মানুষের নানান বদ অভ্যাস নিজের অজান্তেই থাকে। অনেকে এটাকে বলেন ম্যানিয়া। এরকম একটি ম্যানিয়া যা থাকলে আপনার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আর তা হলো দাঁত দিয়ে নখ কাটার অভ্যাস। আমাদের চারপাশেই অনেকে এই বদভ্যাসে কাহিল। অনেকের নখ কাটতে কাটতে হাতের আঙুল থেকে নখ উধাও হয়ে যাচ্ছে।এটা সাধারণ থেকে খ্যাতিমান অনেকেরই দেখা গেছে। ঠিক যেমন ভাবে কোনও রুদ্ধশ্বাস ক্রিকেট ম্যাচে টিভির পর্দায় সচীন, সৌরভ, হরভজন বা যুবরাজকে দেখা গিয়েছে একাধিকবার।
দাঁত দিয়ে নখ কাটার এই আপাত নিরীহ অভ্যাসটি যে কি ধরণের মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পাওে তা শুনলে অবাক হবেন। ইংল্যান্ডের সাউথপোর্ট শহরের বাসিন্দা, ২৮ বছর বয়সী লুক হ্যানোম্যানেরও অভ্যাসটি ছিল। আর এই অভ্যাসই তাকে মারাত্মক বিপদে ফেলেছিল। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন লুক।
লুক জানান, দাঁত দিয়ে নখ কাটতে গিয়ে ভুলবশত ত্বকের কিছুটা অংশ কেটে ফেলেন তিনি। বিষয়টিকে তেমন আমল দেননি তিনি। কিন্তু ঘটনার পরের দিন থেকেই একটা জ্বর জ্বর ভাব, কাঁপুনি, দুর্বলতা অনুভব করেন তিনি। কিন্তু এই বিষয়গুলিকেও তেমন গুরুত্ব না দিয়ে নিয়মিত অফিস যাতায়াত করতে থাকেন তিনি। কিন্তু সমস্যা হল ঘটনার দিন তিনেক পর। রাতে নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে গেলেও পরের দিন ঘুম ভাঙল দুপুর দুটো নাগাদ। এত দীর্ঘসময় কখনোই ঘুমাননি লুক। বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতেই চোখ কপালে উঠল তার। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানান, আর একদিনও দেরি করলে তাকে বাঁচানোই যেত না। এরপর হাসপাতালে দিন চারেক চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন লুক।
কিন্তু কী হয়েছিল লুক হ্যানোম্যানের? চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দাঁত দিয়ে নখ কাটার সময় ত্বকের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সেপসিস হয়ে গিয়েছিল তার।
কী এই সেপসিস? চিকিৎসকদের মতে, যে কোনও ছোটখাটো সংক্রমণ (ইনফেকশন) থেকেই সেপসিস হতে পারে। সাধারণত আমাদের শরীরে কোনো ইনফেকশন হলে তা এক জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে এবং সারা শরীরে তা ছড়িয়ে পড়া থেকে তাকে আটকায় আমাদেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কিন্তু সংক্রমণের মাত্রা তীব্র হলে তা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে সারা শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। এটিই হল সেপসিস। এটি মোটেই উপেক্ষা করার মতো বিষয় নয়। সেপসিস এবং সেপটিক শকের কারণে প্রতি বছর সারা বিশ্বে অন্তত ৬০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়।
সেপসিসের মূল উপসর্গ
প্রচণ্ড দুর্বলভাব, কথা জড়িয়ে আসা, শ্বাস কষ্ট হওয়া, প্রবল কাঁপুনি বা পেশিতে ব্যথা, সারাদিনে একবারও মুত্রত্যাগ না হওয়া, ত্বক বিবর্ণ হয়ে যাওয়া।