্সে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে বল মাঠের বাইরে যায়। এরপর যোগ করা সময়ে দারুণ এক গোল করেন জামাল ভূঁইয়া। আর তাতেই জয় দিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
তিন ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হিসেবে নকআউট পর্বে উঠলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশ-কাতার লড়াইয়ের আগে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ‘বি’ গ্রুপের সেরা হয়ে নকআউটের টিকিট কাটে প্রথম দুই ম্যাচ জেতা উজবেকিস্তান। গতকাল শেষ ম্যাচে থাইল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারায় উজবেকরা। তিন ম্যাচে থাইল্যান্ডের সংগ্রহ ২ পয়েন্ট।