মালয়েশিয়ায় ব্যাপক ধরপাকড়, বাংলাদেশী সহ ৫০০ অভিবাসী আটক

অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে মালয়েশিয়া। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সেখানে পরিচালিত হচ্ছে অভিযান। এ সময়ে কমপক্ষে ৫০০ অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তার মধ্যে বেশ কয়েক কিছু বাংলাদেশী রয়েছেন। কুয়ালালামপুরে অধিকার বিষয়ক সংস্থা নর্থ সাউথ ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক আদ্রিয়ান পেরেইরা বলেছেন, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে বহু সংখ্যক বাংলাদেশী থাকতে পারেন। গত বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ায় সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হয়।এরপরই শুরু হয়েছে ধরপাকড়। তবে সর্বশেষ এই ধরপাকড়ে কতজন বাংলাদেশীকে আটক করা হয়েছে তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় নি। এ খবর দিয়েছে মালয়েশিয়ার অনলাইন দ্য স্টার। এতে বলা হয়, ৩+১ সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এই অভিযান শুরু করেছে অভিবাসন বিভাগ। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে অপারেশন মেগা ৩.০। এর অধীনে কমপক্ষে ৪ হাজার বিদেশীর কাগজপত্র পরীক্ষা করা হয়েছে। অভিবাসন বিষয়ক মহাপরিচাক মুস্তাফার আলী বলেছেন, সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে ঘেরাও করে এ অভিযান পরিচালনা করছেন অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তারা। আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে, সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না।
২০১৪ থেকে গত ২৮ শে আগস্ট পর্যন্ত ৮ লাখেরও বেশি অবৈধ অভিবাসী  সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়েছেন এবং তারা তাদের নিজেদের দেশে ফিরে গেছেন। মুস্তাফার আলী বলেছেন, একটি গ্লোভ কারখানায় কর্মরত দেড় হাজারের বেশি বিদেশী শ্রমিকের কাগজপত্র যাচাই করে দেখা হয়েছে। তিনি বলেন, যখন এই অভিযান নির্বিঘেœ চলছিল তখন কয়েকজন বিদেশী শ্রমিক বিশৃংখলা সৃষ্টি করেন। এ সময় অভিবাসন বিভাগের একজন নারী কর্মকর্তা আহত হন। নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে নিয়ে হলেও অভিবাসন বিভাগের কর্মীরা দিনরাত আইন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। এ বছর ১লা জানুয়ারি থেকে ৩০ শে আগস্টের মধ্যে অভিবাসন বিভাগ ৯৭১৫টি অপারেশন চালিয়েছে। ওই সময়ে আটক করা হয়েছে ২৯ হাজারেরও বেশি অবৈধ শ্রমিককে এবং ৮৮০ জন চাকরিদাতাকে।
অন্যদিকে বিদেশী শ্রমিকরা যথাযথ কাগজপত্র জমা দিতে পারেনি বলে তাদের কাজের অনুমতি বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানান মুস্তাফার আলী। কাজে নিয়োগ প্রক্রিয়া অনলাইনে নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। তার ভাষায় ‘যদি চাকরিদাতারা তাদের শ্রমিকদের দ্রুততার সঙ্গে নিতে চান তাহলে তাদের সব ডকুমেন্ট যথাযথভাবে পূরণ করে তা জমা দেয়া হয়েছে এটা তাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে’। এর আগে দ্য স্টার এক রিপোর্টে বৃহস্পতিবার বলে যে, সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় আকারে অবৈধ শ্রমিক বিরোধী অভিযান শুরু হবে। সাধারণ ক্ষমার অধীনে একজন অবৈধ শ্রমিক ৩০০ রিঙিত জরিমানা ও বিশেষ পাসের জন্য ১০০ রিঙিত দিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরতে পারতেন। সেই মেয়াদ শেষ হয় গত বৃহস্পতিবার।
ওদিকে মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বারনামা এক রিপোর্টে বলেছে, সেপাংয়ে বান্দার বারু সালাক টিঙ্গি এলাকায় যে গ্লোভ কারখানায় বিশৃংখলা হয়েছে সেখানে এক বাংলাদেশী ও মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের এক কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। ওই অভিযানের সময় আহত ওই বাংলাদেশী পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি পড়ে গিয়ে আহত হন। একজন অবৈধ নারী শ্রমিককে ধরতে গিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তা নূর এরা এলিনা জাহারুদ্দিন (২৪)। উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শ্রমিকরা কাজ করেন। তার মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশী, মিয়ানমার, পাকিস্তানি, কম্বোডিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, ভারত ও নেপালের শ্রমিকরা। এর বেশির ভাগেরই নেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। অনলাইন দ্য ডেইলি স্টার সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশনকে উদ্ধৃত করে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় কর্মরত প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশী। তার মধ্যে অর্ধেকরই নেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।
ফলে অভিবাসন ও অধিকার বিষয়ক কর্মীরা বলছেন, এ কারণে যেসব বাংলাদেশীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। শনিবারও তাদের বেশির ভাগই ছিলেন বাসার ভিতরে। তারা বের হন নি। অনেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। ওদিকে অধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো এই ধরপাকড় বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *